রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সুজয় যশ




কবি সুজয় যশ-এর দুটি কবিতা 


স্বত্ব বিলোপ


রেশমগুটির মতো নিজেকে জড়িয়ে আছে 

আমার সহজাত লালা ।

তুমি চাইলেই বেড়িয়ে আসতে পারি না ।

কেউ কেউ হাত নাড়ে ।

আমি গুটিয়ে রাখি নিজেকে 

খুব পরিচিত লার্ভার মতো ।

তুমি বললেই পারি না ভাঙতে

আমার পাঁজরে গড়া নিশ্ছিদ্র বাসর ।

কেউ কেউ প্রহর গোনে 

কখন পাখনা মেলে ভুল করে

কেটে দেবো রেশমগুটি ।


প্রজাপতি হওয়া বড় অদ্ভুত !!

নিজেই বদলে যাই নিজের চোখে ।



 










চেনা অচেনা

বহুকাল এ রাস্তায় পা পড়েনি ।

কালো ঘোড়া পাহাড় ডিঙিয়ে 

আর হাঁটতে পারে নি ।

আজ এ গাঁয়ে কার যেন বিয়ে ।

নিউমোনিয়া হয়ে , গেলো বার

ভজহরি শশ্মানে আগুন পেল ।

আজ তো সোমবার । হাটবার ।

কে যেন বাজার দিয়ে হেঁটে গেলো ।


বহুকাল এ উঠোনে পা রাখেনি কেউ ।

ধুলো জমে । পাতা পড়ে শুকিয়ে ।

বলি বাড়িতে আছেন কেউ ?

পুরনো স্মৃতির ঘরে আছেন কি কেউ লুকিয়ে ?

ঐ তো পুরনো সেই টিনের চালে

পড়ে আছে চাকা ভাঙা খেলনা ।

দড়ি ছেঁড়া দোলনাটা বকুলের ডালে

দেখি ডাঁট ভেঙে পড়ে আছে রুটির বেলনা ।


বহুকাল এই আমাকে দেখেনি তো কেউ ।

উচ্চতা বেড়ে গেছে অনেকটা ।

সকলের চোখে মুখে প্রশ্নের ঢেউ ।

শুধু তার মাঝে চেনা মুখ কয়েকটা ।

লালু কি চিনতে পারল ?

সবাই মুখ চাওয়া চায়ি করে ফিরে গেলো ।

অবশেষে কে হারল ?

বহুকাল পর কে যেন আবার কুয়াশায় ডুবে গেলো ।


বহুকাল আমি আর খুঁজি নি 

ধুলোর পর্দা খুব মোটা ।

ভাঙা খেলনার কথা আর ভাবি নি 

নিজেকে খামচে আজ ওঠা ।


বহুকাল বহুকাল নিজেকে খুঁজি নি 

আলগোছে সাবধানে কোথাও কাঁদি নি ।


****************************************************************



সুজয় যশ 

জন্ম  ২৬ ডিসেম্বর ,১৯৮২ 
বর্ধমানের  হৈড়গ্রামে । একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ।
ছোটবেলায় কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা পড়ে প্রাণীত হন । কৃত্তিবাস , গির্বান , তারারা , লাবণ্য, নীলদর্পণ, মধ্যবর্তী ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিন ছাড়াও স্বরবর্ণ , ছায়াবৃত্ত  অনলাইন ওয়েবজিনে লিখেছেন ।মাঝে কর্ম জীবনের ব্যস্ততার জন্য সাহিত্যচর্চা বন্ধ ছিলো । আবার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা নতুন করে ফিরে পান স্ত্রী এবংপুত্রের কাছে ।
'সাহিত্যের কাছে আজীবন ঋণ থেকে যাবে এত সুন্দর করে জীবনকে চিনতে শেখার সুযোগ দেওয়ার  জন্য '---জানাচ্ছেন সুজয় ।


৫টি মন্তব্য:

  1. অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কবিদের একজন কবি সুজয় যশ। ওঁর কবিতায় আমি গভীর নিমগ্ন এক পরাবাস্তব খুঁজে পাই। এ কবির একান্ত নিজস্ব অভিজ্ঞা। শুভকামনা।

    উত্তরমুছুন
  2. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  3. কবি সুজয় যশের কবিতার দুটি বিশেষ দিক হল সরলতা আর শব্দ নিয়ে খেলার অপার দক্ষতা।ওনার কবিতা পড়তে কোন অভিধানের আশ্রয় নিতে হয় না।একমাত্র আশ্রয় চাই মনের।সেই সংযোগটুকু হলেই অপার্থিব আনন্দ পাওয়া যায়

    উত্তরমুছুন