ফেরত
দেবাশিস সাহা
বাজার করার জন্য মা একটা পাঁচশো টাকার নোট দিয়েছিল। বলেছিল, কিলো খানেক মাংস, হাফ কেজি পেঁয়াজ, অল্প করে একটু আদা আর রসুন আনতে। তা তো এনেইছে। বাড়তি সাতটা কমলালেবু পঞ্চাশ টাকা দিয়ে। বাবা প্রায়ই বলে, খাওয়া-দাওয়ার পর একটু ফল খাওয়া ভালো। কথাটা মাথায় ঘোরে বাজার করার সময়। সব সময় পয়সা থাকে না। থাকলেও বাড়তি কিছু কেনার সাহস পায় না। মা খিচ খিচ করে। আজ কী মনে হল, সাহস করে কিনেই ফেলল। এখন বাড়ি ফিরে হিসেব করে দেখছে, এত কিছু কিনেও চারশো তিরিশ টাকা রয়ে গেছে। কী ব্যাপার! ম্যাজিক না কী! এক কিলো মুরগির মাংসই তো একশো সত্তর টাকা,পাঁচশো পেঁয়াজ কুড়ি টাকা, আদা-রসুন মিলিয়ে তিরিশ টাকা আর লেবু পঞ্চাশ টাকা। সব মিলিয়ে দুশো সত্তর টাকা। তাহলে? মনে করার চেষ্টা করে ঋজু। মাংসের দোকানে যা ভিড় ছিল। দোকানদার তাড়াহুড়ো করছিল খুব...বলো ভাই, কতটা?
এক কেজি, দুটো লেগ দেবে কিন্তু।
যে ছেলেটা মাংস কাটছিল নিমেষে দিয়ে দিল ওজন করে।
দোকানদার হাত বাড়িয়ে আছে। ঋজু পকেট থেকে পাঁচশো টাকার নোটটা বার করে দিল।
‘কী রে ঋজু, আজ হেব্বি সাটাবি, নারে?' ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, ওর বন্ধু সমীর, দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
ব্যালেন্সটা কোনও রকমে পকেটে গুঁজে, ঋজু বলতে থাকে, ‘নারে ব্যাটা, আজ দিদি-জামাইবাবু আসবে, তাই মা বলল..'
‘সে আসুক, আমি কিন্তু দুপুরে যাচ্ছি।'
‘আসিস, কী আছে, না হয় ভাগ করেই খাব।'
'ভাগাভাগী চলবে না, আমি একাই গিলব' বলতে বলতে একটা বিটকেল হাসি দিয়ে শাঁ করে সাইকেল নিয়ে ছুট লাগায় ছোটু।
যাঃ, ব্যালেন্সটা গোনাই হলো না! যেই পকেটে হাত ঢুকিয়েছে, অমনি এক ফেরিওয়ালা হাঁক পাড়তে শুরু করল --‘ বাঁশদ্রোণীতে দার্জিলিং... লেবু সাতটা পঞ্চাশ.. সাতটা পঞ্চাশ..’
বেশ টাটকা মনে হচ্ছে লেবুগুলো, অমনি বাবার কথাটা মনে পড়ে গেল। মা বলেনি, তবু কিনে ফেলল।
ফলওয়ালাকে একটা দুশো টাকার নোট দিল। ও দেড়শ টাকা ফেরত দিল, পষ্ট মনে আছে। এই টাকা থেকেই তো পেঁয়াজ, আদা-রসুন কিনল।
তাহলে মাংসওলাই ভুল করে দুটো দুশো টাকার কড় কড়ে নোট দিয়েছিল, এমনভাবে সেঁটেছিল, মাংস ওয়ালা কি ঋজু ---কেউই বুঝতে পারেনি।
‘ঋজু, কোথায় গেলি রে, তাড়াতাড়ি চান করে নে বাবা, খেতে দেব, জলি-অমরদার হয়ে গেছে।’ রান্নাঘর থেকে মা হাঁক পাড়ে।
‘এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড, মা দাঁড়াও, একটু আসছি।’
‘কোত্থেকে?’
‘টাকাটা ফেরত দিয়ে আসি।’
‘কার টাকা? কিসের টাকা?’ ঘাড় ঘোরাতেই মা দেখেন ছেলে সাইকেল নিয়ে উধাও।
*********************************************************************


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন