শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

মনোজ বাগ




মনোজ বাগ * দু’টি কবিতা 







গন্তব্য 

হাতড়ে হাতড়ে চলেছি ।

যেন অন্ধ ,

যেন আশপাশটা ছেয়ে আছে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ।


বুকের মধ্যে প্রাণ ধ্যান মগ্ন ঋষি মতো যপে যাচ্ছেন 

নাম - লাব্ ডুব্ লাব্ ডুব্ ...

তার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মনে -  

দেহের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ।


অন্ধকারে তো অন্ধ হয়েই আছি ,

আলোতেও অন্ধ হয়ে আছি  ,

যেন জন্মান্ধ কেউ - পা টিপে টিপে চলেছি ।


মাঝে মাঝে মনে হয় -

সত্যি সত্যিই চলছি নাকি স্থির হয়ে আছি 

কোন ওয়াকারের হাতলে ভর করে !

একটি একটি পদক্ষেপ ফেলে হাঁটছি -

নাকি হাঁটার ভান করেই পৌঁছে যেতে চাইছি কোন গন্তব্যে !

কোথায় পৌঁছতে চাইছি -


এক ঠাঁয় দাঁড়িয়েই আছি ।

সাজসজ্জার এত যে বহর - শেষ পর্যন্ত তবুও কোথায় চলেছি !











যাচ্ঞা

দুঃখ মোচন হলে সুখের আস্বাদন করি ।


সুখ মানে অনেকটা স্বস্তি , প্রশান্তি ।

সুখ মানে সেই প্রাচুর্য যাতে আর কোন অভাব নেই । 


অনেকটা শান্তি , স্বস্তি , প্রাচুর্যে দ্রবীভূত থাকতে থাকতেও যখন  

এই সব শান্তি স্বস্তি প্রাচুর্যে অরুচি লাগে 

আবারও দুঃখই যাচনা করি ।


কিন্ত যতটা দুঃখ,  যতটা দহন আমার চাই ,

ততটা পরিমান দুঃখ , দহন - কার আছে - 

কে আমাকে দেবে ?

এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই 

দহনের শ্রেষ্ঠ দেবতা অগ্নির কাছে যাই ।

অগ্নিকে সব বলি - 


অগ্নি ভিতরে বাহিরে জ্বলা - সদা জ্বলতে থাকা আদিদেব  ।

যিনি নিজে সদাসর্বদাই তো জ্বলছেনই - 

ছলে বলে কৌশলে যিনি অন্যকেও জুগিয়ে চলেছেন 

জ্বলার ইন্ধন । 

অথচ তিনি চাইলেন আর এক  মুহূর্তেই জ্বলে 

পুড়ে খাক হয়ে গেল যে কেউ - 

এমনটা সচরাচর হয় না ।

তাই অনেকটা সাধ্যসাধনার প্রসঙ্গ থাকেই । 


এই অগ্নির কাছেই দুঃখ  যাচনা করলে , 

অগ্নিদেব আমাকে সেই সব ব্যক্তি ও বস্তুদের দেখান ,

আদতে যারা নিজেরাই দাহ্যবস্ত , দহনোন্মুখ । 

ওটুকু না হলে আর অন্য কোন কিছুতেই  তেমন কিছু হয়ও না ।


পূর্ণাহূতিরও বহু পূর্বেই যে পর্বটির সাধন মর্মে মর্মে 

ঘটে যায় তার নাম প্রপত্তি - 

অগ্নিদেব বললেন ।

বললেন - প্রপত্তি মানে পূর্ণ আত্মসমর্পণ ।


চার দিকটা সবুজে সবুজ ।

কোথাও জলে জল ।

ধূসরতা দেখি যত্রতত্র আর নীল ।

রাশি রাশি কচুরিপানাও ভেসে থাকতে দেখি অগাধ সমুদ্রে ।


অগ্নি স্নান করে দেখি নিজেকে ।

জ্বলতে থাকা অজস্র শিখা দেখি দশদিক জুড়ে ।













*********************************************************************************************



মনোজ বাগ

পেশায় ব্যবসাজীবী । কবিতা বেঁচে থাকার রসদ ; অনিবার্য এক ইন্ধনও । প্রিয় কবিতার গ্রন্থ : গীতা , ঈশোপনিষদ , গীতবিতান , আমিই মাটি , আমিই আকাশ (সুজিত সরকার) । কবিতা প্রিয় বিষয় হলেও সাহিত্যের প্রতিটি শাখাই টানে । সঙ্গীত ও চিত্রকলার প্রতিও প্রবল আকর্ষণ আছে । ভালো লাগে ভাবতে : আপাত যা কিছু -- এই সবই এক পরম সত্যেরই প্রকাশ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন