মনোজ বাগ * দু’টি কবিতা
গন্তব্য
হাতড়ে হাতড়ে চলেছি ।
যেন অন্ধ ,
যেন আশপাশটা ছেয়ে আছে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ।
বুকের মধ্যে প্রাণ ধ্যান মগ্ন ঋষি মতো যপে যাচ্ছেন
নাম - লাব্ ডুব্ লাব্ ডুব্ ...
তার ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মনে -
দেহের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ।
অন্ধকারে তো অন্ধ হয়েই আছি ,
আলোতেও অন্ধ হয়ে আছি ,
যেন জন্মান্ধ কেউ - পা টিপে টিপে চলেছি ।
মাঝে মাঝে মনে হয় -
সত্যি সত্যিই চলছি নাকি স্থির হয়ে আছি
কোন ওয়াকারের হাতলে ভর করে !
একটি একটি পদক্ষেপ ফেলে হাঁটছি -
নাকি হাঁটার ভান করেই পৌঁছে যেতে চাইছি কোন গন্তব্যে !
কোথায় পৌঁছতে চাইছি -
এক ঠাঁয় দাঁড়িয়েই আছি ।
সাজসজ্জার এত যে বহর - শেষ পর্যন্ত তবুও কোথায় চলেছি !
যাচ্ঞা
দুঃখ মোচন হলে সুখের আস্বাদন করি ।
সুখ মানে অনেকটা স্বস্তি , প্রশান্তি ।
সুখ মানে সেই প্রাচুর্য যাতে আর কোন অভাব নেই ।
অনেকটা শান্তি , স্বস্তি , প্রাচুর্যে দ্রবীভূত থাকতে থাকতেও যখন
এই সব শান্তি স্বস্তি প্রাচুর্যে অরুচি লাগে
আবারও দুঃখই যাচনা করি ।
কিন্ত যতটা দুঃখ, যতটা দহন আমার চাই ,
ততটা পরিমান দুঃখ , দহন - কার আছে -
কে আমাকে দেবে ?
এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই
দহনের শ্রেষ্ঠ দেবতা অগ্নির কাছে যাই ।
অগ্নিকে সব বলি -
অগ্নি ভিতরে বাহিরে জ্বলা - সদা জ্বলতে থাকা আদিদেব ।
যিনি নিজে সদাসর্বদাই তো জ্বলছেনই -
ছলে বলে কৌশলে যিনি অন্যকেও জুগিয়ে চলেছেন
জ্বলার ইন্ধন ।
অথচ তিনি চাইলেন আর এক মুহূর্তেই জ্বলে
পুড়ে খাক হয়ে গেল যে কেউ -
এমনটা সচরাচর হয় না ।
তাই অনেকটা সাধ্যসাধনার প্রসঙ্গ থাকেই ।
এই অগ্নির কাছেই দুঃখ যাচনা করলে ,
অগ্নিদেব আমাকে সেই সব ব্যক্তি ও বস্তুদের দেখান ,
আদতে যারা নিজেরাই দাহ্যবস্ত , দহনোন্মুখ ।
ওটুকু না হলে আর অন্য কোন কিছুতেই তেমন কিছু হয়ও না ।
পূর্ণাহূতিরও বহু পূর্বেই যে পর্বটির সাধন মর্মে মর্মে
ঘটে যায় তার নাম প্রপত্তি -
অগ্নিদেব বললেন ।
বললেন - প্রপত্তি মানে পূর্ণ আত্মসমর্পণ ।
চার দিকটা সবুজে সবুজ ।
কোথাও জলে জল ।
ধূসরতা দেখি যত্রতত্র আর নীল ।
রাশি রাশি কচুরিপানাও ভেসে থাকতে দেখি অগাধ সমুদ্রে ।
অগ্নি স্নান করে দেখি নিজেকে ।
জ্বলতে থাকা অজস্র শিখা দেখি দশদিক জুড়ে ।
*********************************************************************************************
পেশায় ব্যবসাজীবী । কবিতা বেঁচে থাকার রসদ ; অনিবার্য এক ইন্ধনও । প্রিয় কবিতার গ্রন্থ : গীতা , ঈশোপনিষদ , গীতবিতান , আমিই মাটি , আমিই আকাশ (সুজিত সরকার) । কবিতা প্রিয় বিষয় হলেও সাহিত্যের প্রতিটি শাখাই টানে । সঙ্গীত ও চিত্রকলার প্রতিও প্রবল আকর্ষণ আছে । ভালো লাগে ভাবতে : আপাত যা কিছু -- এই সবই এক পরম সত্যেরই প্রকাশ ।





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন