কবিতাগুচ্ছ * অশোক কুমার দত্ত
অনুপমা
নাটকের সমস্ত অসংযত সংলাপ আর মুগ্ধ
ফড়িং ও কাঁচপোকার রোমহর্ষক গল্প পেরিয়ে কুয়াশার
মায়াজলে ভাসিয়ে দিলাম স্বপ্ন প্রদীপ!
বিশাল বটগাছ ঘেরা উদ্যানে খেলা করছে
তখন রিক্ত মাধবীলতা আর থমথমে মেঘ --
মনে আমার চাপা উদ্বেগ!
কোনো কিছু না ভেবেই শীর্ণ নদী স্রোতে
ভাসিয়ে দিলাম নাটকের পাণ্ডুলিপি আর
শ্যামলীবাগানের ছিন্ন স্মৃতি!
আসলে জেতা হারা মানুষের তুচ্ছতার অভ্যাস--
শুধু ভালোবাসবো বলেই পৃথিবীতে এসেছি !
একলা আকাশকে সঙ্গে নিয়ে তবু আমি দেখি--
রুদালি তামাশায় নদীর ঘোলা জলে ভেসে যাচ্ছে
তোমার ছিন্ন নীল আঁচল খানি!
ফাগুন
আজ ও কি তুমি খোঁজো গোধূলির হাসিভরা মায়াবী বিকেল ?
সেই ধুলো পায়ে পথ চলা লাল পলাশের বনে ?
আজও কি তুমি খোঁজো গোলাপী আবিরের দাগ
শুকনো শাল পাতার ছায়ায় প্রবীণ আঙ্গুলে ?
অশ্রু মুখী নবীন কিশোরী কোথায় হারিয়েছে সে ?
কোথায় ? কোথায় অন্য কোনো ফাগুনের বনে !
বসন্ত যেন সেই অন্য কোনো ফাগুনের নারী
দাড়িয়েছে ছদ্মবেশে আমার ই দরজা র কাছে ?
সাহস নেই ! বয়স নেই ! ! শুধু বলার মত নগন্য
অন্ধের স্মৃতিটুকু পড়ে। আছে !
হ্যাঁ অন্ধের নগন্য স্মৃতি টুকু পড়ে আছে !
আত্মজৈবনিক
একমুঠো শিশিরের তাপে অহংকারী জীবন চলে যায় !
আর
আমি জানি এ জীবন -- তুচ্ছ এ জীবন নদীর মতো !
জল শুকিয়ে গেলে প্রাণহীন শীর্ণ বালুচর !
জীবন যেন এক অপ্রতিরোধ্য হাওয়া --
অপরিসীম ক্ষুধায় নিজেকে গিলে নিচ্ছে অবিরাম !
তবুও
বারবার পরিণতির কথা কেন যে মনে হয় !
রাঙতায় মোড়া এ সাধের জীবন !
ফুল তার শুকিয়ে যায় -- বড় ভয় করে !
জানিনা মহাকালের খাতায় উপসংহারে কী লেখা হয় ?/
ধর্ম - যা ধারণ করে ! সত্যি লেখার
কথা কি করে আর বলি ?
চৈতন্য রহিত বিবেক ! যেখানে যা কিছু খুঁজি --
সবই কানাগলি !
হ্যালো অনুপম
আমাদের এই মৃদু উচ্চারিত শহরতলিতে অনেক
না ফোটা ফুল আছে কর্তিত গাছ আছে
শ্যাওলাভরা জলাশয় আছে আর
আছে অনেক অনেক না কথা খাওয়া পাখি !
প্রত্যেক উৎসব ও মহা - মহা জন্মদিবস শেষে
একজন মুগ্ধ গবেষক আসেন-- পাখিগুলি সমস্বরে
গান গেয়ে ওঠে-- জলাশয় ভরে ওঠে
নাম না জানা ফুলে আর অস্থি মজ্জা পান করে
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের হাওয়া !
তারপর
নিঝুম সন্ধ্যা নেমে আসে --
গাছেদের পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারে পান্ডুর চাঁদ !
ওপারের মায়ালোকে কে যেন জ্ঞানের আলো
জ্বালিয়ে বসে আছে ?
শ্রান্ত প্রায় অন্ধ প্রশ্নহীন পাখিরা ফিরে আসে কুলায় !
আমাদের এই মৃদু উচ্চারিত শহরতলিতে ----
পিপাসা
কোথাও কি দাঁড়িয়ে আছে?
উদ্যানে অথবা মাধবীলতায় !
কোথাও কি দাঁড়িয়ে আছে পারঘাটার নির্বাসিত বিকেলে --
গোধূলির নিভৃত বারান্দায় !
বিশাল আকাশটাকে ঘরের মধ্যে টেনে এনেছি --
বাতাসের হাহাকারকে বুকের ভেতরে জায়গা দিয়েছি !
হীরক জয়ন্তীর ভালোবাসাকে বুকের ভেতরে
পুড়তে জায়গা দিয়েছি!
উন্মাদের মতো শব্দ কল্প জানালা দরজা খুলে দিয়েছি --
হে নিহত ভালোবাসা আমাকে পোড়াও শব্দহীন প্রতীক্ষার
আগুনে নিভৃত নৌকার চিতায়--
চন্দন কাঠের সৌরভে
চলচ্চিত্র
পায়ের নিচে এঁটেল মাটি একটু এগোলেই জল!
সুধীজনে উড়াইতেছে ধুলো ভূমি টল মল !
আলো নেই বাতাস নেই এমন শুন শান চারিদিক!
পুড়ছে আকাশ ভাঙছে মাটি তবু তুমি - আমি ঠিক !
গভীরে যাও গভীরে যাও বলছে কেন হাওয়া ?
আমার তো সব পড়া -- লিখে সব দিয়েছি
ছেড়ে গরম ভাতে ঘি গাওয়া !
তবু তো জনগন চায় খুঁজতে অতল আঁধার!
পায়ের নিচে এঁটেল মাটি বড় কঠিন
কোথায় পারাবার ?
জমছে কালো নিভছে আলো বলো কোথায় সমভূমি ?
মধুর খোঁজে ভুল করে ভেঙেছি
ভীমরুলের চাক বিস পেয়েছি আমি !
ছড়িয়ে রাখি বুকের বিষ অভুক্ত রাজপথে !
হাওয়া উড়ছে বালি পুড়ছে ঢেকে আছি গণ মৌতাতে !
তীব্র নীল বাঁচার স্বাদ এখন অন্ধকারের
এঁটেল মাটি জলে
হয়তো আমি ধনঞ্জয় হয়ে ডুবে যেতাম "অপার" কৌতূহলে !
*******************************************************************************************





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন