শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * অশোক কুমার দত্ত



কবিতাগুচ্ছ * অশোক কুমার দত্ত 







অনুপমা 

নাটকের সমস্ত অসংযত সংলাপ আর মুগ্ধ 

ফড়িং ও কাঁচপোকার  রোমহর্ষক গল্প পেরিয়ে কুয়াশার 

মায়াজলে ভাসিয়ে দিলাম স্বপ্ন প্রদীপ! 

বিশাল বটগাছ ঘেরা উদ্যানে খেলা করছে 

তখন রিক্ত মাধবীলতা আর থমথমে মেঘ --

মনে আমার চাপা উদ্বেগ!  

কোনো কিছু না ভেবেই শীর্ণ নদী স্রোতে 

ভাসিয়ে দিলাম নাটকের পাণ্ডুলিপি আর 

শ্যামলীবাগানের ছিন্ন স্মৃতি!  

আসলে জেতা হারা মানুষের তুচ্ছতার অভ্যাস-- 

শুধু ভালোবাসবো বলেই পৃথিবীতে এসেছি ! 

একলা আকাশকে   সঙ্গে নিয়ে  তবু আমি দেখি-- 

রুদালি তামাশায় নদীর ঘোলা জলে ভেসে যাচ্ছে 

তোমার ছিন্ন নীল  আঁচল খানি! 


ফাগুন  

আজ ও কি তুমি  খোঁজো গোধূলির হাসিভরা মায়াবী বিকেল ? 

সেই ধুলো পায়ে পথ   চলা  লাল পলাশের বনে ? 

আজও কি তুমি খোঁজো  গোলাপী আবিরের  দাগ 

শুকনো  শাল পাতার ছায়ায় প্রবীণ আঙ্গুলে ? 

অশ্রু মুখী  নবীন কিশোরী  কোথায় হারিয়েছে সে ? 

কোথায় ? কোথায় অন্য কোনো ফাগুনের বনে ! 

বসন্ত  যেন সেই অন্য কোনো ফাগুনের নারী 

দাড়িয়েছে ছদ্মবেশে আমার ই   দরজা  র কাছে  ? 

সাহস  নেই  !  বয়স  নেই !  ! শুধু বলার মত  নগন্য 

অন্ধের স্মৃতিটুকু  পড়ে। আছে ! 

                হ্যাঁ অন্ধের নগন্য স্মৃতি টুকু  পড়ে আছে !



আত্মজৈবনিক 

একমুঠো শিশিরের তাপে অহংকারী জীবন চলে যায়  ! 

                      আর 

আমি জানি  এ  জীবন -- তুচ্ছ   এ  জীবন নদীর মতো  ! 

জল  শুকিয়ে গেলে  প্রাণহীন শীর্ণ বালুচর ! 

জীবন  যেন  এক অপ্রতিরোধ্য  হাওয়া -- 

অপরিসীম ক্ষুধায় নিজেকে গিলে নিচ্ছে অবিরাম ! 

                  তবুও 

বারবার পরিণতির কথা কেন যে মনে হয় !  

রাঙতায়  মোড়া  এ  সাধের জীবন ! 

ফুল তার শুকিয়ে যায়  -- বড়  ভয় করে ! 

জানিনা মহাকালের খাতায় উপসংহারে  কী  লেখা হয় ?/

ধর্ম -  যা  ধারণ করে ! সত্যি লেখার 

কথা কি করে আর বলি ? 

চৈতন্য  রহিত  বিবেক ! যেখানে  যা  কিছু  খুঁজি -- 

সবই কানাগলি  !










হ্যালো অনুপম 

আমাদের এই মৃদু উচ্চারিত শহরতলিতে অনেক  

না ফোটা ফুল আছে কর্তিত গাছ আছে 

শ্যাওলাভরা জলাশয় আছে আর 

আছে অনেক অনেক না কথা খাওয়া পাখি ! 

প্রত্যেক উৎসব ও মহা - মহা জন্মদিবস শেষে 

একজন মুগ্ধ গবেষক আসেন-- পাখিগুলি সমস্বরে 

গান গেয়ে ওঠে-- জলাশয় ভরে  ওঠে  

নাম না জানা ফুলে আর অস্থি মজ্জা পান করে

চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে  উৎসবের হাওয়া ! 

                তারপর 

নিঝুম সন্ধ্যা  নেমে আসে --  

গাছেদের পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি  মারে পান্ডুর চাঁদ !  

ওপারের  মায়ালোকে কে  যেন  জ্ঞানের আলো 

জ্বালিয়ে বসে আছে ? 

শ্রান্ত প্রায় অন্ধ প্রশ্নহীন  পাখিরা ফিরে আসে কুলায় ! 

      আমাদের এই  মৃদু উচ্চারিত শহরতলিতে  ----



পিপাসা

কোথাও কি দাঁড়িয়ে আছে? 

উদ্যানে অথবা মাধবীলতায় ! 

কোথাও কি দাঁড়িয়ে আছে পারঘাটার নির্বাসিত  বিকেলে -- 

গোধূলির নিভৃত বারান্দায় ! 

বিশাল আকাশটাকে ঘরের মধ্যে টেনে এনেছি -- 

বাতাসের হাহাকারকে বুকের ভেতরে জায়গা দিয়েছি  ! 

হীরক জয়ন্তীর ভালোবাসাকে  বুকের ভেতরে  

পুড়তে জায়গা দিয়েছি!  

উন্মাদের মতো  শব্দ কল্প জানালা দরজা  খুলে দিয়েছি -- 

হে নিহত ভালোবাসা আমাকে পোড়াও  শব্দহীন প্রতীক্ষার 

আগুনে নিভৃত নৌকার চিতায়-- 

চন্দন কাঠের  সৌরভে


চলচ্চিত্র

পায়ের নিচে এঁটেল  মাটি একটু এগোলেই জল! 

সুধীজনে উড়াইতেছে ধুলো ভূমি টল মল ! 

আলো  নেই  বাতাস নেই এমন শুন শান চারিদিক! 

 পুড়ছে আকাশ  ভাঙছে মাটি তবু তুমি - আমি ঠিক ! 

গভীরে যাও গভীরে যাও  বলছে কেন হাওয়া ? 

আমার তো সব পড়া  -- লিখে সব দিয়েছি 

ছেড়ে গরম ভাতে ঘি গাওয়া ! 

তবু তো  জনগন চায় খুঁজতে অতল  আঁধার! 

পায়ের নিচে এঁটেল  মাটি বড়  কঠিন 

কোথায় পারাবার ? 

জমছে কালো নিভছে আলো  বলো কোথায় সমভূমি ? 

মধুর খোঁজে   ভুল করে ভেঙেছি 

ভীমরুলের  চাক বিস পেয়েছি আমি !

ছড়িয়ে রাখি বুকের বিষ অভুক্ত রাজপথে ! 

হাওয়া উড়ছে বালি পুড়ছে ঢেকে আছি গণ মৌতাতে ! 

তীব্র নীল বাঁচার স্বাদ  এখন অন্ধকারের 

এঁটেল  মাটি জলে 

হয়তো আমি ধনঞ্জয়  হয়ে ডুবে যেতাম  "অপার" কৌতূহলে !









*******************************************************************************************



অশোক কুমার দত্ত

কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতির  স্নাতক!
নন্দন গৃহ শোভা কলেজ স্ট্রিট সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত!
দুটি কবিতার বই!
অরণ্যে জন অরণ্যে
অনুপস্থিতি র. মর্মর থেকে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন