শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * দীপংকর রায়



পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে 

(উৎসর্গ : দীপ্তিশিখা দাস )

দীপংকর রায়


২১৯.


তাই তো 

পথের উপর এত রোদ-হাওয়াদের হাতছানি.... 


কত পরিচিত অপরিচিতের ডাক হারিয়ে যায় 

ভেতরের জলকল্লোলে ....


ঝরনা গলে পড়ে কারো চোখের পাতা ভিজিয়ে 


মুঠো খুলতে পারি না 

কী করে খুলি 

পথে পথে ফেরে সেই বিবাগী ভিক্ষু -----


কতকাল আর কুড়োতে পারবো এত তৃষিত চোখের বিলাপ !


কারা যেন চোখ পেতে রাখে 

ছাই রোদে হামাগুড়ি দেয় 

কত ঠোঁটের তরঙ্গ ভেঙে 

ঢুকে যায় শুষ্ক বুকে 


ধরি ধরি করেও ধরা যে যায় না , সরে যায় অনেক ফাল্গুন 

হাওয়ার হল্কা হয়ে 


তবুও একটুখানি দাঁড়িয়ে ওঠা 

সে-ও মুখ ভেঙচায়?


মহা রিক্ততারাও একমুঠো ধুলো ছাড়া আর কী !


ধুলো ছড়িয়ে পড়ে 


কেউ কি ঝাঁপিয়ে নামবে 

যেভাবে ঝাঁপায় জল জলের বুকের উপর 


আমাদের সকল 

মৌন সংলাপগুলি 

জোছনার নদীর কাছে যে মতো ।


২২০.


যে এলোই না 

তাঁকেই খোঁজা 


গত ঘুমে যে ছিলো আগুন ধোঁয়ায় ওগরানো 

সেই টুকরো টুকরো ভাঙছে এত অনুভবের ঘরবাড়ি ---


বিছানায় দানা দানা ঘুরে শোয় 

অনেক ঋতুদের ছোঁয়াছুঁয়ি 

তাকেও কি পুতুল ভাবা যায় , কিংবা কড়ির বুক 

যদিও কড়ির বুকের হলুদেই ফোটাই অনেক মাধবীলতা 

আচ্ছা , সে কি কাঞ্চন দেখেছে কখনো ?

নাকি কড়ির বুকের ভাঁজে ফুটতে ফুটতেই

আপন রহস্যে খুন হয়ে গেল খালি!


ঘুরে ঘুরে তবুও তাকেই বোঝাই কত ঝিনুক মেলিয়ে 

তারই দাহতে তাকেই সেকি !


বিছানা জানে না 

চাদরে ঘোরে কতবার পোড়া মুখের ছবি 


সবটাই স্নায়বিক খুনসুটি তাঁর ?


২২১.


দুচোখ নিংড়ে সব জল 

তুলে দিয়েছিলাম হাতে 


সে ছাড়া আরো কেউ আছে যেন 

যেভাবে সাড়া দেয় এই ঋতু 


তাঁর কথা জানতে জানতেই 

কারা যেন গেয়ে গেল এত ছবি এত গান 


জানতে জানতেই নির্জনতা গিলতে থাকলো 

কয়েক দণ্ডের অস্থিরতা 

ইচ্ছে অনিচ্ছেদের কতোই না চলাচল 


সেই জল কার বুকের ভেতর গড়িয়ে 

আস্ত একটি নদী খুঁজে পাওয়া যায় বলো তো ?


আজও জানা হলো না 


একার সেই আমি 

একাই রইলাম ।


কেউ জানতে আসেনি এই নির্জনতা 

কেনই বা চেয়েছিলাম 


যে-হাতটি হাতের উপর এখন 

সে-ও তো একটি ঘুমের ফসল , তা ছাড়া আর কীই বা!


ঘরের ভেতর গুটিয়ে কুঁকড়ে 

এত উথাল পাথাল গোনা যে নদীর ,

তাকে 

কী করে উৎসর্গে পাঠাই বলো‌ তো !


কতো রুক্ষ ভূমির‌ পথে পথে 

এই দিন গেল , তবুও অবহেলার বৃষ্টি নামলো না কোথাও 


শুনলো না সেই আনমনের কথাটিও‌ভালো করে‌ কেউ



২২২.


মাথার উপর কালো হয়ে গেছে চাঁদ 

পথে পথে কত গান গেয়ে ফিরে গেল পথের বাউল 


কে যে তার হাতে হাতটি রেখে 

বাইরে বেরিয়ে আসবে আজ!


বুকের উপর বুকটি রেখে 

এতো যে মাখামাখি আলো 


সে সব গড়াগড়ি কথা কে আর আজ জানে !


পথের চাঁদটি উঁকি দিয়ে শুনেছিলো কি কিছু ?

দুই সুরে নিয়ে গেলাম কত পূর্ণিমাদের , কপালের আবীর 

কপালেই রইলো , গালের দুপাশে ও কার আঙুলের চিহ্ন ?


কে যে কার দিকে চেয়ে

মুছে নিলো গোটা একটি নদীর নাম !


পথের শূন্যতাই জানে 

সে সব 

আর কেউ তো‌ না ।













২২৩.


এই তো , কেউ একজন বলেছিলো ,...." ভুলে যাবে না তো ?"


কাকে যেন কেউ চেয়ে চেয়ে নেমে গেল 

কারো গলায় 


কত লালা রস 

কার গলায় কে যে নামায় ! কত শুষ্ক গাল জিভের উপর 

উল্টে শোয় সে কথা আজও জানা হলো না তো !


জল চেয়ে চেয়ে

কে যেন 

একফোঁটা জলও পেলো না!


আবার কে যেন 

না চাইতেই মেঘ ভেঙে 

নামিয়ে নিলো ঝমঝমে বৃষ্টি .....।


সন্ধ্যা হলো , এত জলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতেও 

ফুটিফাটা মাঠের হাঁএর ভেতর সেই জল 

এক বিন্দুও পৌছোলো না ।


শুনেছি তুমি তো নখের ডগায় যেটুকু মাটি থাকে 

তাও জানো না ।


তাহলে কাকে আর সেই ব্যাঙ উন্মাদনার কথা শোনাই ঘটা করে ?












**********************************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন