শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

গুচ্ছ কবিতা * তপন পাত্র



কবিতাগুচ্ছ * তপন পাত্র 







ঊষার আলো


(১৩৬)


আমার কোন ঘর নেই।

আমার ভিতরেই বাসা বেঁধেছে বাবুই পাখি।

আমার ভিতর ঘর বেঁধেছে কুমোর পোকা।


আমি বাবুই বাসাতেও থাকি।

কুমোর পোকার মাটির ঘরেও থাকি।


আমি কি কারো ঘর ভাঙতে পারি?


আমার পৃথক কোনো ঘর নেই।

তাই

আমার কেউ পর নেই।



(১৩৭)


আমার ক্ষেতের মাটি

 নিয়ে যাচ্ছি আমারই ক্ষেতে।


তুমি আটকে দেবার কে হে,

........কিল মারার গোঁসাই?


এই মাটির সঙ্গেই মিশে আছে আমার বাহান্ন পুরুষের 

হাড়,স্বেদ,রক্ত।


এখান থেকেই জেগে উঠেছি, এখানেই ঘুমিয়ে পড়বো আমি। 

এই মাটি যুগ যুগান্তর শুধু আমার।


আমার গরুর গাড়ি আটকে দেবার তুমি কে?



(১৩৮)


নদী আমার মা।

বালি তার চরণধুলা।


চরণধুলায় ছেলের অধিকার, 

চরণধুলায় আমার অধিকার।


এই ধুলায় আমি আমার মন্দির বানাবো।

পরের ধনে পোদ্দারি করার তুমি কে হে?


অনধিকার চর্চা করলে তোমার চোখে বালি ছুঁড়ে দেব।



(১৩৯)


গাছ কাটলে তোর অনুমতি নিতে হবে?

তুই গাছের কে?

একটা চারাও হাতে ছুঁয়েছিস, মাটিতে দাঁড়িয়ে কোনো 

দিন দিয়েছিস জল?

আমি গাছের মা ,

আমিই গাছের বাবা।


সে গাছে তোর দরদ কেন ?


মাসির দরদ মাকে ছাড়িয়ে গেলে ডাইনি বলে লোকে ।



  (১৪০)   


শীত দরজা বন্ধ করতেই বসন্ত এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।


এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশা।

এঁচোড়ের ফুল ফুটল না এবার।


পলাশ হাসবে তো?


কচুরিপানায় ঢেকে গেছে কালো দিঘির জল।



  (১৪১)   


যার ঘরে ছেলে নেই, তার মন কেমন করে।


যার ঘরে ছেলে, তার মায়ের বুকে দুধ নেই!

ছেলে কেঁদে মরে।


আমার মন কেমন করে গো,

              মন কেমন করে।












(১৪২)


কাসাই নদীর ধারে 

কার ছেলে কাঁদে রে, কেন কেঁদে মরে?


তার পেট করে চাঁই চাঁই,

ছেলের মা যে ঘরে নাই।

ছেলের মাই হারাই গেছে দাদনে।


ছেলে কাঁদে অযোধ্যার বনে।



(১৪৩)


খুঁটি ধরে পুটি দাঁড়াই আছে।

সঙতিরা স্কুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পায়ে পায়ে।


পুটি নাবালিকা।

শাঁখা-সিঁদুরের বয়স হয় নাই।


কিন্তু

কে কার কথা শোনে!


কুড়িতেই বুড়ি হয়েছিল তার মাও।



(১৪৪)


কুঁড়ে ঘরে বাস করে বিনয়লোচন।

তাল পাতার আগুড়।

আগুড় ঠেলে ঘরে ঢুকলেই নূপুর বেজে ওঠে, মাথা নিচু হয়।


এই ঘরে ঢুকতে বেরোতেই নিচু হতে শিখেছে বিনয়।



(১৪৫)


এক হাল গরু।

লাঙল চলছে ---হিঁ-টক-টক।

গরু দু'টির মুখে জাল বাঁধা।

কচি সবুজ ঘাসের উপর লাঙ্গল চলছে।

লকলকে ঘাস মাটির সঙ্গে মাটি করে ধান তুলে আনবে

রাধারমণ।


গরু দু'টি রাধারমণের কথা ভাবছে...

রাধারমণ টের পায়নি গরুদের অন্তরের কথা?



(১৪৬)


ঘাস পচে পচে মাটি হচ্ছে।

ঘাস খেয়ে গরু...

গরুও মাটি হয়ে যায় একদিন।


মাটি থেকে জন্ম নেয় ধান।

ধান থেকে চাল।

চাল আমার পেটে যাচ্ছে।

চাল তোমার পেটে যাচ্ছে।


এই চাল এবং আমরাও মাটি হয়ে যাবো একদিন।


মাঝখানে কতো বিচ্ছেদ, কতো বিরহ, মিলন !













***************************************************************************



তপন পাত্র 

পুরুলিয়ার সুপ্রাচীন লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে পেশায় অধ্যাপক তপন পাত্রর কলমেগদ্য ও কবিতা উভয় শাখাতেই তিনি সাবলীল । তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই ---কাব্যগ্রন্থ : মাটিও কালে ঢেউ  --(১৯৯৪) * অচেনা রং --(১৯৯৮) * স্বাতী নক্ষত্রের জল  ঝিনুকের বুকে --(২০০০) *  ঝড় সওয়া কলাপাতার গান --(২০০৩) * রচিত কবিতা --(২০১৮ ) বিভাবরী --(২০১৮) * সেই পলাশ্যার তিন পাত --( (মানভূঁইয়া কবিতা) (২০১৯) * সুদূর মাঠের প্রস্তাব -- (২০২০) * কোভিড নাইনটিন্ --(২০২০) * বসন খসে পড়ে --(২০২১) ছড়া---দিলাম ছড়া ছড়িয়ে --(১৯৯২) *  হুল  --(২০১৩)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন