কবিতাগুচ্ছ * শিশির আজম
Room in Rome
ইঁদুরেরা ধানক্ষেতে ঘুমায়ে রয়েছে আর বিষাক্ত জোসনার তলে
অপেরা নর্তকী ধুয়ে চলে
ধুয়ে চলে
নিজেকে
এই ভালোবাসা আর লুকোচুরি নিয়ে আমরা দেখি অগ্রসরমান জনপদ
পঙ্গপালক্ষত আর দ্বিতীয় জন্মের দাগ নেই
রক্ত নেই
ফুল নেই
যদিও প্রান্তিক জোটনিরপেক্ষতায় আমরা স্বাক্ষর দিয়েছি
অনতিদূরে গ্রীষ্মদিনের ঝাউগাছ
বেতনটেতন ছাড়াই যেহেতু বাজপাখি ওদের দেখাশোনা করে
সকালের সূর্য বিকেলের বাঁশবাগানে নেমে আসে বাজিবাজনার তোয়াক্কা না করে
বাঁশবাগানে কয়েকটা খরগোশ
একটার পরিচয় গতকালকের সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে
এস্কিমো মায়ের সন্তান
ওরা আর কোন প্রহরী রাখবার কথা ভাবে না
ওরা
মাছিদের নিয়ে প্রতিশ্রুতিহীন হাসাহাসি অবজ্ঞা আর গর্ভবতী মাছিদের
আলাদা বিকেলবেলা আর অবিষ্ফোরিত কালোমাটির আগুন
আর মিষ্টকুমড়োর আত্মগ্লানি
তারকোভস্কির সোলারিসের ভিতর
তারকোভস্কি কে জানেন তো আপনারা আর সোলারিস কিন্তু ওরই মাথা
বেশ কিছু অসমাপ্ত ঋতুকাল কাটিয়েছি কোন নেশাটেশা ছাড়াই
হয় তো সামান্য চারু মজুমদার বা ডুমুরগাছের বিষক্রিয়া
নাস্তিক হয়েছি অন্তত একুশবার
মাঝরাতে পুলিশের গুলি আর শিলাবৃষ্টি আর আমার তেলাপোকাগুলোর
ক্লিন সেন্সিটিভিটি
চাষী আর রাখালেরা গা ঢাকা দিয়েেছে
বৌগুলোকে রেখে
কিন্তু আমার তো বৌ নেই তাই আমি চাষীদের কাছ থেকে লবন কিনি
আর ডাইনিদের চোখ ধুয়ে দিই
ওদেরই কেউ হয় তো চেয়েছে আমার থেকে আদর কেড়ে নিতে
ঠিক জানিনে
ঠিক জানিনে আদর নিতে গিয়ে আর দিতে গিয়ে ডাইনিরা এতো ঘামে কেন
ওদের বুক ধড়ফড় করে কেন
এখন
কালো জলপাইগাছ বা ব্রহ্মবীজাণুপাত বিস্মৃত হয়ে
একটা কথাই বলবো
তোমাকে আমি ভালোবাসি
হ্যা
তোমাকে আমি ভালোবাসি আর তোমার স্নানের ধুয়ে যাওয়া সাবানের
ফেনা ভালোবাসি
আর তোমার আত্মহত্যার মুহূর্তটুকু
উপভোগ করতে চাই
রাস্তায় কাঁটা দেওয়া বুড়ি
যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আমি বাচ্চাদের পড়াতে যাই
সে রাস্তায় প্রতিদিন কাঁটা দেয় এক বুড়ি
বুড়িটাকে প্রতিদিন দেখি
বুড়িটা আজ নেই কেন বুড়িটা কোথায় গেল
প্যারাডাইস ভ্যালি
পড়াশুনা নিয়া ধর্মকর্ম নিয়া মা-বাবার লগে বহুৎ ক্যাচাল হইছে
টিচারদের লগে ঝগড়া করছি বিদ্যালয় আর বেশ্যালয় দুটোরই
বিশ্বস্ত সহাবস্থান আর সোশাল সিগনিফিক্যান্স বোঝাইতে গিয়া
কান্মলা খাইছি
ক্লাসরুম থিকা বাইর হয়া আইছি
বাইর মানে আমার চারপাশ তখুন প্যারাডাইস ভ্যালি
ব্লুজ ডার্ক এ্যান্ড মেটাল
শুধু
অঙ্কের ম্যামের লগে কুনোদিন ঝগড়া করি নাই
মনখারাপ করি নাই
পাঠ্যবই হুদাই কেন পড়ুম
পড়ুম না
ম্যাম আমারে বকা দিবো
দিক
আমি সিগ্রেট খামু
মদ খামু
গাজা খামু
এগুলা না খেলে বড় হমু ক্যামনে
ক্যামনে কবিতা লিখুম আমার হাসিখুশি মিষ্টি ম্যামরে নিয়া
ম্যাম নবোকভ পড়িছেন
তারকোভস্কি দেখিছেন
'পিকাসো হইলো পেইন্টিংয়ের গড' --ক্লাসে কতোবার যে বলিছেন উনি
আমার রাগও হইছে
হাসিও পাইছে
তাইলে আপ্নে আমার কী
--গডেস
--এ্যাঞ্জেল
--জোয়ান অব আর্ক
না
আপ্নে আমার কবিতা
আপ্নেরে নিয়া কবিতা লিখুম
হ কবিতাই লিখুম ভাইবেন্না কিউট সেক্সুয়াল ফেটল্স
বা জাস্ট ওরিয়েন্টাল মেটাফর
ভাইবেন যা হোক
কবিতায় কিন্তু আপ্নের লগে আমার কাইজ্জা আছে
আপ্নে আমারে কি কম কষ্ট দিছেন্নি
গোধূলি
ছুঁতে পারি ছুঁতে পারিনে
বহন করে চলেছি
হালকা হয়ে আসে নরম হয়ে আসে
তোমার স্তন
যেন এক প্রাচীন পাথর মিকেলাঞ্জেলোর
বরফ
আজকের সকালের এই কুচি কুচি বরফ এতো মর্মান্তিক
বাড়িতে গিজগিজ করছে লোক
যার যার বরফ
যার যার শ্বাসের সঙ্গে গলে পড়ছে
অথচ একদিন বৃষ্টির উঠোনে
এই কুচি কুচি বরফ
কুচি কুচি রোদ
কুচি কুচি অন্ধকার জানলা
****************************************************************************************************************
শিশির আজম
জন্ম : ২৭ অক্টোবর, ১৯৭৮ জন্মস্থান, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : এলাংগী, কোটচাঁদপুর ঝিনাইদহ -৭৩৩০
বাংলাদেশ
কাব্যগ্রন্থসমূহ : ছাই (২০০৫) দেয়ালে লেখা কবিতা (২০০৮) রাস্তার জোনাকি (২০১৩) ইবলিস (২০১৭)
চুপ (২০১৭) মারাঠা মুনমুন আগরবাতি (২০১৮)
মাতাহারি (২০২০) টি পোয়েট্রি (২০২০) সরকারি কবিতা (২০২১) হংকঙের মেয়েরা (২০২২) বিষ (২০২৩)
সম্পাদিত ছোটকাগজ : শিকড় (৫ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
সম্পাদিত কবিতার ভাঁজকাগজ : বাংলা (৩ টি সংখ্যা প্রকাশিত)
বাংলা কবিতায় Tea Poetry Movement এর উশকানিদাতা




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন