কবিতাগুচ্ছ * রবীন বসু
১
পুরস্কার সেঁটে দিচ্ছেন স্বয়ং সম্রাট
সেই যে বুক পকেটে কবিতা রেখে
না-ছুঁতে পারার দুঃখকে ঢোক গিলে
ড্রয়িং থেকে বাথরুম যাত্রা—
আবার সিঁড়ি ভেঙে রুফটপ
তারপর মহাশূন্যের মাঝে দোলায়িত নির্মাণ
কবিতার ঘ্রাণ মেখে মধ্যরাত নৃত্যপটীয়সী l
অথচ হাভাত আমি কবিতার গা থেকে
ভাতের গন্ধ পাই না, সাদা ফ্যানের উষ্ণ ওম—
আমার দুঃখী মা যখন খুদ ফুটিয়ে জাউভাত করে
আমি প্রবল খিদে নিয়ে ছুটে যাই—
আমার সমস্ত আকুলতায় বুক পকেটের কবিতা
মিটিমিটি হাসে, ও কি বিদ্রূপ করে আমাকে?
আমাদের সমস্ত নন্দনচর্চায়, প্রাচীর বিলোপে
পুরস্কার সেঁটে দিচ্ছেন স্বয়ং সম্রাট লে
২
বিশ্বায়ন হেঁটে যায়
বেআব্রু সকাল গা থেকে সরিয়েছে ছেঁড়া কাঁথা
এলোমেলো খড়কুটো
ইটের উনুন হাঁড়ি কলসি নিয়ে
ছড়ানো সংসার
সদ্যপ্রসবা আলোয় ফুটপাত-বালিশে রাখে মাথা l
মাথার গভীরে জ্বলে উন্নয়ন, কাকজ্যোস্না ঝরে
প্রাত্যহিক দিনলিপি
কষ্টের চালচিত্র সর্বভুক মানুষ
ক্ষুধা
বিশ্বায়ন হেঁটে যায়
ফিচেল মেয়ের মত সানগ্লাস পরে …
৩
আবহমানে বিপুল বৈরিতা
কারা যেন আসছে
কেমন ধীরেসুস্থে গড়িমসি চাল
সময় ফাতনা ফেলে বসেছে নিশ্চিন্তে
অপেক্ষা উন্মুখ হয়ে হেঁটে যাবে কেউ
নিরালা জলের ধারে
প্রতিবিম্ব মুখ দেখবে অনন্তের আবহে
কিচিরমিচির পাখি
শব্দের ওম থেকে উড়ে যাবে তুলো
যাবতীয় ধ্বংস আর অনিশ্চয়তার মধ্যে
সূর্যমুখ হয় না কেন আমার স্বদেশ
সন্ত্রাস সন্ত্রস্ত দিন চলাফেরা করে
সেনানীর রক্ত ঝরে রাজনীতি গণতন্ত্র খোঁজে আবহমান বিপুল বৈরিতা নিয়ে কী যেন খোঁজে!
৪
সোঁদাগন্ধ ও সযত্ন বাঙ্ময়
এই যে প্রাচীন জনপদ পুরনো সোঁদাগন্ধ
অলৌকিক হাওয়ারা সব কেমন এলোমেলো
হাড়হিম করা রহস্যগল্পের নেপথ্যে অনিবার্য টান
তাকে তুমি সঙ্গোপনে পাশে রাখো
হেঁটে যাও দূরে বিলম্বিত আলাপের প্রান্ত ছুঁয়ে
যে মানবী-স্মৃতি তাকে শিলালিপি ভেবে বোসো না
অক্ষরে অক্ষরে আজ মায়ার শরীর
খননে উৎকর্ষ ওঠে, উঠে আসে সযত্ন বাঙ্ময়
পবিত্র পাপের মত তাকে যদি ক্ষমা করা যায়
উঠোনজোড়া স্মৃতি অবাক বিস্ময় নিয়ে বসন্তকে
***************************************************************************






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন