আততায়ী
মল্লিকা রায়
রাত হলে পোড়ো প্রাসাদ থেকে ভেসে আসে শব্দ! সিন্দুকের কোণে ও কী? চমকে গেল পুলিশ এক সময় বাঁকুড়ার কালীতলা এলাকার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ি দেখতে আসতেন অনেকে। তিনতলা বিশাল ওই বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে ‘রাজবাড়ি’ নামেই পরিচিত ওই বাড়ি তদন্ত করতে গিয়ে ঘরে ঢুকে সিন্দুকের পাশে হাড়গোড়, মাথার খুলি পেল পুলিশ।
কয়েক দিন ধরেই আতঙ্কে ভুগছিলেন স্থানীয়রা। রাত হলেই পরিত্যক্ত প্রাসাদোপম বাড়ি থেকে ভেসে আসে নানা অদ্ভুত শব্দ। কারা যেন রাতের অন্ধকারে যাতায়াত করে। সেই রহস্য ভেদ করতে গিয়ে চোখ ছানাবড়া হল সকলের। চমকে গেল পুলিশও। বাঁকুড়া সদর থানা এলাকার ঘটনা।এক সময় বাঁকুড়ার কালীতলা এলাকার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ি দেখতে আসতেন অনেকে। বাড়িটির নাম ‘প্রতিচী’। সেই নামকরণ নাকি করেছিলেন সাংবাদিক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। ওই পরিবারের সদস্যরা এখন কর্মসূত্রে নানা জায়গায় রয়েছেন। বিশাল বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত। দিন কয়েক ধরেই প্রতিবেশীরা প্রতি রাতেই শুনতে পেতেন কেউ বা কারা যেন ওই বাড়িতে আসা যাওয়া করছে। বাড়ির বিভিন্ন অংশে ভাঙচুরের আওয়াজও শুনেছেন কেউ কেউ। কিন্তু তালাবন্ধ বাড়িতে রাতের অন্ধকারে কে যাতায়াত করছে? উদ্দেশ্যই বা কী? কৌতূহল নিরসন করতে সোমবার সকালে কয়েক জন প্রতিবেশী বাড়ির সদর দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢোকেন। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই ঝটকা। তাঁরা দেখেন বাড়ির উঠোনে কাত হয়ে পড়ে আছে একটি পুরনো সিন্দুক। ভাঙা দরজার ভেতর দিয়ে বাড়ির একতলার একটি কক্ষে চোখ যেতেই শিউরে ওঠেন সবাই। দেখা যায় একটি তক্তার উপর পড়ে হাড়গোড়। ওগুলো কি মানুষের? আতঙ্ক এবং আশঙ্কায় স্থানীয়রা খবর দেন বাঁকুড়া সদর থানায়। পুলিশ এসে উদ্ধার করে হাড়গোড় এবং মাথার খুলি। সেগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “১০ বছর ধরে ওই বাড়িতে কোনও লোকজন থাকেন না। ৩ বছর ওই বাড়িতে কেউ ঢোকেননি। মাঝেমধ্যেই দুষ্কৃতীরা ওই বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে ঢোকে। বাড়ির দরজা-জানালা থেকে শুরু করে রড সমস্ত কিছুই প্রায় চুরি হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার বাড়িতে ঢুকে পুলিশ একটি পুরাতন ভাঙা চোরা কাঠের বাক্সের পাশে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “হাড়গোড়গুলি মানুষের কি না তা জানতে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে ফরেন্সিক পরীক্ষাও করানো হতে পারে। ওই বাড়ির উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।”
আততায়ী :
'বাকুড়ার পুলিশ প্ৰশাসনের আৰ্জি মোতাবেক আমি এই পোড়ো বাড়ির দরজার তালা ভাঙছি, আপনারাও আমার সঙ্গে থাকুন - এগিয়ে গেলেন বহুজীর্ণ ভাঙা চোরা পরিত্যাক্ত তিনতলা বাড়িটার দিকে মি: প্রকাশ গোয়েঙ্কা। পেছনে সহকারী দু'জন ডিস্যুজা গর্গ ও মিঠু পাকড়াশি, দুজনেই সাহসী এসিস্টেন্ট। বছৱ পাঁচেক হল মি: প্রকাশের সহকারী হিসেবে ট্ৰেনিংয়ে আছে। ডিস্যুজা গর্গ ইউরোপবাসী এডভেঞ্চার নিয়ে এডিনবাৰ্গের স্কলার, সঙ্গী মিঠু ভারতীয় হলেও পড়াশুনা জীবনের শৈশব থেকে ট্যোটাল সময়টা ধনী গ্রান্ড গ্রান্ডির সঙ্গে ইউরোপে পাৰ্লেতে কাটিয়েছেন পড়েছেন একই কালেজে ।
তিনজনেই প্রবেশ করেন ঘরের ভেতর একঝাঁক বাদুরের ডানা ঝাপটানি মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল সহসা, মাকড়সার জালে দুই হাত সন্তরণরত জড়িয়ে যাচ্ছে শরীরের উৰ্ধাংশ, মুখ মাথা কে যেন কুয়াশাবৃত জালে জড়িয়ে বেঁধে ফেলতে চাইছে সহসা।বেলা এগাৱোটা, পুরাণো আসবাবের ও আবৰ্জনার গন্ধে গুলিয়ে উঠছে সৰ্ব শরীর,দ্বিতীয় ঘরটিও তদ্ৰুপ বেশ দামী সেগুণ কাঠের পালঙ্ক, দরজা জানালা বন্ধ, মাক্স ভেদ করেও বিশ্রী গন্ধ লাগছে নাকে। কব্জা ধরে টান দিতেই হুড়মুড় কৱে উড়ে গেল খেচর জাতীয় কিছু, হাতে ছোট লাঠি নিয়ে আপ্রাণ জাল সরিয়ে এগোতে হচ্ছে ক্রমে।
'কুইক গর্গ' মৃদু অথচ চাপা কন্ঠে হাতের লাঠিটি উচিয়ে নিৰ্দেশ দিলেন মি: গোয়েঙ্কা।
'লুকস দ্যসট দ্য ওপেন উডেন বক্স, মনে হচ্ছে বহু শতাব্দী পুরোণো, আশে পাশে কি এসব ?
'ওহ্ হারি কাম অন' মাথার খুলি,হাড় গোড়,নখ,দাঁত
দেখতে পাচ্ছ তোমরা ?
'অব কোর্স স্যার ,এটা একটা মানুষের কঙ্কাল এবং শোয়ানো অবস্থায় রয়েছে, অর্থাৎ একজন মানুষ,হতেও পারে বাক্সের গয়না সম্পদ লুঠ করে আততায়ী খুন করে ফেলে রেখে পালিয়েছে টের পায়নি কেউই ,কেসটা কিন্তু স্যার কম করে হলেও তিন যুগেরও বেশি এবং বাক্সটি কাঠ ও আয়রণ মিশ্ৰিত।
'হুম্ কিন্তু আশ্চৰ্যের বিষয় হল বাক্স ও মৃতদেহটি খাটের ওপরে জানলার কাছেই উপুর করে রাখা হয়েছে কেন, স্ট্ৰেঞ্জ'!
'আমার মনে হয় স্যার ইটস নাথিং বাট এন ইস্টিংট টেনাসিটি অফ্ দ্যসট ক্রিমিন্যাল' জানায় গর্গ।
'য়্যু আর এ জিনিয়াস' একরাশ বিশৃঙ্খল কেশরাশির মধ্যে মাথায় হাত রেখে ঝাঁকুনি মি: গোয়েঙ্কার। বরাবরই তোমার এই তাৎক্ষণিক ধারালো বুদ্ধির আমি প্রশংসা করি , বি কেয়ারফুল মাই বয় '!
'ওহ্ থ্যাঙ্ক য়্যু স্যার'
বাড়িটির নাম 'প্ৰতিচী' সাদা পাথরে খোদাই করা বাইরের প্ৰবেশ দরজার বাম পাশে, নামের দু'পাশে দুটি সরু লতা ,এর অৰ্থ বাড়ির মালিক জমিদার অংশুমান সাহা মাল্টিপ্লেক্স বিসনেস ম্যানই শুধু নন একজন শৌখিন মানুষও ছিলেন। বাড়ির সমুখভাগ বেলজিয়াম কাঁচে ঘেরা সূক্ষ্ম সাদা কারুকার্য মন্ডিত ফ্রেমে সাজানো,ভেঙে গিয়েছে বেশ কিছু কাঁচ,ফ্রেম নষ্ট হয়েছে জৌলুস, ডানপাশে সুন্দর সাজানো বাগান,সুইমিং পুলসহ ছোট শুকনো,ভাঙা চোরা,একরাশ বন্য গাছ গাছালিৱ ঔদ্ধত্যে ভরপুর।একসময় বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত না জমিদার অংশুমানের ভয়ে। বাঁকুড়া শহরটিকে ভেঙে চুরে সাজিয়েছিলেন নিজের সাধ্যমত। অতিথি নিবাস,বড় রাস্তা, সদর শহর, ইস্কুল,কলেজ, ছাত্ৰাবাস,অফিস আদালত, রেল স্টেষণ,মেট্ৰো,মাল্টিপ্লেক্স দোকান বাজার, শোরুম ইত্যাদিতে সাজিয়ে তুলেছিলেন গোটা শহরটাকে। এই ছিল জমিদার অংশুমান সাহার আপাত পরিচয়। স্ত্ৰীর মৃত্যুর পর তিন ছেলে নাতি,নাতনীসহ সকলেই কর্মসূত্রে জাপান ও অস্ট্ৰেলিয়ায় অবস্থাণরত। বহু চেষ্টা করেও একসাথে বিদেশে বসবাসের আবেদন জানিয়েও হতাশ হয়ে ফিরে গেছে ওরা। আসেননি কেউই প্ৰায় বহুবছর। শহরের এক প্ৰান্তে বিদ্ধস্ত পরে থাকা বাড়িটি আশেপাশে প্ৰতিবেশী গৃহস্থদের মনে এক আতঙ্কের সৃষ্টি করে। বেশিরভাগ মানুষের অভিযোগ রাত হলেই বাড়িটিতে প্ৰবেশ করে বহু মানুষ ,মাথা মুখ ঢাকা ওদের কাছ থেকে দেখেনি কেউ কখনও। শোনা যায় বাড়ির বিভিন্ন অংশের ভাঙচুরের আঁওয়াজ, ঘুঙুর পায়ে নৃত্যের আঁওয়াজ। চুরি হয়ে গেছে ছাদের লোহার রডের অবশিষ্টাংশ, দরজা জানালার পাল্লা ইত্যাদি । পাড়া প্ৰতিবেশি আতঙ্কিত ও ভয়ার্ত। তালাবন্ধ ঘরে কে ঢোকে ,কেনইবা ঢোকে সকলেই কৌতূহলী। প্রায় প্রতিদিনই পেছনের পাঁচিল টপকে তালা খুলে ঘরে ঢোকে বেশ কিছু মানুষ লক্ষ্য করেছেন অনেকেই কিন্তু ,সামনে এসে ধরে ফেলবার সাহস হয়নি কারোরই। একসময় প্ৰাসাদোপম বাড়িটি এলাকার বিখ্যাত বাড়ি হিসেবে নাম ডাকও ছিল খুব। বহু সাংবাদিক জনসাধারণ দেখতে আসতেন, ভবনটির সৌন্দৰ্য্যে মুগ্ধ হতেন । বিদেশি গ্লাস টালি মাৰ্বলে খচিত নিঁপুন শিল্পশৈলীর ভাস্কৰ্যে অবাক হতেন অনেকেই।
কিন্তু এসব কি ঘটছে ইদানিং ? রাতের অন্ধকারে ওরা কারা, ঢুকছে ফাঁকা বাড়িতে তালা খুলে? উদ্দেশ্যই বা কি ওদের ? আতঙ্কিত হয়ে দু' একজন খবর দেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে। পুলিশ এসে তদন্ত করার পর দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিটেক্টিভ মি: প্রকাশ গোয়েঙ্কার গ্ৰুপকে।
'তাহলে স্যার মোটামুটি ক্লিয়ার' প্ৰশ্ন গর্গের।
'তিনভাগ, ইটস আ মাৰ্ডার কেস এন্ড টোট্যালি কুল মাৰ্ডার। কিন্তু প্ৰশ্ন হল কে সেই আততায়ী ? কিভাবেই বা সম্ভব তাকে সনাক্তকরণ ? ভাবো ভাবো গর্গ এন্ড মিস্ মিঠু। ভাবো !
এরপর নিৰ্দেশ আসে মন্ত্ৰী মহল থেকে, নড়েচড়ে বসেন বাঁকুড়া সন্মিলনীৱ মেডিক্যাল গ্রুপ। মৃতের হাড়,দাঁত,নখ,চুল ইত্যাদি নিয়ে চালানো হয় দীর্ঘ গবেষণা।
দীর্ঘ এক সপ্তাহ পর হাতে আসে ফরেন্সিক রিপোর্ট
সুন্দর দু'পাটি দাঁত অক্ষত কোথাও কোন আঁকাবাকা নেই শুধুমাত্র নিচের পাটির জোড়া দাঁত সোনায় বাঁধানো। সেকেলে দেরাজ ভেঙে পাওয়া যায় দীর্ঘ আটাত্তর বছরের জীবনে মাত্ৰ তিন বার অপারেশন হয়েছে তার প্রথমবার পরে গিয়ে কাঁধ ও বাহুর সংযোগস্থলের হাড় ভেঙে গেলে ,দ্বিতীয়বার হার্ট ব্লকেজে ছোট্ট একটা অপারেশন পেসমেকার নিতে হয়নি রেস্ট্রিকশনে থাকতে বলা হয়েছিল।
সবশেষে দাঁত, শৌখিন মানুষ হিসেবে নিচের পাটির একজোড়া দাঁত সোনায় বাঁধান শখ করেই। প্ৰাণখুলে হাসলে অসাধারণ সুন্দর দেখাত তাকে। পাওয়া গেছে ফাইলবন্দী সমস্ত রিপোর্ট। ফলে সহজসাধ্য ইনভেষ্টিগেশনে সুবিধা হয়েছে অনেকটা।
সময়টা প্ৰায় দুই দশক,সার্জারির এত পরিমাণ উন্নত পরিকাঠামো না থাকলেও শহরের জমিদার হিসেবে বিদেশ থেকে আনানো হয় চিকিৎসক এবং চিকিৎসার সমস্ত সরঞ্জাম।এছাড়া সমস্তক্ষণ দেখভাল খাবার তৈরী ও ঘরদোরের সাফাই সংক্ৰান্ত সমস্ত কাজই করত স্থানীয় ওই কেয়ারটেকারের (মনোজ) বাড়ির লোকজন। বেঁচে আছে তার নাতি পুতির বংশধরেরা। ভাসা ভাসা জানা যায় তাদের কাছ থেকেই। প্রায়ই তাদের পরিবারের আত্মীয় স্বজনের যাতায়াত ছিল ওই বাড়িতে বৃদ্ধের খোঁজ খবর নেবার জন্য।
রাত দু'টো, একদল কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দের গগনবিদারী কান্না রাতের অন্ধকার চিরে ভয়াবহ হয়ে উঠছে।ঘুম ভেঙে চেঁচিয়ে উঠছে একদল রাতপাখি।
আচমকা পেছন থেকে মুখ চেপে ধরেছে কেউ,হাত মুখ ঢাকা -
'দাদু ও দাদু,ভয় পেওনা গো, যাও পেচ্ছাবটা করে নাও আর তারপর - তুমি আর আমি, আমি আর তুমি ,দারুণ তাই না দাদু'
ঘুমের ঘোর কাটেনি তখনও,জিরো পাওয়ারের আবছা আলোতে লক্ষ্য করেন কে একজন ছোকড়া মত - ভাবলেন মদনা বুঝি। শরীর খারাপ শুনে দেখতে এসেছে ,আহা কি ভালো ছেলেটা।
ভয়ংকর চেচাচ্ছে কুকুরগুলো, বুকের ভেতরটা ছ্যাত্ করে উঠছে , হাউউউউউউ, অমন করে কাঁদছে কেন কুকুরগুলো ! শুনেছিলেন প্রাণীরাই প্রথম টের পায় বিপদ আপদ। কি জানি !
'কে মদনা ? কখন এলি ? বেশ করেছিস শরীরটা খুব খারাপ হয়েছে বুঝলি'
- হু, জানি তো। সংক্ষিপ্ত উত্তর আগন্তুকের।
হালকা আলোয় ভেসে যাচ্ছে 'প্ৰতিচী'র বিলাসী অন্দরমহল, ঘন্টায় ঘন্টায় নেচে উঠছে মিশরীয় সঙ্গমরত ব্ৰোঞ্জ মূর্তিগুলিতে নেপাল থেকে আনা মিউজিক ঘড়িগুলি। অদ্ভুত আলোর ফোকাস ছড়িয়ে পরছে সমস্ত দেওয়াল জুড়ে। প্ৰথম প্ৰথম গুরবক্ত সিংয়ের পরিবার নিচেই গেস্টরুমে থাকত, ফাইফরমাশ খাটত বৌটা, ছেলেটাকে নিয়ে মেতে থাকতেন অংশুমান, গাড়ি করে স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা, বিকেলে পাৰ্কে ময়দানে ব্যাডমিন্টন, ফুটবল নিয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতেন তিনি। সন্দেহ হত গুরবক্তের। এত আদিখ্যেতা কেন বুড়োর।সুন্দরী বৌটাকে আবার মনে ধরে নি তো। হিরহির করে চুলের মুঠি ধরে ঘরে টেনে এনে দোর দিয়ে জম্মের পেটান পিটিয়ে সাধ মিটত লোকটার।
কি ছিলনা - ড্রাইভার, রাঁধুনী, নোকর,চাকর,মালী সব সকলেই চেয়ে থাকত মালিনীর সুন্দর মুখের দিকে। মালকিনের আশীৰ্বাদ একটু যদি পাওয়া যায়। তিন দিনের জ্বরে বিদায় নিলেন অকস্মাৎই।
একা হয়ে গেলেন জমিদার অংশুমান সাহা,ধীরে ধীরে চড়তে থাকল মেজাজ, বদ রাগ।বৌমনির মৃত্যুর পর ব্যবহার নিষ্ঠুর হলে পালাতে থাকল কাজের লোকজন।
'কি হল দাদু, কাগজ কলমটা তো-ল, সইটা লাগবে তো'
ভোর চারটের আজান শুরু হল। অদ্ভুত কালো মুখোশে ঢাকা লোকটাকে ঠাহর করতে পারেননি তখনও। কিছুই নেই হাতের কাছে, ফোনটা পর্যন্ত। বিস্ময়ে চেয়ে থাকেন ওর মুখের দিকে।
হঠাৎই আঁওয়াজ মাথায়, চোখে অন্ধকার নেমে আসে বনবন ঘুরে ওঠে মাথাটা,ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি।
শুতেও পারেননি তখনও বসেই ছিলেন, ভাবছিলেন বুঝি ভয় দেখাচ্ছে ছেলেটা এক্ষুনি বেড়িয়ে যাবে নিশ্চয়ই। ধপ্ করে শুয়ে গেলেন বিছানায়।
আবারও আঁওয়াজ। থরথর কেঁপে উঠল হাতের পায়ের আঙুলসহ সর্ব শরীরটা,নড়ে উঠল ঠোঁটজোড়া। আর একটা কোপ, এটাও মাথায় সরাসরি। নিস্তেজ হল সমস্ত জ্বালা,যন্ত্ৰণা সব। এরপর তিন প্যাঁচ ঘোরাতেই খুলে গেল সিন্দুকটা। সবকিছু গুছিয়ে বাক্সটি উল্টো করে মৃতের মাথার কাছে রাখা হল, মৃতের শরীর থেকে বয়ে যাওয়া রক্ত মুছিয়ে টানটান করে শুইয়ে গায়ে জড়িয়ে হালকা চাদরে ঢেকে ঢাউস ট্ৰাভেল ব্যাগ পিঠে নিয়ে আবছা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল মাথা মুখ ঢাকা ছায়া মূৰ্তিটি।
'কিহল মিঠু, এম আই রাইট'? হঠাৎ চমকে উঠল সকলেই যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল -
'সেন্ট পারসেন্ট স্যার' কিছুক্ষণ স্তব্ধ থেকে উত্তর দিল মিস মিঠু। থমথমে পরিবেশ সকলেই ভারাক্ৰান্ত।
এর বেশ কিছু বছর পর তালাবন্ধ ঐ ঘরে তালা ভেঙে জবর দখল করে কিছু দুষ্কৃতি,চোর, কেউ নিরাপদে গাঁজা,ভাঙ সেবনের উদ্দেশ্যে কেউ খারাপ কিছু কাজের উদ্দেশ্যে, কেউ পুলিশের চোখ এরিয়ে নিরাপদে জুয়ার ঠেক বসাতে।রাতভোর স্ফূৰ্তি করে কেউ কেটে পরত মধ্য রাতে, কেউ ঢুকত মধ্যরাতে মেয়েছেলে নিয়ে।চাবিটা কিন্তু থাকত পাড়ারই এক ঠেক কারোবারীর কাছে। গ্রামের মানুষের তৎপরতায় দীর্ঘ সময় পরে ধরা পরে পুরো গ্যাংটাই।
জায়গা জমি বাড়ি ঘর বিক্ৰী করে কেয়ারটেকার রাতারাতি পালায় গাঁও ছেড়ে। বৰ্তমানে সে দিল্লীর এক প্ৰাসাদোপম ভিলার মালিক। মাল্টিপ্লেক্সের একাধিক ব্যাবসার নাম মনোজ এন্ড কোম্পানী । সপ্তাহে দুই তিনবার দুবাই,সিঙ্গাপুর ইংল্যান্ডে যাতায়াত করতে হয় তাকে ব্যাবসার খাতিরে।
এক্ষণে প্ৰমাণাভাবে অট্টালিকাটি অধিগ্ৰহণ করে রাজ্য সরকার।
*********************************************************************************************

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন