কবিতাগুচ্ছ * বাবলু সরকার
পাবলিক
১.
ঠিক করেইছিলাম
আজ শুধু পথ হাঁটবো
পতঙ্গ ফড়িং ধরবো
দৈত্য শিকার করবো না
গাছের নিচে বিশ্রাম নেব না
গাছের একটা পাতাও ছিঁড়বো না
পারলাম আমি কেননা আজ
কোনো পাতা ছিঁড়িনি এমনকি
দৈত্যদের সাথে লড়াইও করিনি
আমার জন্যও না দৈত্যর জন্যও না
২.
দৈত্য যখন গাছের
ঘাড় মটকে ধরে
হাত খামছে ধরে
গাছ তখন এক
অনাবিল আনন্দে
নেচে ওঠে
গাছও পরিবর্তে
দৈত্যের বুক পেট সব
আদরে আদরে ভরিয়ে তোলে
ডাল নুইয়ে দৈত্যের হাড় মাথায়
পাতা বুলিয়ে দেয়
৩.
গাছের ইশারার ভাষার জন্য
দাঁড়িয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ
গাছ ডাকল না ইশারাও করলো না
জানতাম ডাকবে না
বাতাস ধুলো কিছুই দেবে না
গাছে বসবাসকারী এক দৈত্য এসে
আমার ঘাড় মটকালো তবুও গাছটা
এক পাও নড়ল না
আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে এল না
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার মৃত্যু দেখলো
৪.
বেছে বেছে
গাছের ছবিগুলো
ডিলিট করলাম আজ
কী হবে ওর স্মৃতি আঁকড়ে রেখে
ওতো এখন দৈত্যের রাজকীয় খাদ্য
অথচ গাছ যখন ছোটো গাছ ছিলো
তখন ও আমার খাদ্য আলো ছাড়া
কিছুই বুঝতে চাইতো না
তখন ওকে জল দিয়েছি আলো দিয়েছি
আহার দিয়েছি অগ্নাশয় ছিঁড়ে নাড়ি দিয়েছি
কিন্তু এখন আর নয়

৫.
ওর এখন কতো দৈত্য আসছে
আজ আসছে কাল আসছে পরশু আসছে
আজ যেমন ওর কাছের জঙ্গল থেকে
এক দৈত্য হালুম করেছিল
গাছও খুশি তাড়াতাড়ি করে ডালপালা সরিয়ে
খেতে দিয়েছিল তাকে নিজের হৃৎপিণ্ডটাই বের করে
সেয়ানা দৈত্য ওকে রোজই একটু একটু করে খাচ্ছে
ওর হাত ওর বুক ওর নাভি হাড়গোড় চর্বি মাংস সব
কিন্তু গাছটি এ-র প্রকৃত রহস্যই বুঝতে পারছে না
বুঝতে পারছে না গাছটি ক্রমশ দৈত্যের দ্বারা
নিঃস্ব নিঃস্ব নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে
ছাল বাকল ডাল গুড়ি হীন হয়ে পড়ছে
৬.
সম্পার দৈত্যের সঙ্গে গাছের দৈত্যের অনেক অমিল
সম্পার দৈত্যরা আদর না পেলে সব লণ্ডভণ্ড করত
গলা তুলে কান তুলে বারবার ইশারা করতো
গলার ঘন্টার শব্দ না পেলে বলতো আজ আমাকে
ওই নাটক টা পাঠ করে শুনিয়ে যাবেন কিন্তু
আমি তখন ওকে শম্ভু মিত্তির শোনাতাম তৃপ্তি মিত্তির
শোনাতাম আর ও নাটক শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে
পড়তো আমার কোলে মাথা রেখে
আর আমি শম্ভু মিত্র অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
আওড়াতে আওড়াতে স্টেশন পানে ছুটতাম
ঝিকঝিক ঝিকঝিক দৈত্য ইঞ্জিনের ডাকে লাস্ট প্যাসেঞ্জারে
৭.
আমি বুঝিনি সত্যিই বুঝিনি
দৈত্যগাছটা আর আমার দেখভাল
পছন্দ করছে না
যেদিন যখন থেকে বুঝতে পারলাম
সেদিন থেকেই আমি গাছের দায়িত্ব
দৈত্যের উপরেই ছেড়ে দিলাম
যুবা দাঁত নখ বের করা দৈত্য
সূর্যের প্রখর তেজের মতো শক্তিতে
গাছটি কে ভালোই চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে
কী দরকার আমার সামান্য আলো থেকে
সামান্য আহার থেকে ওকে আলো দেওয়ার
আহার দেওয়ার
৮.
গাছটাকে আজ মারিনি
দৈত্যটাকেও না
আদর তাও করিনি
গাছও আমায় বলেনি
কিগো পথিক তুমি আজ
আমায় না চিনেই পথ চিনে নিলে
******************************************************************************************




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন