বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

গল্প * প্রদীপ কুমার দে





এমিলির বিশ্বাস

প্রদীপ কুমার দে


শনিবার এখানে ছুটির দিন। অধিকাংশ অফিস বন্ধ থাকে। রাজপুত্র আর রাজকুমারীরা ঘোরাঘুরি করে আর প্রকাশ্যে মাঠে ঘাটে বসে একে অন্যের কাঁধে মাথা রেখে বিশ্রামের দিন অতিবাহিত করে।

আর এই বিশ্রামের জন্য বে;শ ভাল মজুরি দিতে হয় এমিলিকে।

লন্ডন থেকে বেঙ্গালুরু এসেছিল সে সফটওয়্যার ট্রেনিং কোর্স করতে। কোর্স শেষে প্লেসমেন্ট এর বাহানা ছিল। ক্লাসেই পরিচয় হয় মান্টুর সাথে।  মান্টু হল বাবা মায়ের অবাধ্য সন্তান। পলিটিক্স করে, ঝামেলা বাঁধাতে ওস্তাদ। নিজের বিষয়ে খুব সজাগ আদায় করে নিতে জানে। এমিলিকে দেখেই তার মনে লাগে।

এনিলিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এমিলি এত কিছু বোঝে না। মান্টুর উদ্দাম উচ্ছ্বাস দেখে। মান্টুর লোভনীয় ফাঁদে পা দিয়ে ফেলে।

মান্টু শয়তান। হাজারো মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখে। ধরে,কাজ সারে ছেড়ে দেয়। ঘুড়ি যেমন করে ওড়ায় তেমন করে সুতা ছেড়ে ওড়ায় তারপর সুতা টেনে নামায় অথবা সুতা ছিঁড়ে ভোকাট্টা করে উড়িয়ে দেয়।

মেয়েরা মান্টুর বাহ্যিক রূপ আর পয়সায় মাতে। এমিলি বহিরাগত। সে এখানকার হালচাল বোঝে না। মান্টু কোর্স চলাকালীন ভদ্র ব্যবহারে এমিলির মন জয় করে। এমিলি খুব খুশী। তার কিশোরী মনে প্রেমের বিশাল প্রভাব পড়ে। 

কোর্স শেষে মান্টু তার পরিবারের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে একটা চাকরি জুটিয়ে নেয়। এমিলি এখনই চাকরি করতে রাজী নয়। সে চায় একবার লন্ডনে ফিরে যেতে। পাকা ডিসিশন পরে নিতে চায়। কাজ সে করবে তবে তা ইন্ডিয়ায় না লন্ডনে তা বলা বড় শক্ত।

এমিলি মান্টুকে জানায়,

--  এখনি চাকরি নিও না আমার সাথে চল আমাদের বাড়ি। সব জানাই তারপর না হোক চিন্তা কর।

মান্টু চালাক, তার মাথায় অনু মজা। এমিলিকে বোকা পেয়ে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হয়ে গেছে। এখন নতুন মুরগি ধরেছে। তাই এমিলিকে বোঝায়,

--  সে কি করে হয়। তারচেয়ে তুমি লন্ডন ঘুরে এস। বাপ মাকে জানাও। আমি অপেক্ষা করবো। ফিরে এলে দুজনায় রেজেষ্টি করে নেব। নতুন চাকরি ছেড়ে লাভ নেই।

এমিলি কাঁদে। অনেক বোঝায়। হার মানে। উপরন্তু মান্টু একপ্রকার ভুলভাল বুঝিয়ে লন্ডনে ফেরত পাঠায়।

মান্টু বেঙ্গালুরু ছাড়ে। সঙ্গিনীর অভাব নেই। বাপের টাকায় অন্যত্র পাড়ি দেয়। বাপকে মানে না কিন্তু তার অর্থেই রোয়াব দেখায়। 

অন্যদিকে এমিলি লন্ডন ফিরে দেখে ইন্টারন্যাশনাল কলে মান্টু বেপাত্তা। বারাবার মান্টুকে খোঁজে, নিরাশ হয়ে ভয় পেয়ে যায়। ভয় পায় মান্তুর বিপদের আশংকায়। ছটফট করে তা ভালোবাসা। কিশোরী মনের মতই তার এই ছটফটে প্রেম।

বাবা মা কে সিব জানিয়ে ফিরে আসে বেঙ্গালুরু। পরিচিত স্থল, কোম্পানি , বন্ধু বান্ধব সব খুঁজে ফেরে কিন্তু মান্টু নেই। সে যেন হাওয়ায় হারিয়ে গেল। উবে গেল। তবুও বিশ্বাস রাখে, হন্যে হয়ে খোঁজ চালায় অবিরত দিনরাত!

আজও সেই সদ্য যুবতী এমিলি বসে অপেক্ষায় থাকে তার মলিন বেশে, উস্কখুস্ক চুলে, অসহায় অবস্থায় নির্লিপ্ততার দৃষ্টি মেলে রাখে দৃশ্যপটে যদি পার্কের গেটে মান্টুর পদচারণা দেখতে পায়!

বড় করুণ সে দৃশ্য!

আজ শনিবার। ছুটির দিন। বিকাল থেকেই পার্কে অবস্থানরত সব জোড়ায় জোড়ায় ঘনিষ্ঠ প্রেমিক প্রেমিকারা। 

এমিলি ই শুধু একা!

এ দৃশ্য বড় অসহনীয় এবং বেদনাদায়ক।

পরিচিত জনের থেকেই সব শোনা।



***********************************************************************************************************



প্রদীপ কুমার দে 

লেখক  নেশায়। পেশা ছিল হিসেবনিকেশ।  বয়স -৬২ । কলকাতা নিবাসী। বিবাহিত।
নিজের লেখা কয়েকটি বই আছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন