কবিতাগুচ্ছ * প্রশান্ত মন্ডল
শিকড়
আর কতটা মাটির গভীরে ঢুকলে
প্রয়োজনীয় তরলের সন্ধান পাব!
এইসব প্রশ্নে আর চুলছেড়া করি না এখন।
নরম মাটি পেরিয়ে শক্ত মাটি এলে
আগে থেকে তার পর্যবেক্ষণ সেরে ফেলি
অপেক্ষা করি সে ভেদাভেদ ভেঙ্গে যাওয়া পর্যন্ত
এরপর ঢুকে যেতে থাকি গভীরে
আরও গভীরে....
*অপ্রয়োজনীয় পাখাদন্ড*
সবসময় বাতাসের প্রয়োজন পরে না
এই যেমন বেপরোয়া ঝুলে রয়েছে ঘরের সিলিং-ফ্যান
পাখাহীন হেমন্তে ঘুমের ঘাটতি হয় না কোয়ার্টার-ঘরে
নিজ হাতে খুলে ফেললাম দন্ড তিনটি
এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় বস্তুদেরই
বছর কয়েক ধরে একটা একটা করে সরিয়ে ফেলছি
বিশেষ প্রয়োজনীয় বস্তুগুলোকেই কাছাকাছি রাখছি
প্রয়োজনে শোবার আগে
বালিশের নীচে
জীবন আসলে নিজে থেকেই ব্যালেন্স করতে শিখে যাচ্ছে..
ধানক্ষেত
কোনও কোনও দিন আমার ঘুমের ভেতর, স্বপ্নে
মাইলের পর মাইল ধানক্ষেত ভেসে ওঠে
যেগুলো একদিন আমার বাবার স্বপ্ন ছিল
এখন সেসব অতীত।
এখন আর বাবা নেই, জমি নেই, নদী নেই..
আছে কেবল এক ভিটেমাটি
ধানক্ষেত থেকে অনেক দূরে
শৈশবের সেই রাখাল ছেলেটি আজ বড়ো হয়েছে
গ্রাম হয়েছে শহর
ভেতরে ভেতরে স্বপ্নগুলোও কেমন বদলে বদলে গ্যাছে
ধানক্ষেতের ভেতর আলপথের মত করে।
লজ্জাবতী মেয়ে
মেয়েটি তখন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী
আমি দেখতাম বয়সের সাথে সাথে ও কেমন
বুক আলো করে এসে বসত আমার মুখোমুখি
আমি কিছু বলবার মত ভাষা খুঁজে পেতাম না
শুধু মনে হত কোনো অতল সমুদ্রে ডুবতে বসেছি..
মাঝে মাঝে ওর হরকতে অসন্ত্তষ্ট হয়ে বকাঝকা করলেও
চোখটি তুলে পর্যন্ত তাঁকাত না একবার
আমি তখনও বুঝতে পারিনি এই নীরবতাগুলোর আভিধানিক অর্থ কি?
কিছুক্ষণ শুধু চেয়ে থেকে পাঠ করে নিতে চেয়েছিলাম
ঐ লাল লাল দুটো গালের অন্তর্নিহিত কোমল সত্যটুকু....
হাঁটা-চলা
দূরে কোথাও হেঁটে আসতে ইচ্ছে করে
যেখানে কোনো এক পুকুরে
সাদা বর্ণের পদ্মরা সব মাথা তুলে শোভা ছড়াচ্ছে
পড়ে থাকা দানাশস্যে পায়রার দল বসে
গোমড়াচ্ছে, দানা খাচ্ছে।
এই যে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে এতপথ চলছি
অথচ দেখা হল না কিছুই
অন্তত দু-দন্ড দাঁড়িয়ে পৃথিবীর মুখ দেখে নিই
নইলে শুধু হেঁটেই যেতে হবে
চলতে শেখা হবে না আর...
মৃত্যুকে
মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাঁটছি, এটা নিশ্চিত।
কিন্তু সাথে করে কি নিয়ে চলেছি..
দু-একখানা কাব্যগ্রন্থ আর আত্মজীবনী!
এই দিয়ে কি একটা জীবনের মূল্য চুকে যাবে?
যেভাবে ফেলিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছি সময়
তাদের চুলের মুঠি করে কি বেঁধে ফেলা যায় না!
নইলে শেষসাক্ষাতে মৃত্যুকে বলবটা কী!?
*******************************************************************************************************
পিতা- লক্ষীকান্ত মন্ডল ও মাতা- কিরণবালা মন্ডল। ভারত, পশ্চিমবঙ্গ তথা শিলিগুড়ি শহরের একটি ছোট্ট গ্রাম অম্বিকানগরে জন্মগ্রহণ এবং স্থায়ী বাসস্থান। জন্মের কিছুকাল পরই মাতৃবিয়োগ ঘটে এবং ধীরে ধীরে অভাব-অন্টনের মধ্যে এগিয়ে চলার পথ তথা জীবন-বৃত্তান্ত। লেখার আগ্রহ তথা গুণী ও শ্রদ্ধেয় মানবদের জীবনী পড়বার ঝোঁক শৈশব থেকেই। প্রথম লেখার হাতেখড়ি বিদ্যালয় জীবনে এক তরুণ কবি তথা স্কুল শিক্ষককে দেখে। প্রথম আত্মপ্রকাশ "মুখচ্ছদ্ম" নামক আঞ্চলিক পত্রিকার দ্বারা। এরপর "শুকতারা" পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ। ধীরে ধীরে সময়ের হাত ধরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, যৌথ সংকলন, ই-সংকলন, ই-ম্যাগাজিন এ লেখা প্রকাশ।
লেখালেখি ছাড়াও পাশাপাশি চলতে থাকে শিল্প-কর্ম, সঙ্গীত চর্চা, নাটক-থিয়েটার, অভিনয় চর্চা এবং সমাজসেবামূলক কার্যকলাপও চলতে থাকে সুযোগ পেলে। আর এই পরিমিত জীবনের যা কিছু দেনা-পাওনার গল্প তা স্বর্গীয় পিতা-মাতার প্রতিই উৎসর্গিত।






কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন