বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

আশুতোষ বিশ্বাস

 




আশুতোষ বিশ্বাস * দু'টি 

কবিতা 








গুড সামারিটান

শহর ঘুমিয়ে পড়েছে— এখন আমি এই শহরের 

অখ্যাত রাজাধিরাজ

রাস্তার মোড়ে টাইমকলের খোলা মুখগুলো বন্ধ করে 

দেবার সময় এখন আমার

যদিও এই কাজে কেউ আমাকে নিয়োগ করেনি, 

আমার স্ব-প্রণোদিত দায়ভার নিয়ে রাতের অপেক্ষা 

করি

এই শহরের আমিই এক পাগল সামারিটান

ম্যানহোলের নড়বড়ে ঢাকনাগুলো দেখে রাখার এই 

তো সময়

টহলদারি পুলিশ আছে শহরের আনাচে কানাচে— 

বার, ক্যাবারের কাছাকাছি

বেহেড মাতালের বুক-পকেটে লুকোনো আধখাওয়া 

বিড়ির ভাগ বুঝে নিতে তাদের আগ্রহ

আমাকেও নজরে রেখেছে, তবে ওরা যে লেন, বাই 

লেন ছেড়ে যায়

আমি তাদের পিছু পিছু সতর্ক প্রহরায় থাকি

যাক, তবে এই মুহুর্তে আমার সাম্রাজ্যের চারিদিক 

সুরক্ষিত

কাল সকালে টাইমকলে জল এলে একফোঁটা জলও 

অপচয় হবে না কথা দিলাম

আমার সহ নাগরিক, আমার প্রিয় নাগরিক

 

সময় এখন— চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কাঁচা কিছু 

খিস্তি ভাসিয়ে দেবার   

আমার খিস্তিবাণে চমকে উঠুক গজদন্তমিনারে 

পরকীয়া বিলাসী ঢুলু ঢুলু চোখ

জীবনের কোন অবশেষ না রেখে মহোৎসবে মশগুল 

ব্যাঙাচি প্রবর    

একদিন কোন এক অসতর্ক বাতাস এসে খিস্তি-

প্রণেতাকে মনে করিয়ে দেবে

সেদিন চোখে ঘুম আসবে না— বিছানা ডাকবে আয় 

আয়

বাতাস তেমনই বয়ে যাবে, নদীটিও ভুলবে না, চড়াই 

উৎরাইয়ে কোন সুর তাকে

ভাজতে হবে। কোন সুরে দামাল শিশু ঘুমিয়ে পড়বে 

কালকে জেগে ওঠার জীবনীশক্তি নিয়ে   

 











ষষ্ঠীকাকুর অশত্থগাছ

শুকনো পাটকাঠির মাথায় কাঁঠালের আঠা লাগিয়ে 

ফড়িঙের পিছু ধাওয়া করা দুপুরগুলো

নুপুর বাজিয়ে চলে গেছে বহুদিন, আইসিএসসি বা 

সিবিএসসি মিডিয়ামের তুখোড় ছেলেমেয়েদের

হাতে অভিধান দাও, অভিধানের কোন পাতায় ফড়িং 

আছে টিকমার্ক দিয়ে দেখিয়ে না দিলে অসুবিধে 

আছে    

সেই নুপুরী এখন কোন পাড়াগাঁর মজুমদারের 

দাওয়ায় বসে পানের বাটায় আঙুল ডুবিয়ে

হাতড়ে বেড়াচ্ছে দুই এক কণা ছেঁচানো পান সুপুরির 

অবশেষ

ঠা ঠা রোদ্দুরের ধোঁয়াওঠা পথ ধরে মাটির কলসী 

কাঁখে মা শহরের টাইমকলে জল আনতে গিয়ে

এখনও ফেরেনি ঘরে

ধু ধু গ্রাম ছাড়া পথের ওপারে কেউ যেন আসছে 

দেখি— এখনও সে এসে বসেনি চৌমাথার ষষ্ঠীকাকুর

হাতে রোপন করা অশত্থ গাছের ছায়ায়, আমাদের 

গ্রামের চৌকিদার ছিলেন ষষ্ঠীকাকু

তাঁর সাথে দেখা হলেই— বুকে জড়িয়ে ধরতেন, ‘বাবু 

কলকাতায় পড়িস’, ‘তুই আমাদের গ্রামের গর্ব’, 

সুসন্তান

কত কী যে বলতেন ...  

 

ষষ্ঠী কাকু আছে কী নেই— গুগল স্যার তার খবর 

রাখেনি, তবে তাঁর অশত্থগাছের হদিস গুগল ম্যাপ 

দিচ্ছে  

 

অজগ্রাম আর গ্রাম নেই, রিফিউজি পাড়ার

জিওলগাছের রক্ষাকালির বেদিতে সকাল-সন্ধে 

প্রদীপ দিত

ঠাকুরদাসের বছর আটের মা মরা মেয়েটি, মাটির

প্রদীপ হাতে কার ঘরের বংশের প্রদীপ জ্বালতে চলে

গেছে

অন্ধকারে ঢাক বাজেনি, কাঁসর বাজেনি, কেউ

জানেনা—আসল খবর

ষষ্ঠীকাকুর অশত্থগাছের ঝুপসি অন্ধকারের সেই

সাকিন-বিহীন অমাবস্যার জোনাকিরা জানে !

তারা সাক্ষ্য দিতে পারে না, আর যারা সাক্ষ্য দিতে

পারে জবান-বান, তারা চিহ্নিত নন।    

               



 


 

 

 



***********************************************************************************



আশুতোষ বিশ্বাস

জন্ম ২১ ডিসেম্বর. ১৯৭২, মুর্শিদাবাদের মানিকচক কলোনি গ্রামে। বর্তমানে আলিপুরদুয়ার, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শামুকতলা সিধু কানহু কলেজে অধ্যক্ষের পদে কর্মরত। গবেষণাধর্মী প্রবন্ধগ্রন্থ লেখার পাশাপাশি কবিতারও একনিষ্ঠ সাধক। তাঁর ৮টি কবিতার বই ও ৪টি প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা 'তারারা' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন