কবিতাগুচ্ছ * অমিতাভ সরকার
জীবনের শেষের দেখা
১.
তোমার না দেখা পেয়ে
একা একা কেঁদে ফিরে যায়।
তুমি চলে গেছো।
অসুখ কাড়ছে সব
সুখদুখে গড়া আস্তানা।
একা একা পড়ে থাকা
ধরণীর ধনভরা পথে, মাঝখানে।
নিদারুণ ক্লেশে তুমি
মানুষ করেছ যাকে...
২.
পুলিশের ব্যারিকেড
চোখে জল, বাঁধা না মানে।
দু:খের ভিজে মাটি
ছায়া নেই পায়ের তলায়।
মা'র কাছে যেতে চায়
ব্যারিকেডে তাও বাঁধা
দূরে থাকে, সরে থাকে।
জেগেও যে সব ক্যামেরা!
যার আলো নিভে গেল
তারই ছবি আলো পেয়ে
কথা বলে, কেঁদে কেঁদে চায়।
৩.
ফুরালো কাজের পালা।
মৃতদেহ পেতে চায়
সেই ছোঁয়াটুকু,
যে ছোঁয়া আগলে রাখা
মমতায় মেখে দিত
দুধের সন্তানে।
না জানি কী শ্রমে ভরা
কত সয়ে ভেঙে গড়া
ভরপুর তার সংসার।
৪.
এই তো জীবন, আজ
ঠেলাগাড়ি নিয়ে চলে যায়।
ভালোবাসা দোয়া করা
দুঃখেরই এ জীবনে
পরশ আর কিছুই না পায়।
অদেখাই থেকে গেল
জীবনেরই শেষের বেলা।
৫.
যাত্রা অন্ত পথে।
সব আছে, কিছু নেই।
একে একে নিভে যায়
কত ঘরে জ্বলে থাকা
প্রদীপের একটু আলো।
কে কার খবর রাখে!
৬.
হাত, মুখ সব ঢাকা।
কিন্তু মনটা ফাঁকা,
যে ফাঁক আর এ জীবনে
মিটবে কি আর কোনোদিন!
ডাক্তার রোগী নার্স
একই শোকে এক ভয়ে
পৃথিবীর ঢালু পথে
না সরে না ভেঙে গিয়ে
নিরলস কাজ করে যায়।
সেও পথে সরে থাকে,
পেতে চায় জীবনের শেষ দেখাটুকু।
তরণী তীরের দেশ
আকাশের শেষ ঠিকানায়...
জীবননদীর তটে অবেলায়
কালবেলা নামে।
**********************************************************************************************
অমিতাভ সরকার
অমিতাভ সরকার স্কুলের শিক্ষক, লেখালেখি করেন। দেশবিদেশের বিভিন্ন ব্লগ, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্রে ওর লেখা বেরিয়েছে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, 'অচেনা সময়ের কাব্য', 'পথ', 'পথ চলা', 'ডাঙা', 'অনুবর্তন'। কবির প্রাণের বিষয় রবীন্দ্রসঙ্গীত।





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন