বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * দীপংকর রায়




পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে

(উৎসর্গ:দীপ্তিশিখা দাস )

কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায় 

 


১৮৯.


আলোড়ন গভীর হলে 

আনুষ্ঠানিকতায় যায় না ।

রোমন্থনে  পৌঁছোয় না 

শরীরের বর্জ্য ;


সীমানা তোলে 

যদিও শরীর , 

তৃপ্তির পর্যায়ক্রমিক ওঠাপড়ায় 

মুড়িয়ে ভাঙ্গে ;

তাও পারে না ,এ যেন এমনই এক বহতা 

ঠিকঠাক কোলে তুলে নেবার আগেই 

মোহ-ফাঁদ ভুল করে 

অনেক অদেখা অজানা ----- 

সুখ  অসুখ 

চিনতে দেয় না 

কোন দেহে লীন হলে 

ঐশ্বরিক প্রশান্তিতে বুঁজে আসে 

সেই দু-চোখ —-


১৯০

লেখার থাকলেও 

লিখলাম না ।

বলার থাকলেও 

বললাম না ।


বাতাসেরা  দাপাতে দাপাতে 

ফিরে গ্যালো ঘরে 

ঘর বন্ধ হোল ।

ঘর খুলে গ্যালো !

বাতাসে ধুলোয় 

এমন  আসাযাওয়া জুড়ে গ্যালো , 

কোনো পরিচয় নেই তার ৷

সে যেন অনুচ্চারিত ধুকপুক ---- 

আজ কি ,বাজারে দেওয়া-নেওয়া 

হয়েছে মানুষের মুখ ?

আমি যেন কতকাল 

মানুষের দরদাম উপভোগ করিনি ৷

খালি হাতে   ঘুরে বেড়ালাম 

ধুলো মেখে , বাতাস মেখে .....


ধুলোরাই অনেক অভিব্যক্তি

ঠিকঠাক বানানে 

বর্ণিত করতে চেষ্টা করলো 

কিছুক্ষণ দেখলাম  —-



১৯১.


বারবার ধরা দিই 

অথচ ধরা পড়ি না ৷


ধরা-ছোঁয়ার মাঝে 

যে সত্য থাকে  

তাকে ছুঁতে চায় না 

কেউ !


কারণ , ধরা-ছোঁয়ার ভেতরেই 

এমনই এক অতৃপ্তি 

অস্থির ও অসত্য থাকে ;


হয়তো বা সেটাই সত্য ,

যা  ছুঁয়ে আছো 

চোখের অনেক নিচেয় ৷


সেখান দিয়েই বয়ে গ্যাছে 

অনেক শ্বাপদ সংকুল জঙ্গলের খাঁড়িপথ.....


১৯২.

হেঁটে যাচ্ছিলাম .....

হাওয়ায় মুখ ফেরাতে‌ 

উল্টে গ্যালো ঘট ৷


ঘটের ভেতর  ফণা তুলে উঠে দাঁড়ালো বিষ , নাকি 

সে শুধুই আম্রপল্লব ?


ফুল ছিলো কি ?

চেয়ে দেখলাম , শুধুই তিথি ডাক  ছড়িয়ে গ্যালো

রক্তাক্ত জোস্নায়......


কারো ভেতরে কেউ

দাঁড়ালো না ঘুরে ৷


যে আবরণে 

রোজ  আপন আপন লজ্জা সামলায় তারা

এক হাত ঘুরে ;


অথচ চায়  , চায় তার ঘট জুড়ে 

অন্তত রাখুক কেউ একটি বিশুদ্ধ আম্রপল্লব ,  

উৎসর্গে আর একটি ফুল , অন্তত একবার —


দেখি বলেই 

দূর ছায়ায় মুড়িয়ে যাই ৷


উলুধ্বনিতে 

আড়াল করি না ; বরঞ্চ 

রোজ একবার করে রাখি ঠোঁট , অবহেলিত যে জঙ্গলে 

সে স্পর্শ পেলে আর লতা হয়ে থাকতে পারে না পাতায় 

ফুল হয়ে যায় কুঁকড়ে  ; ----- 


আহা ,  সে যে কী বিষাদ 


যদি চোখ মেলে দেখতে ,তাহলে আর ঘটের মোহ

আহ্লাদে থাকতে পারত না 

অমন করে ;


উৎসর্গে 

সেই কামিনী ফোটা জোস্নায় 

চলে আসতে ভাসতে ভাসতে ......


যার পর আর কোথাও

ঘটের দূরত্ব থাকতো না ।


১৯৩

কী কী অসহায়তা 

জানতে চাই -----

দীনতা কী কী

প্রতিবন্ধকতাই বা কী 


আমাকে দাও ।

নিয়ে যাবো সেইখানে 

কেউ একজন আছে যেখানে , প্রকৃত আনন্দের কাছে 

পৌঁছে দেবে বলেছে ।

যেতে চেয়েছিলে কোন শৈশবে ?

শুনেছিলে সেই দুর্বোধ্য স্বর ----- 


জানো কি ?

মনে করে দেখো 

তোমার মন হয়েছিল যেদিন উদাস 

সেই গান গেয়ে উঠেছিলে অজান্তে ------ 


সে সব  ভুলে গেলেও 

ভুলতে পারিনি আমি।


কত দূর থেকে  

কানে পৌঁছেছিল  আমাদের ?


মনে রাখতে পারোনি । 

শুনেছি জন্মের  চিৎকার ---- তুমি হয়ে উঠবার ব্রত :

তাই এসেছি , যাবে সেখানে ? 


আর সকলের মধ্যে 

লীন হবে বলেই 

ডেকে চলেছো , সেই দুর্বোধ্য স্বরে










১৯৪.

কেন যে বেঁচে ওঠে মরা খোলস ...?

হাওয়ায় ওড়ে.....।

ডানায়  কুয়াশা তাদের , পায়ে  এত ঢেউ ,

গুনতে পারি না 


জন্ম-মৃত্যু ঘিরে  এই নৃত্য ....

আমাকে ঘিরে 

কখনো সে মহা শঙ্খের মুখ ----- 

কখনো বা ঝিনুক সাদৃশ্য 

জল-তলের ঢেউ .....;


চেয়ে থাকি অসীমে ----

নিতান্ত গভীর মুখটির পানে !

কত পাকে ছাড়াই যে 

জন্মদাগ !


সে কথা যদি ভাবত একবার কেউ ,

বুঝতে পারত 

সে শুধু সে নয় ,

এমনই এক বিন্দুর মহাপরিক্রমণ….. ;


কত বার আসে যায় !

জানি না তার প্রকৃতি 

তাকে ঘিরেই গড়ি , সেই পলাশরূপ 

গভীর কালোর গোড়ায় ;


সে যে কেমন বসন্ত 

বেজে উঠলো আজ ….. ।


১৯৫

বয়স কত হোল , কত বছর তোমার মুখের দিকে চেয়ে আছে 

বলো তো আমার মন-কেমন ?

কত বছর দক্ষিণ হাওয়ায় উড়ে আসছো  

বুকের ভেতর শঙ্খ-মুখ ভেঙে .... ?


চাঁদকে চাঁদ না বলে 

তার ছায়ায় 

রাতের নদীতে ঢেউ মাখছি , সে কথা যদি জানতে 

মরণের চিৎকার 

শুনতে হোত না এত ৷ 

শুধুই ছবি হয়ে তাকিয়ে আছো ?

জ্যোৎস্না ভাসিয়ে চলেছো আমায় 

নাকি কাটাকাটি অঙ্ক শুধুই , অঙ্ক…

বলো তো আমায় ?


১৯৬

 যে দিকে 

 চেয়ে থাকি , সে তো 

 তোমার না !


 সে  তাঁর -----

 কত অদেখা লুকিয়ে যে ,

 সে তো  জানো না ৷

তুমিই  সাজাও তোমায় ৷

 বার বার ফিরে দেখ ,

 যে দেখায় চেয়ে থাকা আছে .....;

দেখি বলেই 

হাসিমুখ পায় 

এই ফেরা ?


নয়ণজুলীতে 

ওঠে ঢেউ.....

লুটোপুটি খায় হাওয়ারা

তোমার বুকের উপর ।


১৯৭.

সিগারেট জ্বলে ওঠে

দু-আঙুলের ফাঁকে ,আর 

একটা একটা করে খসে যায় বোঁটা ।


চেয়ে থাকি 

আর একটির দিকে ।


দুলে ওঠা

শুরু হতে না হতেই 

ধরে নেওয়া , না হলে 

যা কিছু ;----


আড়মোড় ভাঙে যেভাবে সম্পূর্ণতা 

চোখ ফেরাতেই হারায় সেভাবে ….


কেউ জানে না

গোপন কর্মটি , 

কেউ ভাবে না কীভাবে সে ফিরতে না ফিরতেই 

হারিয়ে যায়

এই দুই আঙুলে ৷


১৯৮.

আমার ধর্মের কথা  সকলকে বলে দেবো ।

কর্মের কথাও।

বলবো না শুধু 

যা আমাকে নীরবতায় 

ঢেকে দেয় ।


অস্বীকার করতে বাধ্য করে ,

প্রকৃত পরিচয় 


এসো , আজ আমার অভীষ্ট বলি :

কান পাত , আমি আমার ধর্ম-কর্ম-সাধনা 

যার যার কাছে গচ্ছিত রাখি 

সে কে জানো ?


অভিমান ।

মানুষ হতে হতে

একবার যদি দাঁড়াও , বুঝবে 

কী নিঃশব্দ  

লালন করে চলেছি  

ভালো করে দেখতে পাবো বলে ৷


১৯৯.

কতবার ভেবেছি 

এই বসন্তেই লিখবো ,

ডাকবাক্সের কাছে যেয়েও 

ফিরে এসেছি।

হই হই করে তাড়িয়ে দিল ৷


অন্তর্জালে ফিরে গেল

সকল বয়ান আমাদের......

কোথায় পাঠাবো 

পাতা ঝরার বেদনা-বাতাস...... ?


ধুলোরাও মুখ ফিরিয়ে নিল 

ক্লান্ত পায়ের পাতায় দুহাত ছুঁইয়ে  ।


তাকে লেখা শেষ চিঠির অক্ষরগুলি 

অবশেষে মাথার বালিশের নিচেয় 

গুমড়ে ছড়িয়ে পড়ল  ।


সান্ধ্য আকাশ 

মাথার উপরে 

কালপুরুষের তরবারি 

ঘোরাতে থাকলো ! 













*************************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন