পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে
(উৎসর্গ:দীপ্তিশিখা দাস )
কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায়
১৮৯.
আলোড়ন গভীর হলে
আনুষ্ঠানিকতায় যায় না ।
রোমন্থনে পৌঁছোয় না
শরীরের বর্জ্য ;
সীমানা তোলে
যদিও শরীর ,
তৃপ্তির পর্যায়ক্রমিক ওঠাপড়ায়
মুড়িয়ে ভাঙ্গে ;
তাও পারে না ,এ যেন এমনই এক বহতা
ঠিকঠাক কোলে তুলে নেবার আগেই
মোহ-ফাঁদ ভুল করে
অনেক অদেখা অজানা -----
সুখ অসুখ
চিনতে দেয় না
কোন দেহে লীন হলে
ঐশ্বরিক প্রশান্তিতে বুঁজে আসে
সেই দু-চোখ —-
১৯০
লেখার থাকলেও
লিখলাম না ।
বলার থাকলেও
বললাম না ।
বাতাসেরা দাপাতে দাপাতে
ফিরে গ্যালো ঘরে
ঘর বন্ধ হোল ।
ঘর খুলে গ্যালো !
বাতাসে ধুলোয়
এমন আসাযাওয়া জুড়ে গ্যালো ,
কোনো পরিচয় নেই তার ৷
সে যেন অনুচ্চারিত ধুকপুক ----
আজ কি ,বাজারে দেওয়া-নেওয়া
হয়েছে মানুষের মুখ ?
আমি যেন কতকাল
মানুষের দরদাম উপভোগ করিনি ৷
খালি হাতে ঘুরে বেড়ালাম
ধুলো মেখে , বাতাস মেখে .....
ধুলোরাই অনেক অভিব্যক্তি
ঠিকঠাক বানানে
বর্ণিত করতে চেষ্টা করলো
কিছুক্ষণ দেখলাম —-
১৯১.
বারবার ধরা দিই
অথচ ধরা পড়ি না ৷
ধরা-ছোঁয়ার মাঝে
যে সত্য থাকে
তাকে ছুঁতে চায় না
কেউ !
কারণ , ধরা-ছোঁয়ার ভেতরেই
এমনই এক অতৃপ্তি
অস্থির ও অসত্য থাকে ;
হয়তো বা সেটাই সত্য ,
যা ছুঁয়ে আছো
চোখের অনেক নিচেয় ৷
সেখান দিয়েই বয়ে গ্যাছে
অনেক শ্বাপদ সংকুল জঙ্গলের খাঁড়িপথ.....
১৯২.
হেঁটে যাচ্ছিলাম .....
হাওয়ায় মুখ ফেরাতে
উল্টে গ্যালো ঘট ৷
ঘটের ভেতর ফণা তুলে উঠে দাঁড়ালো বিষ , নাকি
সে শুধুই আম্রপল্লব ?
ফুল ছিলো কি ?
চেয়ে দেখলাম , শুধুই তিথি ডাক ছড়িয়ে গ্যালো
রক্তাক্ত জোস্নায়......
কারো ভেতরে কেউ
দাঁড়ালো না ঘুরে ৷
যে আবরণে
রোজ আপন আপন লজ্জা সামলায় তারা
এক হাত ঘুরে ;
অথচ চায় , চায় তার ঘট জুড়ে
অন্তত রাখুক কেউ একটি বিশুদ্ধ আম্রপল্লব ,
উৎসর্গে আর একটি ফুল , অন্তত একবার —
দেখি বলেই
দূর ছায়ায় মুড়িয়ে যাই ৷
উলুধ্বনিতে
আড়াল করি না ; বরঞ্চ
রোজ একবার করে রাখি ঠোঁট , অবহেলিত যে জঙ্গলে
সে স্পর্শ পেলে আর লতা হয়ে থাকতে পারে না পাতায়
ফুল হয়ে যায় কুঁকড়ে ; -----
আহা , সে যে কী বিষাদ
যদি চোখ মেলে দেখতে ,তাহলে আর ঘটের মোহ
আহ্লাদে থাকতে পারত না
অমন করে ;
উৎসর্গে
সেই কামিনী ফোটা জোস্নায়
চলে আসতে ভাসতে ভাসতে ......
যার পর আর কোথাও
ঘটের দূরত্ব থাকতো না ।
১৯৩
কী কী অসহায়তা
জানতে চাই -----
দীনতা কী কী
প্রতিবন্ধকতাই বা কী
আমাকে দাও ।
নিয়ে যাবো সেইখানে
কেউ একজন আছে যেখানে , প্রকৃত আনন্দের কাছে
পৌঁছে দেবে বলেছে ।
যেতে চেয়েছিলে কোন শৈশবে ?
শুনেছিলে সেই দুর্বোধ্য স্বর -----
জানো কি ?
মনে করে দেখো
তোমার মন হয়েছিল যেদিন উদাস
সেই গান গেয়ে উঠেছিলে অজান্তে ------
সে সব ভুলে গেলেও
ভুলতে পারিনি আমি।
কত দূর থেকে
কানে পৌঁছেছিল আমাদের ?
মনে রাখতে পারোনি ।
শুনেছি জন্মের চিৎকার ---- তুমি হয়ে উঠবার ব্রত :
তাই এসেছি , যাবে সেখানে ?
আর সকলের মধ্যে
লীন হবে বলেই
ডেকে চলেছো , সেই দুর্বোধ্য স্বরে
১৯৪.
কেন যে বেঁচে ওঠে মরা খোলস ...?
হাওয়ায় ওড়ে.....।
ডানায় কুয়াশা তাদের , পায়ে এত ঢেউ ,
গুনতে পারি না
জন্ম-মৃত্যু ঘিরে এই নৃত্য ....
আমাকে ঘিরে
কখনো সে মহা শঙ্খের মুখ -----
কখনো বা ঝিনুক সাদৃশ্য
জল-তলের ঢেউ .....;
চেয়ে থাকি অসীমে ----
নিতান্ত গভীর মুখটির পানে !
কত পাকে ছাড়াই যে
জন্মদাগ !
সে কথা যদি ভাবত একবার কেউ ,
বুঝতে পারত
সে শুধু সে নয় ,
এমনই এক বিন্দুর মহাপরিক্রমণ….. ;
কত বার আসে যায় !
জানি না তার প্রকৃতি
তাকে ঘিরেই গড়ি , সেই পলাশরূপ
গভীর কালোর গোড়ায় ;
সে যে কেমন বসন্ত
বেজে উঠলো আজ ….. ।
১৯৫
বয়স কত হোল , কত বছর তোমার মুখের দিকে চেয়ে আছে
বলো তো আমার মন-কেমন ?
কত বছর দক্ষিণ হাওয়ায় উড়ে আসছো
বুকের ভেতর শঙ্খ-মুখ ভেঙে .... ?
চাঁদকে চাঁদ না বলে
তার ছায়ায়
রাতের নদীতে ঢেউ মাখছি , সে কথা যদি জানতে
মরণের চিৎকার
শুনতে হোত না এত ৷
শুধুই ছবি হয়ে তাকিয়ে আছো ?
জ্যোৎস্না ভাসিয়ে চলেছো আমায়
নাকি কাটাকাটি অঙ্ক শুধুই , অঙ্ক…
বলো তো আমায় ?
১৯৬
যে দিকে
চেয়ে থাকি , সে তো
তোমার না !
সে তাঁর -----
কত অদেখা লুকিয়ে যে ,
সে তো জানো না ৷
তুমিই সাজাও তোমায় ৷
বার বার ফিরে দেখ ,
যে দেখায় চেয়ে থাকা আছে .....;
দেখি বলেই
হাসিমুখ পায়
এই ফেরা ?
নয়ণজুলীতে
ওঠে ঢেউ.....
লুটোপুটি খায় হাওয়ারা
তোমার বুকের উপর ।
১৯৭.
সিগারেট জ্বলে ওঠে
দু-আঙুলের ফাঁকে ,আর
একটা একটা করে খসে যায় বোঁটা ।
চেয়ে থাকি
আর একটির দিকে ।
দুলে ওঠা
শুরু হতে না হতেই
ধরে নেওয়া , না হলে
যা কিছু ;----
আড়মোড় ভাঙে যেভাবে সম্পূর্ণতা
চোখ ফেরাতেই হারায় সেভাবে ….
কেউ জানে না
গোপন কর্মটি ,
কেউ ভাবে না কীভাবে সে ফিরতে না ফিরতেই
হারিয়ে যায়
এই দুই আঙুলে ৷
১৯৮.
আমার ধর্মের কথা সকলকে বলে দেবো ।
কর্মের কথাও।
বলবো না শুধু
যা আমাকে নীরবতায়
ঢেকে দেয় ।
অস্বীকার করতে বাধ্য করে ,
প্রকৃত পরিচয়
এসো , আজ আমার অভীষ্ট বলি :
কান পাত , আমি আমার ধর্ম-কর্ম-সাধনা
যার যার কাছে গচ্ছিত রাখি
সে কে জানো ?
অভিমান ।
মানুষ হতে হতে
একবার যদি দাঁড়াও , বুঝবে
কী নিঃশব্দ
লালন করে চলেছি
ভালো করে দেখতে পাবো বলে ৷
১৯৯.
কতবার ভেবেছি
এই বসন্তেই লিখবো ,
ডাকবাক্সের কাছে যেয়েও
ফিরে এসেছি।
হই হই করে তাড়িয়ে দিল ৷
অন্তর্জালে ফিরে গেল
সকল বয়ান আমাদের......
কোথায় পাঠাবো
পাতা ঝরার বেদনা-বাতাস...... ?
ধুলোরাও মুখ ফিরিয়ে নিল
ক্লান্ত পায়ের পাতায় দুহাত ছুঁইয়ে ।
তাকে লেখা শেষ চিঠির অক্ষরগুলি
অবশেষে মাথার বালিশের নিচেয়
গুমড়ে ছড়িয়ে পড়ল ।
সান্ধ্য আকাশ
মাথার উপরে
কালপুরুষের তরবারি
ঘোরাতে থাকলো !
*************************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন