বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

 





কবিতাগুচ্ছ * হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 
















মধ্যরাতে আয়নামহলে


এক


সারারাত বাসন মেজে
এখন এই মধ্যরাতে 
বারান্দায় 

তবু কত কোলাহল
যেন জমাট বাঁধা ময়লা 
মনে হবে সরে গেলেই
পরিস্কার হয়ে যাবে আয়না 

অথচ থাকে থাকে জমে আছে রোগ
শুধু কথা বলতে পায়নি বলে 
সারা উঠোন জুড়ে কালো গুটির প্যাঁচ। 



দুই 


আমাকেই বলো
শুধু আমাকেই বলো —
এখান থেকেই শুরু হয় প্যাঁচের যাত্রা 

জমা কোলাহলে 
আসল প্যাঁচ 
দাঁড়িয়ে থেকেই পুরো একপাক ঘুরে 
এসে দাঁড়ালো যেখানে 
সবকিছু গলে গিয়ে সেখানে জমাট পাথর

কোনোকিছু না দেখেই
দু’কলম বিশ্লেষণী লেখা 
ভুল পায়ে ভুল ভাবে 
বইয়ের পাতায় পাতায় ঘোরে। 



তিন 


অন্ধকারের গভীর গর্ভ থেকে 
ঝুরঝুর করে রঙ ঝরে পড়ে
ভালো করে তাকায় না কেউ 
এ যেন ছবিঘরের 
রঙের নিজস্ব পৃথিবীর কোলাহল 

তবুও বৃষ্টি পড়লে
আন্তরিক সহযোগিতা 
যখন বৃত্তমধ্যে এসে দাঁড়ায় 
সমস্ত জাল ছড়িয়ে তখন
পায়ে পায়ে কালো গুটি
সাদা পাতায় ঝড় বইয়ে দেয়






চার


এই পর্যন্ত বলে যখন সে দাঁড়াল —
কোনো কিছুই তখন দাঁড়ায়নি 
ভেতরে ভেতরে চলছে সবকিছু 
আর তাছাড়া, কোন পর্যন্ত বলে? 
যা বলেছো — কোথায় তুমি? 
এসব কার ইতিবৃত্ত? 
নিজেকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছো?

খোপে খোপে জমে আছে ময়লা 
তুমিই কি বলতে চেয়েছো? 
সবকিছু ঝেড়ে ফেলে ঝাড়া হাতপা হতে?

এমন বলায় কিচ্ছু থাকে না 
যেটুকু বাইরে আসে তা তোমার জামার ঘাম
তাকে কি ময়লা বলা যায়? 
তাছাড়া এসব বলার জন্যে কোথাও কি থামতে হয়?




পাঁচ 


এইতো সন্ধে হলো — আর
তুমি নতুন করে দেখা শুরু করলে
এতদিন যা সব দেখা — সে তো তোমার বানানো

এইসব বলে তোমার মনে হচ্ছে 
পরপর যা সব দেখে যাচ্ছো তা সব তোমার দেখা
এই প্রথম উঠোন পার হলে  —
কেউ তোমাকে দেখলো
তুমিও কিছু কিছু দেখে নিলে
কিছু বুঝলে আর বাকি সব তো হিজিবিজি 

একদিন বাবা মায়ের আঙুল ধরে 
এসব কিছু পার হয়ে গেছো
আর আজ দেখছো
জ্যোৎস্না পাতায় সমস্তই অস্পষ্ট 
একটা সমীকরণও এখানে খাটছে না
মনে হয় সারাদিনের কড়িখেলা




























***********************************"**********************************************




হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম ২ জানুয়ারি, ১৯৬৭ পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ধনিয়াখালি গ্রামে। লেখালিখির শুরু খুব ছোটবেলা থেকেই। পেশায় গৃহশিক্ষক হলেও সাহিত্যই চব্বিশ ঘণ্টার ধ্যানজ্ঞান। কবিতার জন্যেই তাঁর বেঁচে থাকা। উদ্দেশ্যহীন পথচলা তাঁর কাছে নেশার মতো। এই পৃথিবীতে রেলস্টেশনই তাঁর বসবাসের একমাত্র জায়গা বলে তিনি মনে করেন। একান্ত ইচ্ছা মধ্যরাতে একটি অসমাপ্ত দীর্ঘকবিতা নিয়ে অরণ্য এবং নির্জন দ্বীপে চিরকালের জন্যে হারিয়ে যাওয়া। জল মাটি হাওয়া গাছপালা নদীর সঙ্গ তাঁর কাছে চির-আকাঙ্ক্ষিত। 
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : তুমি অনন্ত জলধি, জানলা সিরিজ, মধ্যরাতের সংলাপ, অস্বীকারের অসৌজন্যে উড়ে যাবে আকাশ, পাখি রঙের আকাশ, রোদে ভাতের আলপনা, হৃদয়ের নির্জন বাঁশির সান্ধ্যভ্রমণ।
সম্পাদিত পত্রিকা : ছায়াবৃত্ত, কাটুম কুটুম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন