মোহাম্মদ হোসাইন * দুটি কবিতা
মৃত্তিকাজীবন
আমি যখন কবিতা লিখি
একমুঠো ধুলোর ভিতর ব্রহ্মাণ্ড ছুঁয়ে যায়
ভালোবাসা এমনই উচ্ছ্বাস পাথরও পাখির
পালক, মর্মছেঁড়া গান...
দু:খের স্বরলিপি চিরদিন বুকে ধরে রাখি
তাই বানপ্রস্থে যাব না কোনোদিন, বনেদি শাড়ির
ভিতর লুকনো কান্না জ্বলে ওঠে যদি হা হা করে উড়িয়ে দেব হেমন্তের আকাশে। ধান হয়ে ফিরে আসবে একদিন প্রকৃতির গোলায়...
কী করব এ জীবন দিয়ে রেশমকীটের মত বুনে যেতে না পারি যদি শিল্পের মথ!
শুধু ধিক্কার শুধু হতাশা স্বস্তি আনেনা
মৃত ফড়িঙের ন্যায় পিষ্ট হয় মর্মার্থের অভিজ্ঞান
দাঁতে দাঁত চেপে সপাটে ধরে আছি তাই জীবনের ব্যর্থ সময়...
একদিন ঝরে যাবে সমস্ত হলুদ পাতা
নিশ্চয় সবুজ রঙে ছেয়ে যাবে চারদিক
করতালিতে মুখর হবে এই মৃত্তিকাজীবন...!
পবিত্র গ্রন্থের আয়াত যেমন করে
তোমার ছায়া যতটুকু যায় কিংবা তোমার চোখ
আমি তারও ওপারে চলে যেতে চাই
যা কিছু সান্নিধ্যে তোমার
যা কিছু সান্নিধ্যে আমার
তার মাঝখানে অন্যকোনো ছায়া অন্যকোনো
অভিক্ষেপ এসে না পড়ুক
আমার ভাষা কেউ যদি কেড়ে নেয়
কিংবা আমার কল্পনা
আমার স্বপ্ন যদি হারিয়ে যায় যাকিছু তোমাকে নিয়ে রচিত... হয়ত সেদিন পৃথিবী আরও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, হয়ত প্রেম থেকে নিভে যাবে সমস্ত আলোর অভিজ্ঞান কিন্তু তারপরও পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধ, আর্তনাদ আমাকে বারবার ব্যথিত করবে এবং
আমি সেসব মুছে ফেলতে পারব না।
তবু এক অবিনশ্বর আকাঙ্ক্ষা রয়ে যাবে
চিরদিন আমার রক্তে আমার আত্মায় তার ছাপ বয়ে বেড়াব অনির্বচনীয় জিকিরের সাধনায়...!
পবিত্র গ্রন্থের আয়াত যেমন করে বুকের মাঝে ধরে রাখে একজন বিশ্বাসী, যেমন করে নিজেকে বিলিয়ে দেয় একজন বিপ্লবী তার চিন্তা তার আদর্শ জনেজনে যুগের পর যুগ কিংবা যেমন করে একজন মা তার সন্তানকে আশ্রয় দেয়, পুষ্ট করে হৃৎপিণ্ডের সমস্ত রক্তের কুসুম ধারায় -- তেমনি আমিও কি তোমার রক্তে তোমার সারস্বত সুন্দরের মাঝে নিজেকে স্থাপন করিনি!!
প্রিয় স্বদেশের প্রতিটি ধুলিকণায় প্রতিটি আক্ষেপের আবেগের মাঝে মিশে আছ তুমি
কখনো কখনো বোধের ওপারে চলে যায় মানুষ
কখনো কখনো প্রচলিত বিশ্বাস থেকে নিজেকে আলাদা করে নেয়, অথচ, তোমার চিহ্ন ধরে ধরে এখনো বেঁচে থাকি কোনোকিছু না পেয়েও অধীর অপেক্ষায়...!
*********************************************************************************************
মোহাম্মদ হোসাইন
কবিতাই তাঁর একমাত্র সাধনা। পরম আশ্রয় । আড়াল, প্রতীক, নিহিত শূন্যতা, প্রেম, দ্রোহ তার কবিতার মূল উপজীব্য বিষয়। অন্তর্জাত
বেদনাকে রঙের মিশেলে শব্দের গাঁথুনিতে তুলে আনেন অপরিসীম দক্ষতায়। তিনি কবি মোহাম্মদ হোসাইন। দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর যাবৎ কবিতার ধ্যান ও জানে অতিবাহিত করছেন।
কখনো মেঘগুলো পাখিগুলো নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, কখনোবা বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছেন চারপাশ। প্রগতির ঢাকার ভর করে, রূপ প্রকৃতির বিনম্র চিঠি বিলি করছেন কবিতার মুসাফির হয়ে। অথচ, ছবি ও চেনাগন্ধের মেটাফর তাকে অন্যলোকে নিয়ে যায়। তখন তিনি তুমুল বাজিয়ে চলেন অন্ধকার। কবি মোহাম্মদ হোসাইন নির্বিবাদী,
দেশপ্রেমে উদ্বেলিত একজন কবি। তিনি প্রগতিমনস্ক, নিরহংকার মানুষ। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর
(১৯৮৯)। এ পর্যন্ত তাঁর ২০টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবি মোহাম্মদ হোসাইনের জন্ম ০১ অক্টোবর ১৯৬৫, সুনামগঞ্জ জেলায়। তিনি স্ত্রী ও তিন কন্যা নিয়ে সিলেটে বাসবাস করছেন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে (১৯৯৫) * মেঘগুলো পাখিগুলো (২০০১)
অরণ্যে যাবো অস্তিত্বে পাপ (২০০৩) * পালকে প্রসন্ন প্রগতির চাকা (২০০৪)
ভেতরে উদগম ভেতরে বৃষ্টিপাত (২০০৬) * মেঘের মগ্নতায় রেশমি অন্ধকার (২০০৯)
বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা (২০১২) * রূপপ্রকৃতির বিনম্র চিঠি (২০১৩)
নৈঃশব্দ্যের এস্রাজ (২০১৪) * অন্তিম জাদুর ঘূর্ণন (২০১৫)
বিভাজিত মানুষের মুখ (২০১৫) * অনূদিত রোদের রেহেল (২০১৫)
ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে (২০১৭) * তুমুল বেজে ওঠে অন্ধকার (২০১৯)
হায়ারোগ্লিফিক্স (২০২০) * ছবি ও চেনাগন্ধের মেটাফর (২০২১)
ঈশ্বরের ছায়াচিত্র ( ২০২১) * রক্তাক্ত পেরেকের গান (২০২৩)
জলের গ্রাফিতি (২০২৩).





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন