বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫

গুচ্ছ কবিতা * জবা ভট্টাচার্য

 



কবিতাগুচ্ছ  * জবা ভট্টাচার্য 






আশ্রয়


অযথা স্বপ্নে ছই এর পাশে

নীল বিলোল দৃষ্টিজলে তোমার

আদলখানি ভাসে


হিম জলে ভেসে থাকা তোমার

নিরাভরণ বৈধব্যের ওপর, সব

যন্ত্রণা, রক্তপাত, অভিমানের ওপর

ডাঙা ডহরে বৃষ্টি হয়ে নামি--


তোমাকে পাবো ভেবে এত রাতেও

নেমেছি জলে

কিন্তু সে শীতার্ত প্রদেশে দেখি

কোথাও তুমি নেই যে একটা আঙুল ধরব।



সেতুবন্ধ


তুমি কি বোঝো মন!

এক অদ্ভুত মায়ার খেলা এ জীবন!

এই যে তুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাও

অন্ধকার গুহায়, চোখে চোখ রাখো

বুঝিয়ে দাও ---

এখন  মৃত্যুর থেকে সামান্য দূরে স্তব্ধ

আশঙ্কার ঘর, কড়া নাড়ছে তারা ঝরা

সময়ের কিনার ছুঁয়ে হাঁটা

বিভ্রান্ত মাদার গাছের ছায়া-‐-


তবু নোনাধরা পাঁশুটে দেওয়ালে

মুহূর্তগুলো দোতারায় সুর তোলে

হরতুকি  গঙ্গাজল তিল  কুশ  যব

প্রতিদিন পোড়াচ্ছে শব।

তারপরেও  অশ্রু অহংকারে

যাপন আঁকড়ে বলে মন


এ জীবন  অমৃতসমান।












অকথিত 


যে কথা বলব বলে হয়নি বলা

বলতে গেলে বৈধব্য সন্ধ্যা নামে অন্তঃপুরে

যে কথা ফেলে রাখা আছে নিঃসীম দহনে

অনিশ্চিত রেললাইনের বাঁকে বাঁকে

যে কথা মুখ ঢেকে আছে


থাক, সে কথা আজ না বলা' ই থাক


বলতে গেলে হয়ত 

মুখোশ খুলে আঙুল থেকে 

ছড়িয়ে পড়বে মধুমাস

ভেসে যাবে বহুমুখী আনন্দমান্দাস।



খিদে


অন্ধ গলিতে ছেঁড়া দোতারার বেসুর

উজাগর রাত নামে তিস্তার তীরে

কোন আজাহারির হাঁড়িতে ফোটে সাদা কাশফুল 

ভাতের গন্ধে হেঁটে চলে কমলিনী---


আগুনের ইলিবিলি শিখা ঘিরে

ছানাদের মরা মাছের মতো চোখ

রুটির  ভাগাভাগি

ভাঙা স্বপ্ন, অন্ধকার কাঁপে

নিথর প্রস্তর ভাঙা বুকে।


শিশুদের চোখের ম্রিয়মান ছায়াতে

কমলিনী নিজেকে দেখে কফিন গারদে।













**************************************************************************



জবা ভট্টাচার্য

জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সবটুকুই  কলকাতায়। বিবাহ সূত্রে  উত্তরবঙ্গে আসা। ভালোবাসা থেকে লেখালিখি করা। এ পর্যন্ত  সাজি, মান্দাস,  বিবর্তন, সহ বহু ছোট বড়ো লিটল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত  হয়েছে। নিজের  একটি কবিতা সংকলন  আছে "মাধুকরী  মন"।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন