বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫

গুচ্ছ কবিতা * দেবাশিস সাহা



কবিতাগুচ্ছ  * দেবাশিস সাহা


১.

পাঁচটা পালক


কাল রাতে কারা যেন 

ঠোঁট থেকে হরিণ মুছে দিয়ে গেছে। স্মৃতিচিহ্ন কিছুই না। আমার প্রাণের পাশে, যেখানে অজস্র গাছ-গাছালির নশ্বর ছায়া---- 

পাঁচটা পালক রেখে গেছে শুধু।


পাঁচটা পালক, নাকি একই মানুষের পাঁচটা ভুল ছায়া চিনতে পারিনি। অথবা না-চেনাও ভীষণ চেনা এক ভেবে, দর্পণ ভেঙেছি যখনই--- 

পূর্বাপর বিষাক্ত আঙুলে ছিঁড়েছে 

             এতদিন যে-আকাশ ছেড়েনি কেউ।


কেন যে এখনও--- তবু 

চারপাশে খুচরো পয়সার মতো ঝনঝন করে 

বেজে উঠছে নৈঃশব্দ্য!


এত অন্ধকার, কেউ কোথাও নেই---- 

আমারও ছেঁড়া লুঙ্গি ও গামছার দৃশ্যময় এই যে জগৎ  

এখানে নেই কড়ি ও কোমল 

রয়েছে, পাঁচটা পালক শুধু।


পাঁচটা পালক--- 

আমার প্রাণের পাশে, যেখানে অজস্র আমি 

আর এইসব ভাঙা-চোরা গাছ-গাছালের নশ্বর ছায়া।



২.

সন্ধ্যা, চলো 


মনে নেই, ঠিক কবে 

সন্ধ্যা রেখেছিল বুকের ভেতরে 

নীল পা। 


আজ বিকেলে 

ফের এলো সন্ধ্যা এলো 

একরাশ মৃত্যু ঠেলে। 


সন্ধ্যা, চলো---- 

ভয়ানক রাত জাগি 

আরেক সন্ধ্যার মুখোমুখি বসে।



৩.

রুপোর ঝিনুক


ডানায় ঝটপটিয়ে উঠলে অনির্বাণ কাক

শূন্য ও সুন্দরের মাঝখানে রাখা 

রুপোর ঝিনুক, সাবধানে খুলি----

চিরতুষারাবৃত আঙুল ঘুরে দাঁড়ায় স্বরবর্ণ 

সারারাত জলশব্দ শুনি : নদী এবং তোমার 

কিছুটা অনৈতিহাসিক হয়তো-বা ----

বাল্মীকির উইঢিবি থেকে উড়ে-আসা বল্মীক 

ডিঙিয়ে যায় 

শূন্য ও সুন্দরের মাঝখানে রাখা 

রুপোর ঝিনুক



বেহিসেবী 


যে - মানুষটা বৃষ্টির ফোঁটা দিয়ে 

কবিতা লিখত 

রামধনু পেড়ে এনে সাত রঙ লাগাত

                                      চাদরে - বালিশে 

পথ হারানোর পথে হারিয়ে ফেলত 

                                            বাজারের থলে 

কোথায় কোন দিকে গড়ালো আলু-পটল-ঝিঙে ফিরেও 

তাকাত না


ছেঁড়া জামার বোতামগুলো উড়ত কঠিন হাওয়ায় লোকটা তবু 

নির্বিকার 


কোথাও বেড়াতে গেলে দু'চার খণ্ড এলোমেলো

মেঘ,এক আধটা মজা নদী,পাখির কিচিরমিচির ভর্তি 

ছোটখাটো দু-একটা টিলা আর 

                                      গুচ্ছের লতা-গুল্ম 

ব্যাগে পুরে সারা প্লাটফর্ম জুড়ে লাগিয়ে দিত

                                                   তুমুল হইচই 


ফিরে, চওড়া হাসি হেসে 

ঝোলা থেকে নামিয়ে রাখত বড় বড় 

                                        পাহাড়-নদী-ঝরনা 

তারপর 

বেহিসেবীর মতো খরচ করে ফেলতো 

                                     গোনা গুনতি রাত 

চাঁদ - তারা  দূরে থাক

সারা জীবনে যে-মানুষটা এক আঁটি খড়ও 

                                              কিনতে পারেনি 

এত নক্ষত্রে তার দুচোখ ভরে উঠল কেমন করে ভাবি...


             

অনন্ত দুই পাথর 


যে নামে ডাকলে ফিরে তাকায় 

জল 

গহীন মাছ 

সাদা এবং কালো বিভ্রম 

টুকিটাকি এমন আরও অনেক কিছু 

তেমনই একটি ভেজা কন্ঠস্বর 

                       বিরল মেঘসরণী 

এইসব ঝাঁঝালো বাতাসে 

পা ফেলে হাঁটছে

 

হাঁটার ভেতর 

নিশ্চুপ 

দু'দিকে প্রবাহিত অনন্ত দুই পাথর













****************************************************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন