কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায়
যে ক্ষত দৃশ্যমান নয়
১.
সে না নামলেও, তার দিকেই দুইহাত বাড়িয়ে
চেয়ে থাকে পথ
গড়িয়ে গড়িয়ে ছায়ার মতো কারো মুখের আদল মুছে যায়
সেই বিবসতা ছাড়া, আর সব ভাঙা সানকিতে
চুমুক চায়, ডালপালা সরিয়ে শেষরাতের রেকাবী তুলে
জমাট বাঁধা সর পড়ে আছে সারা পথ জুড়ে....
মজে যাওয়া নদীর শেওলা ঘুরিয়ে সবটাই
আজও যেন মানুষের মুখ
আতঙ্কিত হওয়া ছাড়া
আর বড়ো কোনো ঘুরে দাঁড়ানো নেই কোথাও ?
যাওয়া না থাকলেও, পথ চেয়ে থাকে বুকের ভেতর হুমড়ি খেয়ে
যেতে পারা আর না পারা,
যাওয়া আসা আছে বলেই
সেই ছলনার নাম হয়ত
এই বেঁচে থাকা ।
২.
ফিরে ফিরে দেখা যাকে, কী আছে তাঁর ?
বেলা সরে গেলে
আর এক রোদেলা দুপুর
মেলার মিছিল নিয়ে
সামনে দাঁড়ায় ;
সকলের গলার আওয়াজ কি
ব্যাস্ত শহরের বেদনার চিৎকার
শুনতে পায় ?
৩.
সবটাই বাইরের, ভেতরে যেটুকু
তার মধ্যেও সে ;
বাইরে কে আলাদা করে
যতবার ঘুরে দেখা, সবটাই অচেনা ?
সেই নির্জনতাই পাশে পাশে হাঁটে ...
চির অন্ধকারে ।
৪.
উন্মাদনার চৌচির রেখা ছুঁতে পারবে না যখন
জেনে গেছো, ছেড়ে দাঁড়াতেও পারবে না জংধরা আচ্ছাদন;
যে কথা শুনতে পাবে সকলে
সে ছবিতে কথা বলবে কীভাবে তাহলে ?
দাঁড়িয়ে থাকো আরো কিছুকাল ঝাপসা হয়ে
যে কাল বোধির ।
৫.
বৃত্ত ছোটো হয়ে আসছে,
সেও নিজেই নিজের ছায়ায় বিলীন ;
গোল হয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নেই, নেই যৌথ খামার কোথাও?
আঁকুপাঁকু করছে তাও মন, সে কথা বুঝতে না বুঝতেই
বেলা হেলে পড়ছে দূর পাহাড়ের ওপারে ...
কোথাও কি আছে নদী?
ঘাট-কথার কুশল বিনিময়ে ?
তাঁরা নিজেই নিজেকে
বিভক্ত করে চলেছে
একেকটি দেশের সীমানায় !
৬.
যে আমি অপেক্ষারত,
সেও আমারই বিমর্ষতায়
ক্লান্তির বিশ্রাম খোঁজা
অহেতুক গতির আড়ালে
এঁকে দেখা তাঁকেই বিমূর্ত ?
যে ধ্বংসের শিরোনাম
বাজায় একলার খঞ্জনি ...
বিজ্ঞাপিত হতেই আসে
বিমূর্ত হতেই বাড়ায় দুহাত
বাকি সব ছাই
ছাইয়ে গড়া আধপোড়া অবশেষ
যে নির্জনতা আজও সবটাই বুকে টেনে
ধুয়ে নেয় যখন বিশাল সমুদ্রের মতো...
***************************************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন