হৃদয়ের সুতো
ছন্দা দাম
কাকু চা খেয়ে নিন না, দাদা কাকুকে চা দিন তো।
...খাচ্ছি গো মা।
পৃথার ছোট্ট আঁকার স্কুল সরকারী স্কুলের একটা রুমে প্রতি রবিবার সকাল এগারোটায়। গ্রামের ছেলে মেয়েরা আসে বাড়ির বড়োদের হাত ধরে । দু'তিনটে ঘন্টা কেটে যায় হৈ হৈ করে।
এই ফুলের বাগানটা পৃথার বড় প্রিয়। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মায়েরা আসেন বাড়িতে পুজোর প্রসাদ,এক খিলি পান সেজে দেন,বাড়ির গাছের ফল,সব্জি নিয়ে। দিদিমনিকে দিয়ে কি আনন্দ ওদের।
স্কুলের পাশের রাস্তায় ওপারে গায়ের ছোট্ট চায়ের দোকান।
...মা গো আমি রোজ রোজ চা খাবো না,বড় লজ্জা হয়। তুমি তো একদিনও আমার বাড়ি যাও না।
...কাকু কি করে যাই বলুন এই স্কুল ছুটি দিয়েই তো বাড়ি দৌড়োতে হয়,কতো কাজ ফেলে আসি। একটা দিন বন্ধ পাই যে। রাগ করেন কেন কাকু,আপনাকে দেখে আমার বাবার কথা বড় মনে হয়।এমন মায়ার ডাক...
...তোমার জন্য আমি শাক পাতা আনি। নিজের হাতে তুলে গো,তুমি নিতে চাও না।
পৃথা শুনেছে ঐ কাকু শাক তুলে আঁটি বেঁধে গায়ের দোকানে বেচে যে পাঁচ দশটাকা পান ওটা দিয়ে হাত খরচা চালান। টানাটানির সংসারে ছেলের কাছে হাত পাততে লজ্জা পান হয় তো।
...কাকু আপনি টাকা নেন না। কষ্ট করে আনেন।
...তুমি ওতো আমার চায়ের টাকা নিজে দাও,
তখন?
...আপনাকে চা টুকু খাইয়ে বড় তৃপ্তি পাই কাকু।
চোখ ঝাপসা হয়ে ওর। বাবার জন্য বড্ড মন কেমন করে।
চাওয়ালা বলে মাঝেমাঝে...দিদিমনি,উনি চানাচুরের প্যাকেট নিয়ে গেছেন, সিঙাড়া খেয়েছেন।
পৃথা কিছু বলে না। শুধু টাকাটা দিয়ে দেয়।
একদিন না এলে মানুষটার জন্য মন কেমন করে।
মনে মনে ভাবে কিছু সম্পর্ক বৃথাই, বেঁধে রাখে জীবনের লাটাইয়ে হৃদয়ের সুতো।
*********************************************************************************************
আসাম রাজ্যের শ্রীভূমি জেলার বাসিন্দা ছন্দা দাম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরিরতা। কবিতা,গল্প ,প্রবন্ধ লিখতে ভালোবাসেন । অবসর সময় আঁকাআঁকি করা পছন্দ । অনেক কবিতা, গল্প এখন পর্যন্ত অনেক পত্রিকা ,সংকলন ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে কলকাতা বইমেলায়। "আমি অগ্নিস্নাতা" ও "ঝরা কথাদের সিম্ফনি এবং নীলাঞ্জন"





কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন