অপেক্ষা
পার্থ প্রতিম গোস্বামী
অন্ধকার থাকতে থাকতে রোজ উঠে পড়ে মেয়েটা। খুব দ্রুত ঘরের কাজ গুছিয়ে নিয়েই পাড়ি দেয় শহরে। সেখানে লোকের বাড়িতে সে পরিচিত কাজের মেয়ে নামে । অথচ পড়াশোনায় যথেষ্টই সুনাম ছিল তার। বাবার মৃত্যু। তারপর অভাব অনটনের সংসারে যা হয়।পড়াশোনায় জলাঞ্জলি। পাড়ার এক কাকিমার হাত ধরে তারপর শহর। দুই বছর হয়ে গেল এমনি চলছে। ছুটি নেই।
গ্রামের এদিকে তেমন কাজের মেয়ের চল নেই। এর কারণ হয়তো আর্থিক সঙ্গতি। একজন কেউ থাকলে হয়তো ভালো হতো, কিন্তু তার দাম মেটাবার দম নেই।আর যারা তার ব্যয় বহন করতে সক্ষম তারাও অন্য একটি কারণে তা পারে না। গ্রামের মানুষ গরীব হলেও তাদের মেয়ে-বউকে অন্যের বাড়িতে কাজে পাঠাতে মর্যাদা ও সম্ভ্রমে লাগে। শহরে এসব অসুবিধা নেই। কে আর কাকে চেনে? তাদের কাজের মেয়ে ছাড়া চলে না। সামান্য দেরী হলেই হুলুস্থুল। আর কোনো কারণে যদি কামাই করে আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। সারাটাদিন উলটপালট । বাড়ির পরিবেশ থমথমে। সপ্তমে গিন্নীর মেজাজও । বাড়ির কর্তার অফিস কামাই। আর রান্নার যা ছিরি তা আর বলার নয়। অথচ সে ব্যাপারে রা-টি কাড়ার উপায় নেই।
আমার পাড়ার ঐ ভীষণ চেনা মেয়েটিরও বিয়ে হয়ে গেছে শহরে । স্কলারশিপ পাওয়া মেয়ে। গরীব বাবা-মার একমাত্র রাজকন্যা। রাজকন্যা হতে গেলে বাবার রাজা হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। বাপের বাড়ির সেই কাজ না জানা আদুরে মেয়েটি মুখ বুজে সংসারের সব কাজ করে এখন । রান্নাবান্না, বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাচা-ধোয়া। আর বাকি সবও। আগে একটা কাজের মেয়ে ছিল। দু'বছর কেটে গেছে বিয়ের। এখন আর নেই।
বাস্তবিকই তাকে চোখে হারায় শ্বশুর বাড়ির সমস্ত লোকজন। তাকে ছাড়াও হুলুস্থুল। হাজার অনুরোধেও তাই ছুটি মঞ্জুর হয় না। কতদিন যে যাওয়া হয় নি বাড়ি! রাজকন্যা কাজ করে চলে প্রতিবাদহীন। চোখের কোণ চিকচিক। রাজ্যপাট ফাঁকা পড়ে থাকে অপেক্ষা বুকে নিয়ে। রাজাকে প্রকাশ্যে কাঁদতে নেই।
শূন্য বাতাস শুধু মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে অলক্ষ্যে।
কবে ছুটি হবে? কবে?
****************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন