কবিতাগুচ্ছ * সন্তর্পণ ভৌমিক
নির্ভেজাল নরক যেমন
নরক আসছে দেখি অকপটে
মাঝরাতে, রাতপাখি ঘুমিয়ে যখন
তোমার বারান্দা ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে পড়ে যাওয়া ভবিষ্যৎ
আর যত অকীর্তিকাণ্ডপ্রলাপ
ক্ষয়ে যাওয়া মন নিয়ে ভাবে
কিভাবে গ্রহের দোষে
তোমার চরিত্র আজ নু্লো হয়ে পড়ে
প্রশ্নবিদ্ধ জন্মসম্ভাবনা
কিভাবে মসৃন হলো
তোমাদের প্রজনন ক্রিয়া?
বিপরীত ঘরে আমি শ্বাসকষ্টে থাকি
কার পায়ে কে হেঁটে যায়, নরক অবধি।
ঘাতক প্রণালী
তুমি জন্ম থেকে জেগে উঠো রাত্রি গূঢ় হলে
এবং খোঁজো অন্ধ ময়াল নগর ঘুরে শেষে
পাতার গহন অন্ধকারে রিক্ত পেটে শোয়
কেমন তাদের অভিপ্রায়ে রাষ্ট্রে আসে ক্ষয়
নখর তোমার দৃষ্টি হলো মৃত্যুভীত কারা
জীবজগতে তোমার লাস্য রক্তঘামে আঁকা
হৃদয়গন্ধি আগুনে পুড়ে দাহ্য বর্তমান
ধবল মানুষ রাত্রে দেখি দুঃখে ম্রিয়মান।
অচিন পাখি
স্তব্ধপ্রায় পণ্যপাখি দেখি
বস্তুত বাড়ির কোনো ভগ্নপ্রশাখায়
নিরিবিলি, নির্বিরোধি, শব্দউৎসহীন
আমি আড়চোখে দেখি
ইশারা ইঙ্গিতে বুঝি সখ্যপ্রিয় নয়
উদাসী মনের কাছে অতীত প্রবল
কি হলো, না হলো রহস্য প্রাচীন
বিপন্ন বাতাস আসে আষাঢ়ি বর্ষণে
স্থলপাখি হারিয়েছে বাস্তুপুরুষের
বিপাকে বিক্রিত হলো লজ্জাদেহখোল
একদম শেষে গেল বিরহ আমূল।
দাহ ও দাহ্য
আচম্বিতে ঘুরি ফিরি
দীর্ঘ অববাহিকায়
সমুদ্রকন্যা খুঁজি, অথবা
নিঃশব্দ শ্মশানে খুব
সপ্তপিণ্ড পূর্বপুরুষের
তোমার কংকালও
আমার চাহিদাও
প্রতিরাতে তোমাদের ইচ্ছে অনুসারে
শ্মশানসমাধি হয়
চাপাকান্না মাটিচাপা হয়
নিজের বল্কল পুড়ি
নিখাদ লজ্জাও
অনুতপ্ত রিক্ততার শেষ ভালোবাসা
পুড়িয়েছি ইতিহাস
জনাকীর্ণ জনপদ
এবং বিরক্ত এক কবির খাতা।
স্তব্ধ রাত স্তব্ধ দিন
বিপন্ন অবস্থা থেকে
তুমি ফিরে আসো
আমাদের পুষ্পতীর্থে
যেখানে শিশির আসে
ধুয়ে দেয় সন্ন্যাসীর
পা, আর হাতখানা, যেখানে
পৃথিবীর চপল মতিগুলো
আজ ধীর হয়ে শুয়ে থাকে
গুনে নেয় দিনরাত
পৃথিবীর সব গতি,
দিক ও আহ্নিকগুলো
ঘৃণ্য ঘূর্ণাবর্তে শেষাবধি নিঃস্ব হয়ে গেলে
সমগ্র সমুদ্র হয়ে
আমি আসি ক্ষিপ্রকায় প্লাবনের রূপে
আজ আর লজ্জা নেই
দুই চোখ ছেয়ে আসে, দেখো, ব্যর্থতার জলে।
******************************************************************




কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন