কথার মানে
প্রদীপ কুমার দে
গিন্নির বন্ধু উর্মিলা। পাশের পাড়ার দ্বিতীয় গলিতে যার রাজপ্রাসাদ সেই তিনিই একদিন সন্ধ্যেবেলা আমাদের দুজনকে একত্রে চায়ের নিমন্ত্রণ করল।
আমরাও দুজনায় ফুরফুরে মন নিয়ে গেলাম ওর বাড়ি। উর্মিলার স্বামী থাকে কর্মসূত্রে বিদেশে। যা বিশাল বাড়ি আর যা সব আসবাবপত্রে সাজানো বাড়ি, দেখলেই তাক লেগে যাবে।
উর্মিলা খুব সুন্দরী। সুন্দর ঝকমকে আর চকচকে একটা শাড়ি পরে রাজরানীর মত ভূমিকায় আমাদের আপ্যায়ন করছে, কফি স্ন্যাক্স আরও কত কিছু দিয়ে। আমার গিন্নির মানে মধু'র অবস্থা কাহিল। সব দেখে থ! মহিলাদের যা হয়, হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে, গুম খেয়ে বসে গেছে, আর আড়চোখে বারবার আমাকে মাপছে।
আমরা পুরুষেরা আবার এসব নিয়ে কিছু ভাবি না।আমিও খুব খুশি। এটা দেখি ওটা দেখি। হঠাৎ উর্মিলা আহ্বান করে,
-- চলুন উপরে নিয়ে দেখাই সবকিছু।
গিন্নি শুনেই জানিয়ে দিল,
-- না, আমার আবার পায়ে ব্যাথা।
অগ্যতা আমিই উর্মিলার সাথে উপরে গিয়ে সব দেখে নিচে নামলাম। গিন্নি আমাদের দুজনকে অনেক্ষণ ধরে মাপলে, তারপর উর্মিলাকে জিজ্ঞাসা করে বসলে,
-- কি ব্যাপার উর্মি? তুমি'তো উপরে শাড়ি পরে গেলে আর নিচে নামলে চুড়িদার পরে?
আমি'তো অবাক! তাই'তো, আমি'তো খেয়াল করি নি? কখন ড্রেস চেঞ্জ করলে উর্মিলা? মেয়েদের চোখ বটে! আমি সত্যিই খেয়াল করিনি!
উর্মিলা হুট্ করে কি একটা কথা বলে দিল,
-- ওইতো আমি কাপড় ছেড়ে কাজের সুবিধায় নাইটি পরে নিলাম, দাদা খুব রসিক সবই তো দেখে নিল, আমি যদিও ওনাকে নজরেই রেখেছিলাম। দেখলাম উনি খুব খুশি, মনের হয় ওনার খুব ভাল লেগেছে।
দ্যাখো কি কথা বললে? আরে এ যে বিরাট গন্ডগোলে কথা?
গিন্নি মধু আমাকে টেনে বাড়ি এনে, যা মার দিল কি বলবো?
-- আগে বল, উর্মিলার সব কি কি দেখেছিস আর কি করেছিস? কতটা ভাল লেগেছে তোর?
আমি আর আস্ত নেই। মার খাচ্ছি আর খাচ্ছি, ভাবছি কথার মানে যে কত রকমই না হয়? এ আবার কি বিপদ হল?
***********************************************************************************
প্রদীপ কুমার দে
জন্মস্থান কর্মস্থান কলকাতা। পেশা - হিসাব - কর সংক্রান্ত। বর্তমানে বয়স ৬৬ এবং অবসর জীবন।
পিতা ছিলেন শিল্পী মানুষ স্বর্গীয় বনমালী দে আর মাতা তাঁরই সহযোগী স্বর্গীয়া মীরা দে।
মধ্যকলকাতার বইপাড়ায় যার জন্ম তার হাতে কলম উঠে আসবে এতে আর চিন্তার অবকাশ কোথায়? হাজারো প্রতিকূলতা কাটিয়ে অসম লড়াই চালিয়ে আজও কলমকে মনের মাধুরী মিশিয়ে জাগ্রত রাখার আপ্রান প্রয়াস যে জারি রেখেছি তার অকাট্য প্রমান আমার স্বরচিত দশটি গ্রন্থ প্রকাশের পর প্রাপ্ত আনন্দ।
লেখালেখির নেশাতেই বর্তমানে আমার ঐকান্তিক ইচ্ছে সাহিত্যের জগতে বিচরণের মধ্যে দিয়ে কিছু সৃষ্টি করে যাওয়া, তাই কলম ধরি, লিখি উপন্যাস - গল্প - রম্য - ভৌতিক, কবিতা -প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রভৃতি।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন