রুদ্রপলাশ মণ্ডল / কবিতাগুচ্ছ
বীজ
হাত উঠছে আর নামছে
মুঠোর ভেতর থেকে আঙুলের ডগা ছুঁয়ে
ছিটকে বেরিয়ে যাচ্ছে রাশি রাশি বীজ
দানাশস্য
বুক পেতে দিচ্ছে
পাহাড় জঙ্গল নদী
সমতলে সমতলে
দারুণ তরঙ্গায়ন
সামনেই মেঘ; বর্ষা
তার পরে শরতের মখমলি রোদ
কয়েকটি বীজের বুক চিরে যদি
গুটিকয়েক পাতাও কচায় তবে জানব
সেগুলো উৎকৃষ্টই ছিল
ধুলো পথের বিনিদ্র কথা
১
ওই অন্ধকার আকাশের অযুত নক্ষত্রমালা
অনন্ত ঐশ্বর্য নিয়ে স্থির বসে আছে
তাই চলমান প্রতি রাতে
যদি না তাকিয়ে দেখি সেই রূপরাশি সেই আদিম আগুন;
তবে ইর্ষার দেদীপ্য শিখা, লকলকে হোমানল—
জ্বলে পুড়ে খাক করে দেবে
প্রশান্তির নদীচর
২
যত টুকু আশাহীন অলস সময়
তিরতির নদীজলে অতি ক্ষীণ স্রোত হয়ে বয়ে
যায় আপাত নীরবে
কীভাবে চিহ্নিত করি মুক বলে তাকে?
তুলির আঁচড় বুকে রুগ্ন ক্যানভাস
বেদনার দাগ নিয়ে ফুটে ওঠা ক্ষত
আর কত... আর কত...
দীর্ঘ দলনের ম্লান আলোর মত আলুলায়িত
আত্মকথনের মেঘ হেসে ওঠে বিদ্যুৎ রেখায়

৩
ধুলো জমে আছে আজও পায়ের তলায়
ঘন কালো মেঘে ঢাকা
দুরন্ত ঝড়ের ধাক্কা না করে পরোয়া
ক্ষয়হীন হেঁটে যাওয়া আলোর দুয়ারে
তবুও কয়লা ভাঙা গুঁড়ো...
তবুও পাথর ভাঙা ধুলো...
প্রাণের বাতাসটুকু করে নেয় গ্রাস
ওহে অন্ধকারের উল্লাস
আর ঠিক কত দিন পৃথিবীর প্রাণে
ঢেলে দেবে বাহুবলে বিষাক্ত বাতাস?
৪
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বেড়ে যায় অস্থিরতা
গুটিকয় কাল্পনিক কথোপকথন এতটাই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে
যে পাথর গুলো নগ্ন অভিমানে
ছিটকে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে ভেসে যায় খরস্রোতে
এবং ঘন অরণ্য বুকে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়
প্রস্তুতি নেয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রতিহত করে
বিপুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে মেঘের গর্জন আর
বিদ্যুতের চমক মিশিয়ে দিতে, তার পরে সেই...
পরিচিত শিহরণ অনন্য ভূমিরূপের কোলে মাথা রাখে
কাঙ্ক্ষিত বায়ুর প্রত্যাশায়
***********************************************************************************************
জন্ম দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের নিকটবর্তী গ্রাম মদনপুরে । বর্তমানে চুঁচুড়া, হুগলির স্থায়ী বাসিন্দা। বয়স ৪৩ বছর। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সূচনা। মাঝখানে কিছুটা বিরতি। আবার শুরু। পেশায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী। বাংলা সাহিত্য নিয়েই পড়াশোনা। কবিতার কাছেই খুঁজে পান নিবিড় প্রশান্তি।


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন