সোনামুখীর প্রেম
বিরথ চন্দ্র মণ্ডল
সে কথা লোকের মুখে মুখে। যে, মেয়েটার গায়ের রং নাকি আহা - মরি। কী চমৎকার ! কাজল টানা, পটল চেরা চোখ । কী সুন্দর ভ্রু জোড়া। তাকে কেউ কখনো পার্লারে যেতে দেখেনি। অথচ ; এতো শোভমান ' ভ্রু ' নাকি পার্লারে গিয়ে করে মেয়েরা। তার চিকন কালো ঢেউ খেলানো চুল ! সে - কী লম্বা - আহা !. কাল্ - নাগ - নাগিনী ও এতো লম্বা হয় কি না লোকের জানা নেই।
মেয়েটির শাড়ি পরার বাহার ও সে- রকম। দামী দামী বেনারসী শাড়ি । গরদের শাড়ি। গায়ের রং এর সাথে শাড়িগুলোও বেশ মানান সই। সব আইরণে পাট করা। কুচি করে ব্লাউজের সাথে একদমই ম্যাচিং । কোথা থেকে বডি স্প্রে - সেন্ট - টেন্ট গুলো আনে - কে - জানে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে , রাস্তার হাওয়া গুলো ফুর - ফুরে হয়ে যায়। রাস্তার মানুষ - জন , পশু - পাখি , সাপ - ব্যাঙ - সবার মধ্যে একটা সাড়া পড়ে যায়। সবাই সহজেই বুঝে নেয় -" কেউ একজন হেঁটে গেল এই পথ দিয়ে "
চৌহদ্দি ঘেরা বাড়ির পেছনে বড়ো বড়ো নীম গাছ। করেঞ্জ গাছ। হাবলী গাছ। এই করেঞ্জ গাছের নীচে গর্তে বাসা করে আছে সোনামুখী। সোনার মতো গায়ের রং বলে সবাই সোনামুখী বলে ডাকে। সোনার আজকাল এসব ভালো লাগে না। কানের কাছে একই কথা। "গজর্ - গজর্, গজর্ - গজর্ "
মাঝে মাঝে বড্ড সাধ হয় - 'কেমন সে মেয়েটা ' দেখে আসি ! কিন্তু! ঐ যে ভয়! মানুষের নজরে পড়লে এক ডাঙে কুপোকাত। অথচ ; নিজের রুপ নিয়ে বড্ড অহংকার তার।
শুধু সাপের সমাজ কেন ? মানুষের সমাজেও তার মতো রুপবান , গুণবান , কেউ নেই।
রঙে কেন - লম্বায় কেন! এমনকি ক্ষমতায়ও সবাইকে হার মানাবে। এক ছোবলে মানুষ 'রা ' কাড়তে সময় পাবে না।
অথচ ; ঐ মেয়ে মানুষটার কথা -- আকাশে -- বাতাসে.... ভালো লাগে না এসব শুনতে !
একদিন খুব রিস্ক নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো সোনা। তবে দিনে নয়। রাতের বেলা। শুনেছে -- মেয়েটির চার পাশে নাকি পারফিউমের সু-গন্ধ . । এই গন্ধ হাতড়ে - হাতড়ে ঠিক খুঁজে নেবে সে।
বাড়ির মেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো সোনামুখী। রাস্তায় বিদ্যুতের আলো। অথচ ; এই বিশাল বাগান - বাড়ি সুন-সান । অন্ধকার।
এতগুলি দরজা । কোন দরজার নিরালায় মহারানী - কে জানে! মানুষের মতো গন্ধ শোঁকার মতো নাক না থাকলেও কী হবে? জিহ্বা তো আছেই ? দু ' ফাঁক করা বড়ো জিহ্বা বার বার উঁচিয়ে ঠিক খুঁজে নিল সে। পুরোনো বাড়ি। দেওয়ালের পাশে অর্ধেক ইটের সমান ফাঁকা ছিল। অতি সাবধানে ঢুকে পড়লো ফট্ করে। ঘরের ভিতরে ঢুকে মেয়েটাকে সে নিজের চোখে দেখে তো তাজ্জব !
মেয়েটির গায়ের রঙ তো নয় ! যেন আলো ঝলকাচ্ছে । বিনুনি করা চুলের গোছা । বাম পাশ বরাবর লম্বা - লম্বি , ওটাও যেন এক সাথে ঘুমাচ্ছে। দুক্ষ হচ্ছে সোনার ! সাপ কূলে জন্মেছে বলে। যদি মানুষ হতো -- যে করেই হোক - এই মেয়েটাকে সে বিয়ে করতোই। মনের দুঃখের একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে সাপেদের দীর্ঘ শ্বাস মানে - ফোঁস শব্দ ! আর এই ফোঁস শব্দে, সুন্দরীর ঘুম গেল ভেঙে।
ভয় পেয়ে গেল 'সোনা 'ও। এ পৃথিবীতে মানুষকে একমাত্র ভয় তার। এমনিতেই সে জাত্ গোখরো। মানুষ যাকে কিং কোবরা নামেও চেনে। শুধু সোনার মতো রং... এই যা :।
যাই হোক - যে পথে এসে ছিল, , সেই পথে পালাবে কী.... খ্প করে সুন্দরী ধরে ফেললো। বললো --এই পালাচ্ছো কোথায় ? আ্যঁয়...!
রূপসীর নরম হাতের ছোঁয়ায় সোনা তো অবাক ! সোনা বলে -- আমাকে দেখে ভয়ে শিউরে উঠবে কী- না আরও আমাকে ধরে আছো ? বলি - তোমার জীবনের প্রতি কী কোন ভয় - ডর বলতে কিচ্ছু কী নেই... ???? ইয়াব্বড়ো একটা সাপ দেখেও সুন্দরীর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আরো বলে -- বাঁচবো বলেই তো তোমাকে ধরলাম।
সোনা বলে --- মানে ??? রুপসী খেকরিয়ে বলে উঠে... পুরুষ হয়েছো , মেয়ে মানুষের কথা বোঝ না ! সোনা অবাক হয় -- এ বলে কী !
ফ্যাল ফ্যালিয়ে দেখে নেয় রুপসীকে। আর বলে -- এই সুন্দরী ! ঠিক খোলসা করে বলো তো - কী বলতে চাইছো !
রুপসী তার দীর্ঘ বিনুনি করা চুল দিয়ে সোনাকে তার বুকের সাথে বাঁধতে বাঁধতে বলে --আমার এ বুকে মাথা রেখে দ্যাখো , শুনতে পাবে নাগিনীর শ্বাস - প্রশ্বাস। এই বলে সোনামুখীর মাথাটা বুকে জাপটে ধরে বলে, -- কী শুনতে পাচ্ছো !
রুপসী সোনার গায়ে চুমু খায়। বলে -- আগে বলো , প্রতিদিন তুমি এই ভাবে আসবে ? কী বলো - আসবে ! সোনা ঘাড় নেড়ে বলে -- আচ্ছা ! তা না হয় হলো। কিন্তু কেন ? সোনা অবাক হয়ে প্রশ্ন ছোঁড়ে ! সুন্দরী আবার চুমু খায়। বলে ;-- এটা ও বুঝতে পারছো না আমার হাঁদুরাম । তোমার সাথে " ই-য়ে " করবো।
সোনা আবারও ঠিক বুঝলো না। বললো -- প্লীজ বুঝিয়ে দাও... !!!! এবার সুন্দরী সত্যি সত্যি রেগে গেল। মুহুর্তেই ঘাড় - মাথাকে এক দিকে করে ফুৎকার ঝাড়ে ----- ধুর্ পালা..! এ আবার কার পাল্লায় পড়লাম !
এতক্ষণে সোনার ধ্যান ভাঙলো। বললো -- হ্যাঁ , বুঝেছি - বুঝেছি। কিন্তু , আমি সাপের জাত। আর তুমি মানুষ....
সুন্দরী বলে --- তাতে, কী হয়েছে? অ্যাঁ...? সাপের মন আর মেয়েদের মন এক- ই ! বুঝলে !
মেয়েরাই কেবল সাপের সঙ্গে যুঝতে পারে। আমার এই ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার ?
সোনামুখী কথা গুলি শোনে। আর সুন্দরীর দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে খুশি ও হয় খুব। মনের ইচ্ছাটা , এভাবেই মেঘ না চাইতে জল হয়ে আসবে , সে ভাবেনি আদৌ ।
তো ; এই ভাবে রোজ সোনামুখী, সুন্দরীর কাছে আসে। তবে কিনা - সব রাতের বেলা। দিনে সোনা বেরোয় না। কারণ , যদি কেউ দেখে ফেলে ! - তাহলেই কী এতবড় লম্বা সাপকে দেখেই ছেড়ে দেবে ? সোজা এক ডাঙে সাবাড় !
সারা দিনটা সুন্দরীর যেন কাটতেই চায় না। ঘোর অন্ধকার লাগে। আলোহীন মানুষ আর কতক্ষণ ই বা থাকতে পারে ?
আর রাতের বেলা ? দিনের চেয়েও পরিস্কার । কত রঙ বেরঙের রোশনাই আলো! মনে তখন খুশির ডানা। সোনার চিকন্ শরীরে সুন্দরী আলতো হাত বুলায়। চুমু খায়। আদর করে। মনের খুশিতে জড়ায় সোনাকে।
এভাবেই বেশ দিন যায়।
কথায় বলে -- সুখের দিন খুব অল্পই থাকে সবার জন্য।
সুন্দরীর ও তাই হল , সিরিয়ায় গৃহ যুদ্ধ। প্রাণ বাঁচাতে দেশের মানুষ এদিক ওদিক ছুটছে। দেবজীৎও ঘর মুখো হল। বাড়িতে আগাম জানানোর আর সময় কোথায় ? বাড়ি পৌঁছতে সেই গভীর রাত।
এদিকে দ' জনে পরস্পরকে জড়িয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। ঘুমের মধ্যে সুন্দরী শুনলো, তাকে কেউ যেন চিৎকার করে ডাকছে। বলছে -- সোলাঙ্কি দরজা খোল.... সোলাঙ্কি দরজা খোল.....
সোনার লেজ ধরে খেলতে খেলতে দু ' জনে যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল... খেয়াল নেই। কিন্তু এ গলার স্বর তো দেবজিতের ! এতো রাতে দেবজিৎ.... ! অবাক হয় সোলাঙ্কি।
আবার শুনতে পায় -- সোলাঙ্কি , দরজাটা খোল প্লীজ...
ঘুম ভেঙেছে সোনামুখীর ও । এক অজানা ভয়ে তার হার্ট- বিট ফুলছে... আর সঙ্কুচিত হচ্ছে অজান্তেই বার বার ফোঁস - ফাঁস বেরিয়ে আসছে তার মুখ থেকে। সে এসেছিল সামনের দরজার পাশের ছোট ফোকর দিয়ে। এখন পিছনের জানালা দিয়ে পালানো ছাড়া গত্যন্তর নেই। সে পালিয়ে যেতে চাইলে , সুন্দরী তাকে জাপটে ধরে থাকে। বলে -- তুমি যাবে না। তুমি চলে গেলে, দরজা তো খুলবোই না। এই তোমার সামনে গলায় দড়ি দেবো ।
সোনামুখীর একে তো ভয় ! আবার সুন্দরীর কথায় আরো ভয় পায় । কোন রকম আমতা আমতা করে বলে -- ওগো! আমাকে ছেড়ে দাও। আমি থাকলে তোমার আরো বিপদ বাড়বে। বলে , সুন্দরীর গালে চুমু খায় সোনা। সুন্দরী ছাড়ে না তার প্রিয় সাপকে।
বলে , -- তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো , আমি যা বলছি - তুমি তাই করবে বলো ! সোনা সম্মতি জানিয়ে মুখটাকে সুন্দরীর আরো কাছে এগিয়ে নিয়ে আসে। ---- বলো , কী বলছো ? সুন্দরী বলে -- দরজা খোলার সাথে সাথে তুমি ঐ লোকটাকে তোমার এক ছোবলে তার ভবলীলা সাঙ্গ করবে, বলো.. কথা দাও.... তোমার যা ফিগার ! এক ছোবলেই কেল্লা ফতে !
সোনামুখী মাথা নাড়ে । আর ভাবে , কী করে এক ছোবলে কত বেশি বিষ উগরে দেওয়া যায় !
একটা ফোঁস ফোঁস আওয়াজ সেই কখন থেকে শুনতে পাচ্ছে দেবজিৎ। এই শব্দ ঘরের ভেতর থেকে আসছে। নিশ্চয়ই এক বিষাক্ত সাপ। ভয় পায় সে । চিৎকার করে সোলাঙ্কিকে বার বার ডাকছে। ---- শোলাঙ্কি, শোলাঙ্কি । দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসো। ভেতরে বিষাক্ত সাপ।
সুন্দরী বুঝে গেছে , শেষ রক্ষা বোধহয় আর হলো না। অগত্যা, যাবার বেলায় আদরের সোহাগকে বার বার চুমু টুমু খেয়ে ফিস্ ফিস্ করে কীসব বলে টলে ছেড়ে দিল।
সুন্দরী কিছু না বোঝার ভান্ করে বলে -- দাঁড়াও। দরজা খুলছি ।
দেবজিৎ আরো জোরে চিৎকার লাগায় --- আরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসো। ভিতরে বিষাক্ত কেউটে সাপ।
সোলাঙ্কি দরজা খোলে। আলো জ্বালায়। বলে -- কী সাপ সাপ করছো ? কিচ্ছু নেই তো !
--- আমি ফোঁস ফোঁস আওয়াজ বাইরের থেকে শুনছি। আর তুমি কিনা ভেতরে থেকে ও কিছু শুনতে পাওনি...?
---- আসলে বাইরের থেকে এলে তো! ওটা তোমার মনে হচ্ছে। যাক গে....
মনে মনে রাগে গর্ গর্ করতে থাকে সুন্দরী। অসময়ে পোড়ারমুখো এসে ঘুমটা দিল ভাঙিয়ে। আসবি তো আয় - দিনের বেলা আয়.... তা নয় , এলি সেই রাতের বেলা। যত্ত সব! বিষম রেগেও গেলে মুখপানাকে খুব স্বাভাবিক রাখে।
এসময় রাগামুখো হলে চলবে না। নিজেকে সামলে নেয় সুন্দরী। ঠোঁটের তলায় মুচকি হাসি আনে। বলে -- অত রাতে আসতে তোমার কোন অসুবিধা হয়নি তো ? বরের গায়ে আলতো ন্যাকা হাত বোলায়। শরীর - টরীর সব.....
কথা শেষ করতে দেয় না দেবজিৎ। -- আগে বলো , তুমি ভালো আছো তো...?
শুনে সুন্দরী র মুখটা এক্কেবারে শুকিয়ে যায়।
উত্তরে বলে --- কোথায় আর..!
চোখ ফেটে জল আসতে চায় সুন্দরীর ।
মনে মনে ভাবে - কি সুখেই না দিন কাটছিল। বলা নেই , কওয়া নেই , এসেই দিলে সব মাটি করে।
মুখে বলে -- তোমার তো আবার খাওয়া - দাওয়া, বিশ্রাম কিছুই নেই। হাঁড়িতে করে দুটো চাল বসিয়ে দিই ! দেবজিৎ হুড়মুড়িয়ে বলে --না -- না ! অত রাতে আর কষ্ট করতে হবে না। আমি হোটেল থেকে খাবার নিয়ে এসেছি। এসো দু 'জনে খেয়ে নিই । কতদিন একসাথে আমরা খাইনি বলোতো !
--- না সে তুমি ই খেয়ে নাও।আমি তো এই সবে খেলাম। ঘুম ধরে গেছিল। সুন্দরী বলে কথাগুলো।
এ ক 'দিন তার খাবারের ধরণটাও বদলে ফেলেছিল সুন্দরী। ইদানিং দুধ আর কলা ছাড়া আর কিছু ভালো লাগে না তার। বাজার থেকে ডোজন - ডোজন পাকা চিনি কলা , দু 'সের করে গাই গরুর দুধ। দুধ - কলা যে সোনার প্রিয় আহার। তাই তার ও প্রিয় হয়ে গেছে ইদানিং।
সুন্দরীর মন থেকে রাগ, ক্ষোভ আর যায় না। মনে মনে বলে -- শুরু দিনটা আসতে দাও.... ! তবেই টের পাবে । সুখের ঘরে আগুন লাগানো - এ আমি হতে দেবো না।
দেবজিৎ ঘরে ফেরায়, সে রাতে স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে যা কিছু হলো - সুন্দরীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে হল। দেবজিৎ এসবের কিছুই বুঝল না।
সকাল হতেই স্বামীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা গলায় সুন্দরী বললো -- ওগো জানো -- তুমি যে সোনার পাশাটা শ্যাকরাকে দিয়ে গড়িয়ে দিলে.... কত শখ করে। সারাটা দিন একা একা কিইবা করি... !
ঐ নীম গাছের ধারে কাছে এদিক ওদিক ঘুরছিলাম। হঠাৎ দেখি পাশাটা নেই। আমি জানি ; নির্ঘাত ঐ জায়গায় খসে পড়েছে। দাও না ওটা খুঁজে । লক্ষী বরটা আমার। যাও ....!
কথাটা শুনে দেবজিৎ চিন্তায় পড়ে। কত কষ্টের পয়সায় কেনা সোনার পাশা। সব সাধ আহ্লাদ ছেড়ে, বিদেশে পড়ে থেকে... সেই রোজগারের টাকায় কেনা.... ! না, এক্ষুনি যাই। খুঁজি। দেখি পাই কিনা।।।!
বাড়ির পিছনের বড় বড় গাছের শুকনো পাতা। এটা ওটাতে জঙ্গলময়। এ নিরালায়.. সাপ কোপের বাসায় , কোথায় খুঁজি.... এসব ভাবতে থাকে। আর পায়ে পায়ে ডাঁই হয়ে থাকা শুকনো পাতাকে পা দিয়ে সরিয়ে দেয়। জঙ্গলের এদিকে ওদিকে তাকায়। হঠাৎ দেখলো , বড়ো একটি গর্তের মুখে সোনার মতো কিছু একটা চিক- চিক করছে। কাছে গিয়ে দেখলো -- সেই পাশা।
কিন্তু , গর্তের ভেতর থেকে সেই ফোঁস ফোঁস শব্দ। এই একই শব্দ গতকাল রাতেও পেয়েছিল। কী করা যায় । ভাবতে থাকে সে। একটুখানি দূরে দেখলো , এক মোটা বাঁশ । ভেঙে নিল অর্ধেকটা। ভাবলো - এতেই চলবে। ওটা হাতে নিল ।গর্তের কাছে গিয়ে সন্তর্পণে পাশাটা ছোঁ মেরে নেবে কী ---বিশাল এক সাপ বেরিয়ে দেয় আর কী ছোবল !
মুহূর্তেই সরে এসে বাঁশ উঁচিয়ে দিল ডাঙের পর ডাঙ। ইয়াব্বড় সাপ। ব্যাটা আধ মরা। আবার দিল এক ডাঙ। আবার.... আবার... ভয়ে কত ডাঙ যে পড়লো, দেবজিৎ গুনতি করেনি। বেচারা সাপটি মরে গেছে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। সারা শরীর তখনো ভয়ে কাঁপছে তার। কী বিশাল লম্বা।কোন রকম পাশাটা ছোঁ মেরে সোজা ঘরে ।
সোয়ামীকে হাঁপাতে দেখে সুন্দরী বলে -কী হোল গো তোমার ! হাঁপাচ্ছো যে বড়ো...! সে আর বলো না। বিষাক্ত সাপের ছোবল থেকে বেঁচে ফিরলাম। গর্ত থেকে সাপটার বেরিয়ে আসার দৃশ্য ভাবে, আর বলে ---বাপরে্ , সে কি ফণা ! সে কি লম্বা !
সুন্দরী র হাত কপালে চলে যায় । এমন ভান্ করে , যেন এক্ষুনি আকাশ থেকে পড়ল। কিছু শোনার উদ্গ্রীবে সোয়ামীর দিকে তাকিয়ে থাকার ভান করে বলে ---তার পর -- তার পর ---
--তার পর আর কী...! লম্বা এক বাঁশ দিয়ে ঘা এর পর ঘা দিয়ে একদমই শেষ !
শুনে মুর্ছা যাবার উপক্রম সুন্দরীর।
হায়! কতসাধ করে পাঠালাম , পোড়ামুখোর মরা মুখটা দেখবো। তা না। শেষে আমার সাপটাকে মেরে ফেললে। এর মূলে যত রাগ, যত ক্রোধ , যত অভিমান আছড়ে পড়ল ঐ প্রেমিক পুরুষটির ওপর। যে সদ্য বাঁশের ঘায়ে মরল।
বলতো - তার নাকি বিশাল ক্ষমতা। কই মরার আগে এক ছোবল দিল না কেন এই হাঁড়ির সোয়ামীকে। শত্রুটা বিদায় হতো! এখন এই জীবন থেকে ও কী আর মরে ও কী ! মনে মনে ভাবছে সুন্দরী আর হাহুতাস করছে। রাগে সাপের মতো ফুলতে থাকে। ইচ্ছে হয়, সে নিজে গিয়ে সোয়ামীর উপর বিষ ঢেলে দেয়। কিন্তু বিধাতা তাকে মানুষের মূর্তি করে পাঠিয়েছে। এ কারণে বিধাতার প্রতিও রুষ্ট সে। এই ভাবে আপন মনে রাগে ফুটতে থাকে। টগবগে ফর্সা শরীর ফুলে ফেঁপে লালে লাল হয়েছে। সে দাড়িয়ে ছিল। হঠাৎ দুম্ করে পড়ে গেল মেঝেতে।
দেবজিৎ দিশেহারা। মানুষ টা এত্তো তাকে ভালোবাসে ! মুখে - কপালে জল দিল। মেঝে থেকে কোলে তুলল। পাখা বাতাস করল। তবুও জ্ঞান ফিরল না সোলাঙ্কির। হাসপাতাল যেতে প্রায় চার কিলোমিটার পথ। যত কম সময়ে পারা যায় টোটো ব্যবস্তা করে সোজা হাসপাতাল।
ডাক্তার দেখে বলল - হার্ট এটাকে পেশেন্টের মৃত্যু হয়েছে। দেবজিতের কান্না পাচ্ছে খুব। এ কষ্ট কাউকে বোঝাতে পারছে না সে । মানুষটা শুধু বিপদের কথা শুনে হার্ট ফেল করলো। তাহলে কতোখানি ভালো বাসতো তাকে। আর সে কিনা রোজগারের কথা ভেবে দিনের পর দি নয়, বছর ভর বিদেশে কাটিয়েছে।
কী হবে এ টাকা - পয়সা! সোলাঙ্কিই তো তার জীবনের সব কিছুই ছিল। এ জীবনে বেঁচে থেকেও কী আর মরেও কী..... !
পাথরের মূর্তি র মতো ঠায় এক জায়গায় বসে থাকে দেবজিৎ ।
**********************************************************************************************



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন