চিরন্তন জানা / দু'টি কবিতা
একটি প্রত্যাশার ধারণা
অবসরে নিজেকে যার পরম বাগদত্তা ভেবে
আনমনে সিঁথিতে বুলিয়েছো হাত;
মনে করো, আমি সেই মুহূর্তের বাস্তবতা।
সেই সমস্ত মধুর কল্পনার গলায়
পরাতে এসেছি কাঁটার মালা—
এত বছরের লুণ্ঠিত হওয়ার ক্ষতচিহ্ন
যার কাছে বারংবার উন্মুক্ত করেছ,
সে-ই আমি;
যে কোনোদিন ঘেন্না করে দূরে সরিয়ে দিইনি
ভালবেসে চুম্বন করেছি প্রতিটি অনাদরের উপর।
সেই প্রতিটি অশ্রুর ফাটল থেকে এক একটি পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ বেরিয়ে এসে
আমাকে এতটাই আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে যে,
আমি আরও একবার নিজেকে ছেড়ে দিয়েছি।
যে মেয়েটির জন্য আমি অনেক ভোরে উঠে
চুপিচুপি ঘরের দরজা খুলে কুড়োতে গিয়েছি
শিউলি ফুল; কুয়াশার নম্র রূপ।
তুমি সেই মেয়ে। একটি প্রত্যাশার ধারণা।
এতদিন পরে, ভেবেছি চোখ থেকে চোখে
এ তো শুধু পাঠিয়ে দিচ্ছ
করুণা, সস্নেহ দুʼহাতের প্রতিদান মাত্র।
কামনা শুধু তার জন্য— কচি ঘাসে ঢাকা
সেই প্রস্তর যার পাশে লুকানো ছিল একটি
ফলার মতো পূর্ণচ্ছেদ।
তবু— তুমি এত দেরী করে এলে,
মনে হয় আর একবার ভালবেসে দেখি।
মৌনতা
এমন স্বাভাবিক মৌনতা আমি জানি
বুঝতেও দেব না
কত নিখুঁতভাবে ভেতরে ভেতরে মিলিয়ে দিচ্ছি
এতদিনের সমস্ত হিসাব।
ধীরে ধীরে উল্টো পথে হেঁটে চলে যেতে হবে—
হয়ত একদিন আচমকা মিলন;
শিহরিত চিত্তে— নির্বাক হর্ষে।
হয়ত বা এই জন্মে শেষবারের মত
মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার তোড়জোড়।
একই ছাতার তলায় দুʼজন দাঁড়ালে
স্বাভাবিকভাবেই
ভিজে যায় দুʼজনের বিপরীত কাঁধ।
খুব স্বাভাবিকভাবেই
একে অপরকে ভিজতে দিতে চায় না;
অন্যের দিকে একটু বেশি ঠেলে দিতে
চেষ্টা করে ছাতাটুকু।
সে কি ভালবাসা নয়?
ঠিক ততটা স্বাভাবিকভাবেই আমি
ভালবেসে ফেলেছি
তোমাকে।
*******************************************************************************************
জন্ম ১৯৯৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৯শে ডিসেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। বর্তমানে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। লেখালেখির শুরু কলেজে যাওয়ার পর থেকে। মূলত কবিতা লিখতেই বেশি ভালবাসেন। সম্প্রতি ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলাতে প্রথম কাব্যগ্রন্থ “সূর্যশিশিরে থাকলে আমাতে থেকো না” প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়।



কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন