রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

গুচ্ছ কবিতা * স্বপ্নদীপ রায়



কবিতাগুচ্ছ * স্বপ্নদীপ রায় 


একটু উষ্ণতা

   

ফুটো আকাশে সারাদিন ঘুরেছে বেকার মেঘেদের মিছিল।

কেবলই ঘনীভূত হয়েছে,বৃষ্টি হতে পারেনি!

গোধূলির ব‍্যালকনিতে বসে সবেমাত্র  চুমুক দিয়েছি কফিটায়,

হঠাৎ হামলে পড়ে তারা চেয়ে বসল একটু_'উষ্ণতা!'

সারাদিন বুকের সবটা অমৃতসুধা জমে যেন 

শৈত‍্যে পাথর হয়ে গেছে ঐ অন্বেষী চোখগুলো।

তবু পায়নি উত্তাপ__

যেন হিমালয় নেই এ তল্লাটে!

সমগ্র সাইবেরিয়া আছড়ে পড়েছে মেঘেদের আঁতুড়ঘরে!

পাথুরে বুকের ভিতর গুমরে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে 

একটা চাপা আক্রোশ।


মানুষের বেশে প্রতিদিন জ্বলতে দেখি অজস্র খড়ের গাদা,

ওজোনের সুরক্ষা যেন মিথ_এতো সূর্য_এতো সূর্য_

তবু এই হাহাকার _উষ্ণতাকেই খোঁজে জৈবিক আধার__

যেন সমিধে চাপা পড়ার ঠিক আগে মুখাগ্নির মত পরশ!


আনন্দ!শুধু আনন্দ ছড়িয়ে যায় ধোঁয়ার মত স্টেজ থেকে 

সমগ্র অ‍্যাম্ফিথিয়েটারে।পাগলপারা!বল্গাহীন!

ব‍্যাকস্টেজে একটু 'উষ্ণতা'_একটু ছ‍্যাঁকাএকটু বেদনা_ 

যেন তার অদ্বিতীয় ছুতোর!



করভাস্


পরস্পরকে ভালোবেসে বেশ দিন কাটছিল আমাদের।

মানসিক দূরত্ব মিলিয়ে আসছিল _যেন দ্রুতগামী মেলট্রেনটার 

সামনে সামান্য পথ আর শরীরদুটি শীতার্ত ভঙ্গিতে 

চাইছিল পরস্পরের কম্বলে একটু ওম্।


প্রতিদিন চাওয়ার একটা সাদা নদী গোমুখ থেকে 

নির্গত হয়ে নিম্নগামী হতো।

আমরা দুজন একবার তাকে নাগালে পেলে তাতেই 

সারতাম রেচনক্রিয়া__রতিক্রিয়ায় আশ্চর্য প্রজনন।

একদিন গোমুখটা কালো হয়ে উঠল__ভীষণ কালো।

আর হিমবাহ গলতে সাহস পেল না তার গর্ভগৃহে।

আমাদের উভয়েরই চোখে তখন বিশ্রী আলকাতরা__

বুঝলাম,ভালোবাসার পিঠে এসে বসেছে একটা 'করভাস'__

আর আমরা,তার থেকে সহস্রহাত দূরে.....!



সুপ্তলাভানগ্ন


আকাশ থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত

এসে পড়ছে আমার চোখে ঠোঁটে গালে__

ডান নাকের বেমানান তিলে__ 

তার নোনা স্বাদ আমার নিকট পড়শি__

স্বভাবে চেনা__গন্ধেই স্পর্শ!


সুপ্ত লাভার অভ‍্যন্তরীণ ললিতকলা নিয়ে ভাবতে গিয়ে দেখি,

চুম্বকের মত পৃথিবীর সমস্ত ক্ষতেরা

আমার দিকে ধেয়ে আসছে।

স্থানসংকুচিত পৃথিবী আজ তাদের জমা দিতে বলেছে 

লালদুর্গে ইস্তেহারপত্র।

আমি দাঁড়িয়ে __চাইছি নিজেকে বাঁচাতে

 অথচ পা!

সে কখন পার্টিশান স‍্যুট করেছে_

আলাদা করবেই হাড়ের কাঠামো থেকে  

রক্তমাংসের একগুঁয়ে স্বপ্ন!

আমি প্রতিরক্ষাবিহীন__নিরস্ত্র!


সেই মুহূর্তে নিজের অজান্তেই ছুড়ে ফেললাম 

একলব‍্যের অদ্বিতীয় মন্ত্র_

চোখ মুদে এল আমার__

কতক্ষণ ছিল,জানিনা_

যখন প্রথম ভোরের আগে সরলো পর্দা,

আকাশের সমুদ্রে দেখি শুধু নীল নক্ষত্র;

ততক্ষণে মকবুলের সরস্বতী নগ্ন!


ভালো আছি_

ষড়যন্ত্রের ভিতর স্বরহীন আমি....


আত্রেয়ীর গালে মুহুর্মুহু চুমুতে রাখলাম 

আমার আপাতকালীন ইতর যোনির স্বাক্ষর!











কুটুম-কাটাম


চারিদিকে মাছি ভন্ ভন্

                            হাট্ হাট্ খোলা চোরকুঠুরি

বেদুইনপাখির ঠোঁটে সুদূরের ডাকযোগ;

সে নেই....নেই অনেকক্ষণ!


মা ডাক থেমে গেছে

                   মাটিতে কেবল একটা শুকনো কাঠ

ভীষণ শুষ্ক__ভীষণ রিক্ত

প্রাণহীন তরঙ্গহীন এক অনুপুঙ্খ সংঘাত!


ঘুমের দরজা ঠেলে জেগে ওঠে দুটি হাত

                                 শৈথিল্যহীন_ জড়তাহীন__

ঘাই মৃত‍্যুপুরীর ভিতরে   

বেঁচে ওঠে প্রাণের প্রবল অভিঘাত!


টোটেম-ট‍্যাবু আগলেও

                      ছড়িয়ে যায় মুদ্দাফরাশের হুল্লোড় 

কুটুমকাটামের হাত ধরে

অন‍্য-পৃথিবী খোঁজে অরণ‍্যের প্রথম শিকড়!


*********************************************************************************


                                                   

স্বপ্নদীপ রায়

জন্ম:১৯৮৬, ৮আগস্ট (২২শে শ্রাবণ)
পেশায় দন্ত চিকিৎসক।
লেখালেখি শুরু স্কুলজীবনে থেকে।যদিও সরাসরি আত্মপ্রকাশ ঘটেনি।পরবর্তীকালে শ্রদ্ধেয় ডাঃ প্রভাত ভট্টাচার্য্য বাবু উদ‍্যোগে বিভিন্ন সাহিত‍্য সংগঠনে লেখালিখি শুরু।
বর্তমানে কবিতা আমার আত্মার পরম আত্মীয় ও অন্তর্যন্ত্রণার মহৌষধিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

                                       

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন