অণুগল্প সাহিত্যের একটি বিস্ময়কর শাখা। ' বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন ?' ঠিক তাও নয় যেন, বিন্দুতে সপ্তসিন্ধু দশ দিগন্ত চকিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সার্থক অণুগল্পে। তেমনই একটি অসাধারণ অণুগল্প এবার আমরা পড়ছি ,মানসী কবিরাজ-এর কলমে -----
উপশম
মানসী কবিরাজ
নিজের নামে সে প্রোফাইল খুলতে পারেনি । পারেনি , কারণ জন্মবাহিত গুচ্ছ গুচ্ছ অন্ধকার তাকে সেই ছোট থেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিয়ে যায় আরও এক অন্ধকার টানেলের দিকে।
ইস্কুলের পরীক্ষায় ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ার অন্ধকার , টিউশনে ফিরোজা কুর্তি মেয়েটির পাত্তা না পাওয়ার অন্ধকার , ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ না পাবার অন্ধকার , চাকরী না হওয়ার অন্ধকার , বোনের বিয়ে না দিতে পারার অন্ধকার , মায়ের চোখের জলের অন্ধকার , বাবার হাহুতাশের অন্ধকার… অন্ধকার অন্ধকার আর অন্ধকার । ধূধূ তেপান্তরের মাঠের মতো ঠাসা শুধুই অন্ধকার
অথচ তার প্রতিটি আঙুলের ভাঁজে ভাঁজে , না কোনও নিকোটিন শিখা নয় সত্যি সত্যি আলোর আগুন লেগে ছিল , যেন সে নিজেই এক আস্ত চকমকি পাথরের স্তূপ । তবু বন্ধু নেই তার কোনও । এমনকি ইথার তরঙ্গের অনন্ত দেয়ালেও সে নিজের নামে কোনও প্রোফাইল খুলতে পারেনি । নিজেরই আগুনে নিজেই জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়ার অন্ধকার তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় নিজেরই কাছ থেকে । অথচ তার ভিতরে কিন্তু আগুন ছিল । আগুন ছিল প্রতারণা না করার , আগুন ছিল মিথ্যে না বলার , আগুন ছিল ছলে বলে কৌশলে শুধু নিজের স্বার্থ সিদ্ধ না করার …… আর তার ভিতরের সেসব সত্যি সত্যি আলোর আগুন জমতে জমতে জমতে জমতে টলমল করে ওঠে তার চোখের গলুই ।
শেষে যখন ঘুলঘুলি চুঁইয়ে আসা বাতাসও ফিকে হয়ে যায় , সে একদিন প্রোফাইল খোলে ইথার দেওয়ালে । না নিজের নামে নয় । সে প্রোফাইল খোলে ‘ নিঃসঙ্গ চোখের জল ‘ এই ছদ্ম আবহে । আর ঠিক তখনই , ঠিক তখনই তার প্রোফাইলে প্রথম বন্ধুত্বের অনুরোধ আসে যে তরঙ্গ থেকে তার নাম ‘ তোমাকে আশ্রয় দিলাম’
************************************************************************************************


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন