রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

প্রিয় কবি প্রিয় কবিতা * বিনয় মজুমদার

 



এই বিভাগে আমরা এমন দু-একটি  কবিতা পড়ব , যে কবিতা আমাদের অন্তর্লোকে বিস্ময় সৃষ্টি করে শুধু নয় ,আমাদের কবিতা পড়ার আনন্দে অবগাহন করায় , প্রতি দিন  প্রতি মুহূর্তে | এই পর্যায়ের কবি যে সবসময়  বিখ্যাতই  হবেন , এমনটা নয় , তিনি অখ্যাত তরুণ তরুণতর কবিও হতে পারেন , কিন্তু ,শর্ত একটাই ,কবিতাটি যেন আমাদের মর্মলোক স্পর্শ করে | স্বরবর্ণ *নয়   সংখ্যায় 'প্রিয় কবি  প্রিয়  কবিতা ' বিভাগের কবি হলেন বিনয় মজুমদার ---- 









একটি উজ্জ্বল মাছ


একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে

দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্রকৃত পস্তাবে স্বচ্ছ জলে

পুনরায় ডুবে গেলো — এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে

বেগনার গাঢ় রসে আপক্ক রক্তিম হ’লো ফল |

বিপন্ন মরাল ওড়ে, অবিরাম পলায়ন করে,

যেহেতু সকলে জানে তার শাদা পালকের নিচে

রয়েছে উদগ্র উষ্ণ মাংস আর মেদ ;

স্বল্পায়ু বিশ্রাম নেয় পরিশ্রান্ত পাহাড়ে পাহাড়ে ;

সমস্ত জলীয় গান বাষ্পিভূত হ’য়ে যায়, তবু

এমন সময়ে তুমি, হে সমুদ্রমত্স্য, তুমি…তুমি…

কিংবা, দ্যাখো, ইতস্তত অসুস্থ বৃক্ষেরা

পৃথিবীর পল্লবিত ব্যাপ্ত বনস্থলী

দীর্ঘ-দীর্ঘ ক্লান্তশ্বাসে আলোড়িত করে ;

তবু সব বৃক্ষ আর পুষ্পকুঞ্জ যে যার ভূমিতে দূরে দূরে

চিরকাল থেকে ভাবে মিলনের শ্বাসরোধী কথা |



সময়ের সাথে এক বাজি ধরে


সময়ের সাথে এক বাজি ধরে পরাস্ত হয়েছি ।

ব্যর্থ আকাঙ্খায়, স্বপ্নে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে যেখানে

একদিন জল জমে, আকাশ বিস্বিত হয়ে আসে

সেখানে সত্বর দেখি ,মশা জন্মে; অমল প্রতূষে

ঘুম ভেঙ্গে দেখা যায় ; আমাদের মুখের ভিতর

স্বাদ ছিল, তৃপ্তি ছিল জে সব আহার্য প’চে

ইতিহাস সৃষ্টি করে; সুখ ক্রমে ব্যথা হয়ে উঠে ।

অঙ্গুরীয় নীল পাথরের বিচ্ছুরিত আলো

অনুষ্ণো অনির্বাণ , জ্বলে যায় পিপাসার বেগে

ভয় হয় একদিন পালকের মত ঝরে যাব ।



মুকুরে প্রতিফলিত


মুকুরে প্রতিফলিত সূর্যালোক স্বল্পকাল হাসে |

শিক্ষায়তনের কাছে হে নিশ্চল, স্নিগ্ধ দেবদারু

জিহ্বার উপরে দ্রব লবণের মত কণা-কণা

কী ছড়ায়, কে ছড়ায় ; শোনো, কী অস্ফুট স্বর, শোনো

‘কোথায়, কোথায় তুমি, কোথায় তোমার ডানা, শ্বেত পক্ষীমাতা,

এই যে এখানে জন্ম, একি সেই জনশ্রুত নীড় না মৃত্তিকা?

নীড় না মৃত্তিকা পূর্ণ এ অস্বচ্ছ মৃত্যুময় হিমে…’

তুমি বৃক্ষ, জ্ঞানহীন, মরণের ক্লিষ্ট সমাচার

জানো না, এখন তবে স্বর শোনো,অবহিতহও |

সুস্থ মৃত্তিকার চেয়ে সমুদ্রেরাকত বেশি বিপদসংকুল

তারো বেশি বিপদের নীলিমায় প্রক্ষালিত বিভিন্ন আকাশ,

এ-সত্য জেনেও তবু আমরা তো সাগরে আকাশে

সঞ্চারিত হ’তে চাই, চিরকাল হ’তে অভিলাষী,

সকল প্রকার জ্বরে মাথা ধোয়া আমাদের ভালো লাগে ব’লে |

তবুও কেন যে আজো, হায় হাসি, হায় দেবদারু,

মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়!



কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে

 

কী উৎফুল্ল আশা নিয়ে সকালে জেগেছি সবিনয়ে।

কৌটার মাংসের মতো সুরক্ষিত তোমার প্রতিভা

উদ্ভাসিত করেছিল ভবিষ্যৎ, দিকচক্রবাল।

সময়ে ভেবেছিলাম সম্মিলিত চায়ের ভাবনা,

বায়ুসেবনের কথা, চিরন্তন শিখরের বায়ু।

দৃষ্টিবিভ্রমের মতো কাল্পনিক বলে মনে হয়

তোমাকে অস্তিত্বহীনা, অথবা হয়তো লুপ্ত, মৃত।

অথবা করেছে ত্যাগ, অবৈধ পুত্রের মতো, পথে।

জীবনের কথা ভাবি, ক্ষত সেরে গেলে পরে ত্বকে

পুনরায় কেশোদ্গম হবে না; বিমর্ষ ভাবনায়

রাত্রির মাছির মতো শান্ত হয়ে রয়েছে বেদনা-

হাসপাতালের থেকে ফেরার সময়কার মনে।

মাঝে মাঝে অগোচরে বালকের ঘুমের ভিতরে

প্রস্রাব করার মতো অস্থানে বেদনা ঝরে যাবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন