মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * ঋতুপর্ণা খাটুয়া



কবিতাগুচ্ছ * ঋতুপর্ণা খাটুয়া 







দীঘা সিরিজ 

(১)

বলগা হীন একটি ঘোড়া সমুদ্র হয়ে এলোপাথাড়ি 

ছুটে চলেছে।

তার চোখে লোভ স্পষ্ট।  ধারালো দাঁত বারংবার 

কামড় বসায়

বালির নাভিমূলে। কোনও পুরুষ নয়, 

কোনও ঘোড়া নয়—


আমি তাকে দেখেছি, পুলিশের শিকারী উদ্দাম 

কুত্তা হিসেবে,

বকলেস দিয়ে কে যেন টেনে রেখেছে, সাধারণ 

মানুষের থেকে দূরে।



(২)

ওই যে সমুদ্রের জলে ডুবে গেছে পিচ্ছিল সরীসৃপ, 

ওকে ডেকেছি ঝাউগাছ।  সারি সারি সমান্তরাল 

গাছ, উপুড় হয়ে গড় করছে ঢেউকে, এমন দৃশ্য

আগে দেখিনি। তারামাছ উঠে এসেছে ধানদূর্বা হয়ে,

গোপনে ঝাউপাতা সে আশীর্বাদ মুঠোয় ভরে নামিয়ে 

রেখেছে বালিতে, সযত্নে। ঝড়ের সময়, সকলে সেই

যে প্রণামে সামিল হল, তারা কেউ উঠে বসেনি।


আমাদের মনে মনে, সারি সারি যে দ্বন্দ্ব,  সরীসৃপের 

আকার নেয়, ভয়াবহ হয়, ভেতরে ভেতরে প্রবল

ঝাউগাছ  হয়ে কুঁকড়ে উঠে মাথা দোলাতে থাকে

তাকে কি দীঘা বলে ডাকা যায়!



(৩)

উত্তাল প্রেম করলে আগে সমুদ্রে যেতে হয়।

নৌকা চেপে ধরে, পাগলা ঢেউ পেরিয়ে

মাঝ সমুদ্রের বুকে গেলে সব ঠাণ্ডা।


মনে হয় যেন, সর্বকালের সেরা রতি সুখ

পেরিয়ে সমুদ্র শুয়ে আছে গভীর শ্বাস ফেলে।


টুপটাপ ছোটখাটো মাছ লাফিয়ে ঘুরছে

সামুদ্রিক বিছানায়—










(৪)

সমুদ্র।  ও মেরি জানেমন, তোমার গোপন কালো

পাথরে বসে অপেক্ষা করি, চঞ্চল সাদা ফেনার।

দীর্ঘাঙ্গ বালিতে পায়ের ছাপ ফেলে রাখি, আমার

আসার খবর কীভাবে ছড়িয়ে দেয় নোনা হাওয়া!

সমুদ্র, জানেমন, পাথরে পাথরে ঘষা লেগে শরীরে 

যে আগুন ছড়িয়ে পড়তো, তা আয়ত্তে রাখার পর, 

আঘাতে ও জলে ছিটিয়ে দাও নাবালক বালি।

চরে শুতে আসে সঙ্গম পিপাসু হাঙর। ভাঁটা এসে

গেলে, সে আর ফিরে যেতে পারে না পূর্বরাগে—



(৫)

ওই চ্যাপ্টা ভাজা মাছের চিবানো কাঁটা আর 

মদের খালি বোতল ছাড়া

ঝাউবনে মনুষ্য আরোপিত আর কিছুই দেখি না। 

ঝাউপাতা ইতিউতি

দেখি, এলানো বালির ভেতরে মুখ গুঁজে আলসে 

মাগী হয়ে শুয়ে থাকে।

গাছে থাকা ঝাউপাতা ছেনাল মাগীর মতো 

কোমর দোলায়। যাদের 

অওকাৎ নেই, কোথাও মওকাও জোটে না, 

তারা দীঘার ঝাউবনে ফুর্তি 

করে চোয়ালে মদ মিশ্রিত নাল ফেলে মাছ চিবিয়ে খায়।


তারা সকলে এসে আয়াস করে ঝাউগাছের 

মোলায়েম কোমর 

দেখে যায় মাগনায়।


********************************************************************************************************



ঋতুপর্ণা খাটুয়া

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্বে উত্তীর্ণ। বাড়ি : পূর্ব মেদিনীপুর। পেশা হিসেবে উল্লেখ্য কিছুই নেই। লেখা ছাড়াও ছবি আঁকতে, ছবি তুলতে ও ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ : এই ছায়াঘুমের পাশে (ডিসেম্বর ২০২২ এ প্রকাশিত)



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন