মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

দীর্ঘ কবিতা * সুধাংশুরঞ্জন সাহা



কুয়াশাবলয় : চার

সুধাংশুরঞ্জন সাহা








জাদুকরী মেঘে মেঘে অবাধ শ্রাবণ,

পূর্বরাগ কথামালা ভ্রমণেই মন।

জীবনের জটিলতা কিছু থাকে চেনা,

অনুমান করা খুব কঠিন কিছু না।

ঋতুর যৌনতা বরাবর টানে চোখ,

প্রকৃতিও পরে থাকে জলজ মুখোশ।

জলের কিনারে বসে ধবধবে বক,

মৎস শিকার ছাড়া নেই ভিন্ন ছক।

মনে মনে ভাবি একা রাত গাঢ় হোক,

জলের উৎসকথা ঘিরে থাক শ্লোক।


জীবনের বাতিঘরে লঘু উৎসব,

কফি পেয়ালার গায়ে কিছু উপশম।

নদী পারাপার করে বিষধর সাপ,

এভাবেই ঘিরে ধরে নানাবিধ চাপ।

নদীতে সাঁতার ছিল সেরা উপহার,

এইসব হাতছানি মুছে দেয় হার।

পৃথিবীর শস্যাবর্তে হারায় সময়,

চেনা ভুবনের রঙ বনভূমিময়।

সবুজ পাতায় বোনা শরতের মেঘ,

আমাদের একদিন দিয়েছিল বেগ।


এই মেঘে ছিল কিছু নিহিত বিপদ,

সেই থেকে খুঁজে ফিরি ভিন্ন এক পথ।

তারপর কী যে হ'লো বুনে বুনে দিন,

অলীক কাব্যের ভাষা খোঁজা নিশিদিন।

বারেবারে খুঁজি শুধু হারানো ঠিকানা,

ভবঘুরে ভাবনায় ছিল না সীমানা।

মনখারাপের বাঁকে অঢেল সংকট,

ভালোবাসাতেই খোলে সংকটের জট।

জলন্ত উনুনে ফোটে খিদের আকাশ,

সেই আকাশেই খুঁজি আলোর আভাস।


আফিমে বুঁদ হওয়া বিকেলের চোখ,

ক্রমশ জেগে উঠছে ভুলে থাকা শোক।

এক পশলা বৃষ্টিতে নেই কোনো সুখ,

অনেক বছর ধরে খুঁজি এক মুখ।

প্রাচীন ঘুমে মানুষ মগ্ন হয়ে আছে,

শেয়ালের ডাক শুনি তারাদের কাছে!

আমার হস্তরেখায় লেখা নেই কিছু,

শস্যহীন মাঠ,নদী ছোটে পিছু পিছু।

ভোরবেলা পাখি ডাকে মুহূর্ত ম্যাজিক,

বাকি সব এলোমেলো কিছু নেই ঠিক।


ফুটপাত কথা বলে নেমে গেলে জল,

সব চোখে চোখ নেই শুধুই কাজল।

সব ঘোড়া ঘোড়া নয়, কাঠের পুতুল,

ভ্রমণের পথে পথে দর্শন তুমুল।

চাকায় চাকায় পথ জামানত জব্দ,

আচরণে ধরা পড়ে অবিরাম শব্দ।

মৃত শামুকের দল গড়াগড়ি খায়,

সমুদ্র সৈকতে গিয়ে মানুষ কুড়ায়।

কুড়িয়ে আনে পাথর লাল নীল সাদা,

সেই রঙে আঁকিবুকি ভরে যায় খাতা।


জীবনের গল্পে যার নেই কোনো নদী,

পদে পদে তার শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি!

ভুরুর অরণ্যে জমে আবছা কুয়াশা,

সেই অরণ্যে কবিরা খুঁজে পায় ভাষা।

বলা না-বলার মাঝে কিছু বীজ থাকে,

নির্মাণ হয়েছে বহু ভুল চক্রে পাকে।

সেই খেদ নিয়ে লিখি আর মুছে ফেলি,

জেনেশুনে তবু আমি সাপ লুডো খেলি।

অন্ধকার জড়িয়েই শুয়ে থাকি রাতে,

ভোরের পাখির ডাকে কাঁচা ঘুম মাতে।













******************************************************************************************************

 


সুধাংশুরঞ্জন সাহা

জন্ম ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৭। বেড়ে ওঠা পূর্ব কলকাতায়। ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক।আটের দশক থেকে লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা লিখেই তার যাবতীয় পরিচিতি । কবিতা ছাড়াও গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ এবং বিদেশি কবিতা অনুবাদ করতে ভালোবাসেন। সম্পাদনা করেন একটি অনিয়মিত লিটল ম্যাগাজিন 'অন্যসাম্পান' । প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ১৬, গল্পগ্রন্থ : ২, ছড়াগ্রন্থ : ২  উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : অপহৃত রাত্রির চর্যাকথা * নিরুত্তর তারার স্বপ্ন * পূর্বাভাস * পাগল চাকা ঘুরছে অবিরাম * একা দুপুর * শ্রেষ্ঠ প্রেমের পদ্য * সময়ের এস্রাজে বেজে যায় অবুঝ দুপুর * বেলুনের কোন জন্মদিন নেই * নির্বাচিত কবিতা ১০০  ইত্যাদি। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন