মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * অমিত চক্রবর্তী



কবিতাগুচ্ছ * অমিত চক্রবর্তী

ভুবনমনোমোহিনী

 







আমাদের ভুবনমনোমোহিনী একাকিত্ব,

হে অবাধ্য মেয়ে, তুমি কি একবার

ফেরত আসবে এই সরু হাঁটা পথে, না কি চালতাতলা এবার

বেআইনি ঘোষণা করেছে ওরা, মুছে দিয়েছে সেই আদিম ফর্ম,

অসংলগ্ন, সমকালীন আলাপ এখন।

আমি একবার বড় পর্দায়, দূর নক্ষত্রের আলো টেনে

ঠিকরোতে চেয়েছিলাম, নৃত্যের তালে হে নটরাজ,

সেই শাশ্বত, সেই ভুবনমনোমোহিনী ভঙ্গিমা তার

জোড়া ভ্রূর, একটি দীর্ঘ চুমুর সফলতা, আর

বাকি সব আধুনিক এই কাহিনীতে,

আমাদের অচল প্রকাশ জীবনমোর্চার

চালতাতলা যার অভিশাপ বয়ে বেড়ালো। 



এখানে মিটার গেজের পরিত্যক্ত লাইন

এখানে মিটার গেজের পরিত্যক্ত লাইন, ট্রেন আসে না আর

ঝাঁকে ঝাঁকে, চেষ্টা করেছিল তারা ভাঙিয়ে নিয়ে যেতে,

তারা দুজনেই, রূপ দেখিয়ে, সোহাগ শাসন, অক্ষমতার

দোহাই দেখিয়ে, তারা দু’জনেই, দিঘি ও বুনোফুল,

জোট বেঁধে, ইস্তাহার বের করে, লুকিয়ে চুরিয়ে চকলেট ভেট,

উপঢৌকন, অনন্ত পিছুতাড়া, ছেঁড়া ছেঁড়া আলোয়,

অসমান আলোয়, রূপ দেখিয়ে, নিয়ে যেতে আমায়

‘সইতে পারি না দাদাবাবু’র নরম অসিব্রতে।

এখানে যে মিটার গেজের ফেলে আসা লাইন,

ট্রেন আসে না আর, পালানো যায় না অভিমান ছেড়ে,

অভিযান তুমি এত স্বল্পস্থায়ী হলে কেন, আমি যে ফের

দর্শনীয় এবং কৌতূহলের জোড়া আঁচে অভিমান,

আমি যে ফের আবছায়া রোগে, হালছাড়া এবং দিকভ্রান্ত।



চঞ্চলা ময়ূরী এ রাত

মন চঞ্চলা থাকে তার আজকাল, ময়ূরী নাচ নয়,

বরং জলস্রোত, বরং বিক্ষিপ্ত ওঠানামার প্রাণঘাতী লয়

বা চিন্তায় অর্দ্ধমৃত, ভেতরে ভেতরে যে এত বড় একটা

তোলপাড় চলছে, তুমি কিন্তু দেখেও বুঝবে না

এ যুদ্ধে সামিল তুমিও।

আমি তাকে দু’ একটা গানের কলি ছুঁড়ে দিই,

বড়দিনে ফলতা যাওয়ার মত দলবেঁধে

“আমি ভয়” বা মৃণাল সেনের ছবিতে যেমন

আচমকাই আসে “হেঁই সামালো” এইভাবে

সামলাতে বলি অন্তরের ধান,

ফের সেই সমর্পণের স্নায়ু, ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসা

ছিনিমিনি, ঝাঁকি,

আমি যে বারবার বেঁচেছি এই গল্প, আমি যে দেখেছি

উচ্ছ্বাসের মাঝামাঝি এসে জড় হয়

পুরীষ স্তুপ, আবর্জনা, অতৃপ্তি।




 







দুই অধ্যায়

যেন শেষ অবধি এবার ভালোবাসতে শিখেছে

এই রকম একটা সম্ভাবনা বুকে ধরে সে ফের

তরুণী সন্ধ্যা সাজে, আর অবহেলারও

সূত্রপাত এখানেই। জোড়া অহংকার অথবা

নিম্নচাপ বৃষ্টির যুদ্ধক্ষেত্রে, এ সবই

এক অদ্ভুত সরলীকরণ,

আমি অপেক্ষা করতে থাকি।

জিতে যাওয়া বোধহয় এখন আর বিকল্প নয়,

একবার অসাবধানে, অসংলগ্ন পা ফেলেছিল সে

সুতো কেটে উড়িয়ে দিয়েছিল ঘুড়ি,

মাটি লেপে সমান করেছিল

দরদালান, অন্দর

তারপর বাকি জীবনটা তাদের চলে যায়

খুঁজতে। 



যে কথাটি ঢেকে রাখে বুকের আঁচল

কখনও বোলো না সখী ব্যথাটা কোথায়, পরিবর্তন

আসুক তার খুঁজে খুঁজে, কখনও সে দ্রুতগতি,

কখনও আদরে ধীর, সর্বদাই ঘেঁষে থাকবে,

সর্বদাই মুখচোরা, মন্থর, আলোতেও থতমত,

পুরোনো জায়গায় ফেরত আবার, খুঁড়ে খুঁড়ে

সংশয় জমানো।


                        অথচ কাউন্টার বলছে এখানে

সোনারুপো, প্লাটিনাম, কোনো ধাতুই নেই,

সে কিন্তু সুনিশ্চিত, সে কিন্তু ভেতর থেকে জানে

ব্যথাটা এখানেই, কখনও বোলো না তাকে

কাঁপুনির কথা, এপি-সেন্টার,

ঘুরুক সে তার ছোট কুঠুরিতে, রমরমিয়ে উঠুক

চোরা-অভ্যন্তরে প্রতিফলন, নীল হোক তার

স্কুবা ডাইভিং। তোলপাড় করুক সে আবার

জল সাগর প্রবাল দ্বীপ, আকাশের অনুমিত ধ্যান বা

অতি সূক্ষ্ম নয়ন এবং অন্তরীক্ষ।



*********************************************************************************************



অমিত চক্রবর্তী

অমিত চক্রবর্তীর জন্ম সোনারপুর অঞ্চলের কোদালিয়া গ্রামে। ছাত্রাবস্থায় অনেক লেখা এবং ছাপানো কলকাতার নানান পত্রপত্রিকায়। পড়াশোনার সূত্রে আমেরিকা আসা ১৯৮২। এখন ক্যানসাস স্টেট ইউনিভারসিটি তে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ও প্রাক্তন কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের ডিন । প্রকাশিত কবিতার বই দুটি - "অতসীর সংদারে এক সন্ধ্যাবেলা" (রা প্রকাশন ২০২১) ও "জলকে ছুঁয়ো না এখানে" (মিসিসিপির মেঘ প্রকাশন ২০২২)। দুটি পত্রিকার সহ সম্পাদক - উত্তর আমেরিকার নিউ জার্সি অঞ্চলের পত্রিকা "অভিব্যক্তি" এবং "উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা" কবিতা পত্রিকা। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন