কবিতাগুচ্ছ * গৌতম কুমার গুপ্ত
অভ্যাস অনভ্যাস
সমস্ত অভ্যাস অনভ্যাসে রেখেছি লুকিয়ে
একদিন সযত্নে দেখাবো খুলে
চর্চিত অনভ্যাস।
দোহাই গুটিয়ে নিও না দিনরাত্রি
তপ্ত হাওয়ার পরে
উচ্ছৃংখল কালবৈশাখী আছে।
মেঘে ভেঙে আসে বজ্রবিদ্যুৎ
অভ্যাসে আমার দধীচি হুংকার
ঐশ্বরিক আমার মজ্জাগত।
আমার অনভ্যাসে মুষলধার
অভ্যাসে বৃষ্টির পরিকাঠামো
বন্যা ও ত্রাণ আছে।
গান
চোখে নামে মৃদু কান্নার গান
দ্রুত স্বরলিপি ধুয়ে নামছে
বেতাল মাতাল সুরের ঐকতান
এই পৃথিবীটা কান্নার জলে ভাসছে।
আদরে মাখা এতোদিন আছে
কখনো মৃত কখনো বা বাঁচে
কখনো বিরল সন্ধ্যার আলো
মুখের গোপনে বিষাদ চমকালো।
কবে পাবো সেই সুরের পৃথিবী
কান্না মুছে একটি হাসিমুখ ছবি
জলস্থল মেনে আবারো অবগাহন
সুখদুঃখে ধন্য ধন্য এবার যাপন।
স্মরণে বরণে কাটে যেন বারোমাস
সুখী থাক চাঁদ না হোক আমার সর্বনাশ।
কথা ছিল
কথা ছিল
শহীদের মৃতদেহগুলি সৎকার হলে
আমরা ফিরে যাবো উজ্জীবনে
পতাকার রঙে ঔজ্জ্বল্য এলে আরো
স্মার্ত হবো শোকে
বিষাদ স্মরণে
ঘাসমুখে আছে যারা এখনও
ভেড়ার লোমে উষ্ণতা থামিয়েছে
পিঠ ফিরে শুয়ে দেখেছে
এখনো মাঠের সবুজ
ঘাসের চর্বিত চর্বণ অপভ্রংশে
দিবস রজনী একাকার তাদের
মুখোশে রেখেছে মুখ লুণ্ঠনে দুূর্মুখ
কথা ছিল
শহীদের শব সৎকার হলে
ফিরে যাবো আমরা আগামী মিছিলে
যেখানে পড়েছে ডাক পায়ে পায়ে
খড়কূটো
ডুবে গেলেই খড়কুটোর খোঁজ করি
সাঁতারজলে হাত পা ছুঁড়ি
ভাসায় আবার ডোবায়
পায়ের নীচে মাটির ওম খুঁজি
একটি হনন খুঁজে বেড়ায় শব
বাঁচিয়ে রাখি নিজের কলরব
জলের আঁধার ভীষণ কালো
মনের কালি হার মানে
কোথায় যেন বেঁচে থাকার আলো
শুধু হাতছানিটাই জানে
দূরের নৌকা একটু যদি আসে
খড়কুটোটাই বাঁচিয়ে রাখতে ভাসে
খিদে
খিদে নেমেছে পথে
খিদের আওয়াজ তুলে
জলের দরে স্বপ্ন দিয়েছি বেচে
অ্যালুমিনির থালায় খিদের দানাপানি
রোদে পোড়াই পেটের খিদে
খিদের চোখে পোড়া রুটি
শকুন পাশব ডানা তুলে
খিদের শবে ঠোঁট বসায়
খিদে জ্বলে চোখের ভাষায
পেটের আগুন দাউ দাউ
*************************************************************************************************
জন্ম ১৩৬৭ বঙ্গাব্দে বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া থানার গোপালনগর গ্রামে।বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের বাসিন্দা।প্রথম জীবনে সাংবাদিকতা পরে ই সি এলে কেন্দা এরিয়া বিভাগের কর্মী ছিলেন।২০১৯ সালে চাকুরিজীবন থেকে অবসর গ্রহন করেন।শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞান এবং কলা বিভাগে স্নাতক।পরে পার্সোনাল ম্য্যানেজমেন্ট ইনডাসট্রিয়াল রিলেশনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন।আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি শুরু।'কালকেতু' নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তো বটেই ওয়েব ম্যাগাজিনেও গল্প কবিতা প্রবন্ধ লিখে থাকেন।এ পর্যন্ত তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ " সময়ের এই জলসাঘরে,'স্বভাবের সিলেবাস','অক্ষর ভাইরাস' এবং 'বিষুবরেখার পাখি' প্রকাশিত হয়েছে।কয়েকটি নাটকও লিখেছেন। ইতিমধ্যে "কয়লাক্ষেত্র "এবং কৃষ্ণগহ্বর নামে দুটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।।শীঘ্র একটি কাব্যগ্রন্থ 'যদি হৃদয়ের কথা বলো'প্রকাশিত হতে চলেছে।


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন