মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

গুচ্ছ কবিতা * দীপংকর রায়



কবিতাগুচ্ছ * দীপংকর রায় 








পাথুরে বোধনের কান্না শুনি কাশবনে

উৎসর্গ : দীপ্তিশিখা দাস


১২৫.


কোন সে সুদূরে

আমার সকল ভার 

         দিয়ে যাবার 

ইচ্ছেরা সব রাজার মুকুট চায় , 

                              জানি না তো !


জানি কি তার আসার 

               খোঁজ

জানি কি তাঁর যাওয়া !


পাওয়া আর না পাওয়া জুড়েই গাই         

গাই এমন সে গান 


সে কি করে হায় হায় !


আয় আর না আয় 

এই তো সেই অসহায় 


যা তাঁর ইচ্ছা 

ও অনিচ্ছায় 


পায় তাই-ই ----

বোঝে না কেউই 

বোঝে না বলেই 

সুরটি চলে অসীমেই 


অসীমেই হারায় 

যা হয়তো কেবলই স্বাতন্ত্রের ---   

আছে কি কিছুই !



১২৬.


গতরাতের গভীরতায় 

হেঁটেছিল যে সব তন্দ্রারা ,

তাদের নিঃশব্দ পদচারণা 

কোনো এক মনমরা বিকেলের ঝুঁকে পড়া 

ভাষ্কর্যের অন্তরে প্রাণ পেতে পেতে 

কারো কানে পৌঁছেছিল কি সে সব কথা ?


বিস্ময়ের সব না হয় থাক

রাতের আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ;

সত্যিই চেয়েছিল কি !


সকল ঘুমের পেছনের ঘাড়ে                                      

কোনো আকুতি তার 

ছিলো কি কখনো ?

বলো , বলো তো 

একবার শুনি সে কথা ,

ওই ফাল্গুন রাতের হাওয়াদের সবটুকু 

    ভাবতে ভাবতে

             ‌না হয় ;


আহা !

কোনো এক সন্ধ্যার অন্ধকার পলাশ বনের ধারে 

হয়েছিলো কি দেখা‌ 

         কখনো !


হয়তো হয়েছিল, হয়তো বা নয় 

সে বিকাল সকলই এক গভীর রাত্রির স্বপ্ন- অভিলাষ যেন ;

বর্ণমালায় যে অদৃশ্য কথপোকথনের ভাষালিপি রচেছি  উভয়ে , 

নাকি সে সব সবই একা একার 

না ঘুম শীতরাত্তিরের ভেতর নিয়রেরা জন্মজন্মান্তরে যেতে যেতে 

যে সব মানুষের চোখ পেয়েছিলো বুঝি 


পৃথিবীর পথে পথে আমাদের মতোন ....?



১২৭.


এই রাতে

    কার ঘুমের ভেতর 

হামাগুড়ি দিয়ে চলি যে ,

ঘুমের ঘোরে পাখা মেলিয়ে 

একা একা পিঁপড়ে

          হয়ে গেলাম ?


কতকাল ধরে এই সব 

স্বাদ আহ্লাদে জড়িয়ে 

জীবনকে অনেক পুরোনো, বাসি করেছি যে 


সে কথা কে আর ভাবে !


জানতে জানতেই 

কত কিট পতঙ্গের ভেতর 

নতুন হলাম ,

নাকি পুরোনো সে সবই ---- 


তবুও মেটেনি স্বাদ

সত্যিই মেটেনি কি ?


 মেটেনি বলেই তো কারো আঁখিপল্লবে 

রেখায়

থমকে থেমেছি যেন ;


কোন সে চেতনায় ?


সে সবের নৈরাজ্যের কথা কি আর বলি 

সে সব না হয় থাক 

আর একদিন থেমে গেলে ঘুর্ণন 

বসা যাবে নিরিবিলি এখন এই যাত্রায়  

পথে পথে না হয় 

চলুক কথপকথন ;

ঘুমের দেশের ঘোরে 

ঘুরে ঘুরে

আর একবার দোসর খুঁজি

হন্যে হোক সে, পাগল হোক 

তার চোখের নিচের কালিতে  

ডুবে থেকে খুঁজে ফিরি , যে পথে সে আমাকে হারায় 

আমিও কি হারিয়ে তাকেই খুঁজে ফিরি ?


যে পথের অন্তরায় কথা 

সেই জানে শুধু ।













১২৮.


বাতাসে বসন্ত 

রোদের আলোর ভেতর 

কারো অনুপস্থিতির ঘুঙুর বাজছে ।


সেও কি তালহারা ?

গতরাতে অন্য এক 

সম্ভাবনার কথা উড়ে আসছিলো বাতাসে ।

নাকি সে রাত ছিলো 

বিছানা জোড়া অস্থির পায়ের আগমন বার্তা শুধুই !

তারাদের হাহাকার ছিলো আকাশ ব্যাপ্ত ;

যেসব অসাড় নক্ষত্ররা বহুকাল ঝাপসা নিহারিকায় 

অস্পষ্ট মেঘ মেখেছিলো শরীরে ,

সেইসব ঘুর্ণয়মান মহাশূণ্য থেকে ঝড়ে পড়ছিলো 

যেন কত সব নতুন নতুন নক্ষত্ররা -----


পৃথিবীর চেয়ে আরো সুন্দর হতে পারে কি কিছু ?


কারো ঠোঁটের বক্র রেখায় এঁকেছিল 

কতকাল ধরে মানুষেরা তাদের মানসীর মুখ !

নাকি তারা শুধুই মানুষ না ,

মানবিক পুরুষ্টুতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে অকল্পনীয় অভিলাষে 

তারা আরো অন্য অনেক কিছু হয়ে গেছে অনন্তকাল !

দিকশূন্যতাও ছিলো , ছিল বারবার;

থাক 

সেসব যা ছিলো ,

আজ এই আলোর কোলাহলের ভেতর 

অনেক পৌষমাস চলে গেলেও ছুটে , 

আমরা যে উৎসবের আগমনী অনুভবে এসেছিলাম 

ভেঙে ভেঙে 

তাতেই যেন সকল সুস্থতার লক্ষণ বার্তা শুনিয়েছিল কেউ ---- 

তাদেরই অপেক্ষা ঘিরে আছে 

        সকল ঋতুসম্ভারে ..?


তুমি এঁকে থাকো না কেন 

যতোই কালো দাগ গতরাতে ----

যাত্রাপথের জীবিত বা মৃত নক্ষত্রদের ভেতর সে 

লাবন্যবার্তা থেকে রেহাই নেই কারো ----


সে গুঢ় সত্য বলে দিও না হয় তুমিই তাকে ।



১২৯.


সময়ের সত্যগুলি ঢেকে যাচ্ছে 

সাজানো পাতা ঝরায় যেন ;

কোন দিক থেকে তাকে ডাকি ?

কোন দিকে চলে গেল মাথা ঘুরিয়ে 

সকল ছায়ারা  

উল্টে বিষাদের মঙ্গল ঘট !


সে কি গাছ হয়ে 

হাওয়া দিতে এসেছিলো , নাকি পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে রহস্যরা 

অনেক চিৎকার শুনিয়ে চলেছে 

আমাদের হৃদয়ে বহুকাল ---- 


তাও বর্ণমালায় সাজিয়েছিল কত রং ;

রঙে রঙে আজও  হন্যে হয়ে 

খুঁজে চলি.....

পথে পথে ঘুরে চলি দিনান্তের পর দিনান্ত 


কেউ সাজিয়ে দেয় না একমুঠো শান্তি !

তিরস্কারে অপদার্থতা বোঝাতে চাই যতোই-----

চাই সেই সত্যের নির্মলতা ,

কেউ রাখে না হাত ।

হাতের এমন এক দীর্ঘ ছায়া ঘুরে ঘুরে 

কেবলই এগিয়ে আসে 

যখন সব মানুষের মুখ ভুল করে বসি !


ভুল হয় কত পাহাড় পর্বত 

গাছেদের , মাঠেদের,  পথেদের 

কে যেন কুন্ডলী ছড়িয়ে ফনা তুলে  চারদিকে ঘুরে চলে ;


কোন দিকে ঘুরিয়ে ধরি শরীর ,

যেখানে বাদ গেছে 

সকল দংশন ?


১৩০.


পথের যাত্রা শেষ হলে 

ঝালমুড়ির স্বাদও ভুল হয় একসময় ।

কত কষ্টে পাশের আসনটি ছেড়ে 

উঠে গেছিল দূরে যে মানুষটি

তার কথাও কি মনে থাকে , 

যখন নির্ধারিত কল ঘরে স্নানে যেয়ে দাঁড়াই ।


আত্ম সুখে শীতলতা ছুঁয়ে যায় 

যতদূর অবধি আকাঙ্ক্ষা 

                                  আর আকাঙ্ক্ষা....


একদিন সব দিনলিপি লেখা না হলেও ,

তাঁর কথাটি তার হয় না কোনোদিনও

যে আমাদের যাত্রা পথে ঝুঁকিয়ে দিয়েছিল মানবতার ঘাড় ----

আমাদের সব পথের ছবিই ঝাপসা হবে একদিন , 

যে মুখের গর্জন তেলেই চকচক করে উঠুক না কেন দেবী মুখ ; 


তখন কাশির শব্দে চরাচর মোহিত হবার নয় আর 

তখন তুমি যাত্রাপথের বাথরুমটি নোংরা করেই নেমে গেছো 

এটাই বড় সত্য ।


*****************************************************************************************************

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন