মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

দীর্ঘ কবিতা * সব্যসাচী মজুমদার



কবিতা, কবির চেতন-অবচেতনে লালিত কোনও এক চকিত মুহূর্তের তন্ময়তার ফসল । দীর্ঘ কবিতা যেন তারই প্রলম্বিত রূপ । একটি সার্থক দীর্ঘ কবিতা ,কবির কতখানি অভিনিবেশ দাবি করে ,সমস্ত সত্তার কতখানি উজাড় একাগ্রতা  ছুঁতে চায় ,তা বলার অপেক্ষা রাখে না । তেমনই মনোমুগ্ধকর একটি দীর্ঘ কবিতা এবার আমরা পড়ব , কবি সব্যসাচী মজুমদারে  কলমে ----



পিতা ও পররাষ্ট্র

সব্যসাচী মজুমদার


ভূপালি বাজে অতিমারির দিনে

বসুন্ধরা সে সব আশ্বিনে

চীবড় খুলে দেশের সব দায়

চাপিয়ে দিলো বিবিধ তমসায়


তবে সরল নদীর আশেপাশে

যে সব গ্রাম বর্ষাকালে ভাসে

তাদের মুখে হুলুধ্বনি শুনে

পিতার দাঁতে কণ্ঠনালী ভ্রুণের...


এগিয়ে যায় অনিরতম জলে

দূরে মানুষ মনসামঙ্গলে

পুজো করেন।মশাল জ্বলে থাকে...

রাত্রিকাল খেয়েছে বনগাঁকে


খেয়েছে লেখা গর্ভবতী শোল

দিগন্তরে অপাড় কলোরোল

সাতটি ভাই চলেছে জন্নতে

পিতার মতো আধুরা সংকটে


আকাশজুড়ে হিরণকামী মেঘ

যোনি বদল হলো নিরুদ্বেগ

তোমার ঘরে চির দলিজ স্হান

তোমার ব্যাসে জলের বিশ্রাম


ওপাড় মেঘে আনুমানিক রং

ওপাড় মাঠে একা সমর্থন

ওপাড়ে যায় একটি শারদীয়

আরণ্যক মেয়ের গান দিও


গানের গায়ে ছোটোবেলার শীত

কাঁপছে মম হুজুর নৈঋত

শ্রাবণ শুধু জলের ম্রিয়মান

ঢুকছে ঘরে যেন গহর জান


গভীর রাতে বেজেছে দিশাহারা

আমরা যেন স্বয়ংক্রিয়তারা



পিতা এগোয়। দূরে বনের ঘ্রাণ

পিতা মফসলের দেবযান

দেখে এগোয়। রেখে এগোয় নদী

মহাবোধির যেটুকু সংগতি


চামড়া খোলা মাংসস্রাবী দেহ

জিভের গায়ে নিহিত সন্দেহ

আযোনি দেহ বাঘের প্রিয়পাঠ

পিতারা বয় যগ ডুমুর কাঠ


বাঘের দেহ বাঘের নখ দাঁত...

দূরে সহজ বাজে অকস্মাৎ

পিতা ভাবেন শ্রাবণ শেষ করে

পৌঁছে যাবো প্রণীত গহ্বরে


আকাশ ফেটে বৃষ্টি নামে খালি

ভ্রুণের গায়ে পরমাপ্রজ্ঞানী

শ্যাওলা রাখে, পিছলে রাখে মুখ

নেউল বড়ো মাংস উৎসুক


অধিকতর বৃষ্টি নেমে এলে

পিতৃপুঁজে জিভ রেখেছে হেলে

কচুপাতায় ঢাকা মাঠের শেষে

বাবা ও ভ্রুণ মেয়ের মতো মেশে


তখন‌ও জল ঝরছে সদুপায়ে

কেন্নো লাগে ভ্রুণের কাঁচা ঘায়ে

পিতা ভাবেন নোহসি দেশরূপ

সে সব দেশে বল্মীকের স্তূপ

স্তূপের নীচে পিশাচভূক সাধু

নীরব... করে সরেজমিনে জাদু


জাদু ছড়ায় কামনা বাসনায়

লিঙ্গস্বাদ বাতাসে মিশে যায়

দেশের শেষে মরীচ ঝাঁপি থাকে

এ সত্যটি শেখালো হত্যাকে



তাহার পর দ্রাবিড় বিন্যাস 

রক্ষ কূলে প্রণীত উচ্ছ্বাস

গতরে গান। গানের মতো তারা

তারায় তমো জলের ইন্দারা

তারায় রেতঃপাতের ধ্বনি হয়

অগ্নিভূত বুদ্ধে সমুচয়

সমর্পণ করেও সহসায়

পিতায় হাঁটে...পিতারা হেঁটে যায়...



দেশের শেষ তরাসভূমিটিকে

ডায়েন খায় খেয়েছে বল্মীকে


আবার জাগে হাবিয়াতমশুক

অস্থি দায়ে পিতার ভিক্ষুক

জাঙাল ভেঙে খাঁ খাঁ-র দিকে যায়

গণখামার দোষের ইশারায়


নিরুত্তাপ চন্দ্রবোড়া জ্বলে

তাল তলের সমূহ নিশ্চলে


আহা নতুন পাতার নীচে ছায়া

শ্রাবণ স্বরে অরুন্তুদ মায়া

ছড়িয়ে থাকে যতটা পিতা যায়

ভ্রুণের আয়ু স্বদাঁতে সামলায়


ঘনতরুর সুফিয়া ঘ্রাণ আসে

খণ্ডগলা ভ্রামর সন্ত্রাসে

গড়িয়ে পড়ে। স্বয়ংক্রিয় যাক...

বাঁ দিকে গেলে বস্তিদেশে কাক

ঠুকরে দেয়।ডাইনে ধনেশেরা

পিতা এখন দৃশ্যপটে ঘেরা--


হননে ফুল অতীন্দ্রিয় হয়

হনন মানে ভ্রুণের অভিনয়

প্রেতের মতো প্রত্ন দিয়ে খোঁজে

আলোর থকথকানো সংকোচে

কোথায় লেগে রয়েছে শ্রেণিহীন

অলাৎ নদী,সরমা আশ্বিণ...

কোথায় নিধি কীটের রজঃ বয়

জবালা বোঝে---সকল‌ই সঞ্জয়...


দূরগামীর চাঁড়াল হেঁকে যায়

অস্ত্র হারে সকল কিসসায়

গেরিলা তবু অনুথ্থিত স্তন

পেরেস্ত্রৈকায় বাজছে কীর্ত্তন


এসব শিলা লেখের মাঝখানে

পিতা হাঁটেন মৃগয়াতীত টানে

উর্ধ্বাকাশে অবধূতের লাল

 কড়িতে ওঠে সরল মৈষাল


কিন্তু যার দু'হাতে সমভূমি

কিন্তু যার গর্ভাশয়ে রুমি 

বয়াৎ ছুঁড়ে দিলেন যোগিয়ায়

সেও কী ভোলে এমন অধরায়!


কেবল দেখে সরেজমিন ফুঁড়ে

দাউ উঠেছে সীমানা সন্তুরে

পুড়ে যাচ্ছে দ্বিখণ্ডিত ধাতু

পুড়ে যাচ্ছে ভাদ্রভীত ভাদু

পুড়ে যাচ্ছে অসীম বিদূরথ

পিতাই একা সবার তৎসৎ


কালিয়াচকে কেবল হেঁটে চলে

সাধিত শবে লিপ্ত বিহ্বলে

পিনোদ্ধত গোধূলি পুড়ে খাক

পিতারা যাক স্বনন তুলে যাক


স্বননে দেশ স্বননে অসীমাভ

স্বননে থাকে নিউক্লিয়ার সাপ‌ও

সামনে রূপকথার পিরামিড

হাইডেগার যতটা পণ্ডিত

উঁচু খাদক ঠুকরে খায় জোঁক

পিতা ভাবেন জননী সম্ভোগ!

পূনর্মিদঃ রাত্রি জাগে দেশ

যেন পরীর মতন দরবেশ

অশনীমিথে সাহানা থরোথরো

ধরো জীবন আঁকড়ে তাকে ধরো


মোহন জানে কবির সংশয়!

যেখানে শুধু দুঃখটুকু হয়


এসব কথা উপনিবেশ রাতে

লিখেছে পিতা নিজের হিংসাতে

নিহত রোদ সবার উদ্গাতা

পাখির দিকে তাকিয়ে আছে ত্রাতা


তবে যখন সন্তানের দেহ

শ্রাবণ শেষে একটা কালো মেহ

পিতা হাঁটেন নিয়তি হেঁটে যায়

দৈবকের মতন একলায়


তবুও পররাষ্ট্র শুক্রের

গন্ধ বয় ধর্ষণের জের

এসো না জল,বসো না জল,বুকে

বেঁচে থাকার তামাম যীষ্ঞুকে

লোহিত আলো  শব্দ ভেদ করে

দিয়েছে মানচিত্রখোয়া ভোরে

বিসর্জিত আলোর মতো প্রেম

 

সারিরা গান যেভাবে গাইতেন

যেভাবে পাটমাঝির বুক কাঁপে

পিতা হাঁটেন বীর্য সন্তাপে


আহত আলো অনিঃশেষ আলো

কেবল পরজন্ম থেকে জ্বালো

ভ্রুণের মুখ শূন্য হয়ে যায়

পিতা সিন্ধুঈগল ভরসায়

হাঁটে ভিতর পিছল থেকে স্রোতে

লিখিত হয় সুবচনীর ব্রতে


পিতার দাঁতে কণ্ঠনালী ভ্রুণের

পিতা হাঁটেন স্বগুণে নির্গুণে








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন