স্বপ্ন স্বপ্ন
দেবাশিস সাহা
আয় মন বেড়াতে যাবি
কী হবে হলুদ মেয়েটির কথা ভেবে
স্বপ্নারতি
ঘুমিয়ে পড়ো মেয়ে,
দেখা হবে স্বপ্নের নদী ডাকলে
দেখা হবে স্বপ্নের পরে হৃদয়
খুলে রাখলে।
হাজার রকম ঝঞ্ঝাটে মন ঝালাপালা
আয় স্বপ্ন পাখা মেলে
মামুলি সব দুঃখ-সুখ এবার তোরা দূরে পালা
থামবে আমার স্বপ্ন দেখা হাতের মুঠোয় স্বর্গ পেলে।
না যদি পাই
তবু আমি দিনে রাতে স্বপ্ন এঁকে যাই।
স্বপ্ন আমার মামার বাড়ি স্বপ্ন আমার মাসি পিসি
স্বপ্ন আমার দোয়েলপাখি স্বপ্ন আমার বুকের রাখি
আয় স্বপ্ন পাখা মেলে
পাখার ভেতর হেসে খেলে।
স্বপ্নারম্ভ
ঘুম আয় স্বপ্নের মধ্যে, এভাবে
লাফিয়ে উঠলে সোনালি খরগোশ
আমাকে নিয়ে প্রকৃতির সে কী আসম্ভব ইয়ার্কি!
বুকের উপর উবু হয়ে পৃথিবীর সমান বয়সী একটা পাখি
উড়তে পারছে না কিছুতেই
অথবা ওড়ার মতো আকাশ পায়নি বলেই
এই বুক তার শেষ আশ্রয় জেনেছে।
দীর্ঘ রুপালি চোখে খরগোশ দেখছে পাখিটিকে
পালকে জিরাফ-স্তব্ধতা,ডানায় ভয়
গভীরে ঢেউ খেলে যায় হাজার নক্ষত্র,নদী ও আকাশ
অথবা নদী নয়, নক্ষত্র কিংবা আকাশও না
হাজার শতাব্দী ঢেউ খেলে যায় পুরোনো ও নতুন
পৃথিবীর সমস্ত ঘড়িতে তখন থমকে সূর্যাস্ত
কী করে যেন খরগোশ জেনেছে
আকাশের কোল ছেড়ে তাই বুঝি আমারই ভাঙা পাঁজরে
এসে হাঁপাচ্ছে সপ্তর্ষি
মাথা পেতে শান্ত শুয়েছে কালপুরুষ
আর
যেখানে আমার পাঁজরে আমার কলজেয় হাজার-হাজার
শর্করালোভী পিঁপড়ে
তার ঠিক উল্টো দিকে উঁকি দিচ্ছে শুক্লপক্ষের চাঁদ
শার্ট-প্যান্টে জড়িয়ে যাচ্ছে শুকতারা
চাঁদ থেকে ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছে চন্দ্রবিন্দু
বুকের মধ্যে পা ডুবিয়ে পাখি দেখছে এসব,
দেখছে মহাকালের বুকের ওপর দিয়ে
সপ্তর্ষির কপালের ঘাম মুছে দিয়ে খরগোশ ছুটছে
কালপুরুষর দিকে
ছুটছে, চাঁদ-তারা-গ্রহ-নক্ষত্রের ফাঁক-ফোকর দিয়ে
দিন- রাত্রির সীমানা হারিয়ে
ছুটছি আমিও; আমার আগে মন।
কুচ্ছুটি নেই পরনে তখন আমার
দেশে কি নেই একটা তাঁতি কিংবা চামার?
নাকি সমস্ত পৃথিবী প্রার্থনার মতো লেপ্টে আছে শরীরে-শরীরে
আপাতত পড়ছে না মনে, পড়বে হয়তো একটু পরে
আগে করো তো প্রকাশ
মন, তুমি কার ক্রীতদাস ?
কার জন্যে তুমি পাখি হও বুক চিরে নদী হয়ে বও
কার জন্যে তুমি কাঁদো সংসার কষে বাঁধো
কার জন্যে তুমি মেঘলা আকাশ ভেজো শীত-গ্রীষ্ম বারোমাস
কার জন্যে তুমি কেবলই ছবি জনমে-জনমে হও কবি
কার জন্যে তুমি উদাস ফাল্গুন উৎসাহে ছোটো দ্বিগুণ
কার কথা তুমি ভাবো ভুলে যাও কাকে
তুমি ছাড়া এ পোড়া শরীরে কীই-বা আর থাকে
মন, তুমি কার ক্রীতদাস
যারই হও, কোরো না আমার এমন সর্বনাশ
স্বপ্নসন্ধি - এক
আমার স্বপ্ন আছে, আছে স্বপ্নের ভেতর ঔই সোনালি খরগোশ
বাবা আমার পার্থ বোস
সাতে নেই, পাঁচেও না
এই আমি, দেখো, হাড়গুলো যাচ্ছে গোনা
তোমার জন্য আমি তো ভাই
পারব না হতে ব্রজের শ্যাম রাই।
পারব না, কেননা -
আমার অস্থি-মজ্জায় আমার স্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে আমার
প্রত্যেকটি ভাসন ও নিমজ্জনে
ইতিমধ্যে আরও গভীরে নেমেছে মধ্যরাত
রাতের ভেতর সোনালি খরগোশ হারিয়ে যাচ্ছে
একটু একটু করে,অথবা
খরগোশই রাত হয়ে ডাকছে বুকের ওপর নিশ্চিন্তে
পা ডুবিয়ে বসা ওই পাখিটিকে।
কিন্তুু যেহেতু
পৃথিবীর সমস্ত ঘড়িতে তখনও সূর্যাস্ত বন্দি নির্জন ডায়ালে
পাখির বদলে কান্যকব্জ থেকে উড়ে এসে একটা চড়ুই
প্রণপণে ছড়াচ্ছে মরণাস্তিক খই.... রাতের সীমাহীন পর্দা ফাঁক করে
খরগোশ উঁকি দিয়ে দেখছে এসব
দেখছে, কয়েকটি খয়েরি ইশারা বিদুৎ চমকের মতো
কীভাবে ছিন্নভিন্ন করছে তোমার পুষ্প উদ্যান
আর শরীর হারিয়ে ক্রমশ তুমি হয়ে উঠছ দূরের বলাকা
গ্রাহ্য করছ না কিছুই-
কোথায় যাচ্ছ তুমি? কোন মহা অজানায়?
আর একটু না হয় শ্তনেই যাও।
স্বপ্নসন্ধি- দুই
বোনটি আমার স্বামীহারা ভাগ্নেটা কঙ্কালসার
দিন চলে যায় কোনোমতে করে ধারটার
পোড়া রুটি আলু সেদ্ধ ভাতে- ভাত
এই খেয়ে যাচ্ছে কেটে দিন রাত
বেকার আমি বয়স চৌত্রশ বুকে যক্ষ্মার বিষ
পরোয়া করি না
বউয়ের না হয় দিতে পারি না সোনা-গয়না
দু-একটা টিউশন অবশ্য করি
চাকরির চেয়ে এখন আমার পুষ্টিটাই বেশি দরকারি
ছোট্ট মেয়েটা আমার নাম তিতু
শিয়রে দেখছে সবসময় ওত পেতে মৃত্যু।
ও ভাই মৃত্যু
কী ঝামেলায় যে জড়িয়ে পড়েছি
এখুনি এসো না
একবার গেলে ফিরে আসার ইচ্ছাও করি না আর
এখানে কোথায় আমি আবার আসিব ফিরে
আসিবার ইচ্ছা যদি হয়, তুমি এসো, হে তরুণ কবি
রেখে যাব না-লেখা কবিতার ভাষা
তুমি যদি পারো আর এক পদ্মা খুঁজো হৃদয় খুঁড়ে
জলের গভীরে পারো যদি খুঁজো গঙ্গা আর এক
খুঁজো একাত্তরে গুলিবেঁধা ফুসফুস আমার,রক্তভেজা
বাবার ছেঁড়া-পাঞ্জাবি পাজামা ,তুমি যদি পারো
খুঁজো হারাল কোথায় আমার শৈশবের খেলার মাঠ
নাটাফল, জলপাইআটি, মার্বেলগুলি....
খুঁজো হারাল কোথায়
পুষ্পদি-পারুলমাসি-পরাণমাঝিরা
ভেসে গেল কোন্ ঝড়ে সার-সার নারকেল - তাল-তমাল
খুঁজো শূন্য গোয়াল, নির্জন পুকুরপাড়,ভাঙা ঘরদোর
দোরের নিভৃতি।
তুমি যদি পারো কাঁটাতার মুছে
আংটির বদলে আমার দুঃখী
মায়ের কান্নার পাশে
জেগো সারারাত। আর পারো তো
সূর্যের কাছে চেয়ে এনো অন্য সকাল তোমার কবিতায়
এই মাঠে-ঘাসে অই শব্দ ও শিশিরে রইল-
আমার দুঃখ-সুখের চৌত্রিশ বর্ষা-বসন্ত
যদি সময় পাও দেখো পিছন ফিরে
ছল ছল চোখে কে ডাকছে তোমায়
কার চোখে হারিয়ে গেছ তুমি
চোখ তুলে দেখো।
ফিরে যদি নাও আস আর,মনে রেখো
এই বন, এই কুয়াশায়
একদিন হেঁটেছিল কেউ.....
স্বপ্নান্ত
কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আহা, মন কি পিছু ফিরবে না আজ আর
নাকি তার ছুটে চলার কাছে
এটুকু সত্যি বুঝি সত্যি নয়
তাই এবারও পিছন ফিরল না সে।
অথচ---
আজ কতদিন পর কাক ও কল্পনা চলেছে পাশাপাশি উড়ে
উড়ছে ক্রোধ,অগ্নি ও শিহরণ
উড়ছে
বাদামের খোসার মতো হলুদ বিবর্ণ জীবন
উড়ছে
পারুলমাসি,পুষ্পদি তোমাদের চাপা কান্না আর দীর্ঘশ্বাস
উড়ছে
তুহিন মেরুর মতো বরফ শীতলতা
প্রগাঢ় আলিঙ্গনে এসব কিছু ছুঁতে
মন,তুমি কতদূর যাবে?
কতদূর গেলে যাওয়ার অনির্বাণ সত্যে
ডুবে যাবে তুমি?
বুঝি না
মেঘ পেতে শ্তয়েছে যে বালক
নদীকে ডেকে বন্ধুর মতো কাঁধে রেখেছে হাত
ভিড় বাসেও
সূর্যাস্তের মতো শান্ত যার পা ফেলা
ফালতু তাকে কেন ভ্রমন শেখাও
আজ যেমন কালও
বিষণ্ণ বিকেলের মেঘ বুক পকেটে ভাঁজ করে বাড়ি ফিরেছিল সে
বিপরীত বালিশ বুকে চেপে
যখন আর সব শর্মিষ্ঠা কিংবা সুস্মিতা
সূর্যে- সূর্যে অনেক ঘুরে
বালক জেনেছে এমন
নাকি জানেনি কিছু ---
ঘুম আর স্বপ্নের মধ্যে
লাফিয়ে উঠলে সোনালি খরগোশ
শেষ বিকেলে পৃথিবীর সমান বয়সী যে পাখি
পাঁজরে এসেছে উড়ে
কিছুতেই বলে না তাকে
কী এক বিষাদগাথা এতকাল ছেলেটি রেখেছে
বুকে চেপে,মন তুমি তো জানই
বুক শূন্য করে কবেই সে দিয়েছে উড়িয়ে
বুকের যত পাখি।
পৃথিবীর প্রথম রোদের দিকে বার বার উড়ে যায় সেইসব পাখি
ফিরে আসে আবারও উড়ে যাবে বলে
শেষ রোদের দিকে
ডানার শান্ত অহংকারে পাখিটি জেগে আছে।

খুব সুন্দর! পড়ে মুগ্ধ হলাম। কবিতায় একটা সুর বয়ে গেছে সমান্তরাল ভাবে।
উত্তরমুছুন