' যে আমার অনন্তের পাখি, যে আমার হাজার পৃথিবী, / অনন্তের অভিলাষ ' সুতুপা নামের আড়ালে তাকেই যেন কবি খুঁজে চলেছেন , কারণ সে কবির ' হাজার পৃথিবীর এক পৃথিবী ' কারণ সে-ই কবির ' অনন্ত প্রেম ' সহজ ব্যঞ্জনায় কল্পনার গভীরতা দিয়ে কবি পাঠককে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন, সেই প্রেমের ঠিকানায় । পড়ছি ----
কবি মোহাম্মদ হোসাইন-এর দুটি কবিতা
সুতুপা
পৃথিবীতে অনেক সুতুপা আছে
অনেক নীরা, সুলতা, শাহানা, মাহফুজাও আছে
আছে, প্রিয়তি, গায়ত্রী, বনলতা কিংবা মিথিলা
কিন্তু, আমার সুতুপা একজনই, এবং সে শুধু
আমার... আমারই....!
কিন্তু, আমার যে, যে আমার সুতুপা
যে আমার অনন্তের পাখি, যে আমার হাজার পৃথিবী,
অনন্তের অভিলাষ, সে আমারই
যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, অথচ, যেতে পারেনি...!
যেতে দিই নি...কখনো কোনোদিন...
যাকে আমি বুকে ধরেছি, যাকে আমি রক্তে রক্তে
আরক্তিম করে রেখেছি , সেই সুতুপা
পৃথিবীর সমস্ত সুতুপা চলে যেতে পারে
পৃথিবীর সমস্ত সুতুপা ভুলে যেতে পারে
মুখ ফিরিয়ে নিতে নিতে তুচ্ছ, তীব্র ঘৃণা ছিটাতে পারে
কিন্তু, যে আমাকে ছাড়াতে পারেনি
যে আমাকে হারাতে পারেনি, সেই সুতুপা আজও আমারই...
সুতুপা নামে পৃথিবীতে যত মানুষ আছে
সুতুপা নামে পৃথিবীতে যত দ্বীপ আছে
সুতুপা নামে পৃথিবীতে যত বিপ্লব আছে
কিংবা যত কান্না, কিংবা যত জল, জলের ধারা
যত অক্ষর, বর্ণ, ধ্বনি কিংবা উচ্চারণ
কিংবা ধরো, যদি এমন কোনো বনবীথিকা,
এমন কোনো পাহাড় কিংবা পর্বত, কিংবা হতে পারে
পৃথিবীর সমস্ত বালিকণা, অথবা, ঘাসের উপর ঠিকরে পড়া
কোটি কোটি আলোকচ্ছটা
তাদের প্রত্যেকের বুকে, তাদের প্রত্যেকের চোখে
এমনকি তাদের প্রত্যেকের ঠোঁটে এবং নিঃশ্বাসে আমার নাম
শুধুই আমার নাম.... ভালোবাসা...!
সুতুপা মানে হাজার পৃথিবীর এক পৃথিবী
সুতুপা মানে হাজার রাতের এক রাত
সুতুপা মানে সমস্ত পৃথিবীর সকল সুন্দরের এক সৌন্দর্য...!
আমার একার আকাশ, আমার একার
অনবদ্য এক অনস্তিত্বের অস্তিত্ব...!
কাবুলে, কিংবা কান্দাহারে, মসুলে কিংবা প্যালেস্টাইনে
এখন যে যুদ্ধ চলছে কিংবা
একটু আগে যে বোমা ফেলা হয়েছে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও
আমার সুতুপা সেখানে একা, একা
হ্যাঁ হ্যাঁ, একাই সে প্রথম প্রত্যেক শুভবাদী মানুষের মনে
বিশ্বাস এবং আস্থা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করছে, করেছে...
মানুষকে জাগিয়ে তুলছে সমস্ত অধর্মের বিরুদ্ধে,
সমস্ত অশুভের বিরুদ্ধে
রক্তাক্ত হয়েছে, হচ্ছে... অনিবার...তবু...তবু...!
তবু, এই প্রথম দেখলাম একঝাঁক বুলেটবিদ্ধ পাখি
রক্তাক্ত ডানা ঝাঁপটাতে ঝাঁপটাতে উড়ে যাচ্ছে
সুতুপা নামের কোরাস গাইতে গাইতে...
এই প্রথমবার দেখলাম পৃথিবীর সমস্ত কান্নার বিপরীতে,
সমস্ত বেদনার বিপক্ষে একা একটি নাম জ্বলজ্বলে হয়ে ওঠেছে
সে আমার সুতুপা... আমার অনন্ত প্রেম...!
মানুষ নয়, মেঘের মত একখণ্ড অখণ্ড জলকণা
এ মানুষ নয়
মানুষের মত একখণ্ড মেঘ
আকাশ তাকে নেয়নি
আকাশ তাকে যত্ন করে রেখে দিয়েছে
মানুষের মত একখণ্ড মেঘ !
আমাকেও ফেলে গিয়েছে কেউ
পথে কিংবা প্রান্তরে
এমনও হতে পারে, আমিই এসেছি কোনোকালে
হয়ত, আমিও মানুষ নই
মানুষের মত কেউ !
হয়ত, আমিও একখণ্ড মেঘ
হয়ত, আমার পোশাক, আমার অবয়ব
মেঘের মত কিছু...
আমি যাকে খুঁজি
সে আমাকে খোঁজে না
আমি যাকে চাই
সে আমাকে চায় না
আমার মত সে নয়
হয়ত, আমিও তার মত নই।
হয়ত, সে মেঘও নয়
হয়ত, সে শুধুই জলকণা, মেঘের লাবণ্য
মানুষ হলে মানুষ হত
হয়ত, মানুষ নয়
মানুষের মত একখণ্ড মেঘ
হয়ত, সে মেঘও নয়, মেঘের মত শুধু জলকণা...!
তাকে ছুঁয়ে দিয়েছে আকাশ
অথচ, আকাশ তাকে কাছে রাখেনি
তাকে মেঘের মত রেখেছে জলকণা
রেখেছে বিন্দুবিন্দু, হিম শীতলতা
তার চুলগুলো মেঘ, খোলাপাহাড়ের স্বর
খণ্ডখণ্ড, শাদাশাদা, দানাদানা
সে সব হাওয়ার টানে উড়ে যায়
সেসব দূর কোনো নদী, কোনো তীব্র ঢেউ
সে ঢেউ নিয়ে যায় একদেশ থেকে অন্যদেশ...!
আমিও মেঘের মত কেউ
আমারও ভেতরে জলকণা, ভেতরে তীব্র উত্তাপ
হয়ত, আমিও এসেছি কোনোকালে এইখানে এই
নিঃসীম অন্ধকারে
শূন্যতা পরে নিয়েছি
অন্ধকার পরে নিয়েছি বল্কলে
এ কোনো মানুষ নয়
মানুষের মত মেঘ, একখণ্ড অখণ্ড জলকণা
হয়ত, আমিও তার মত মানুষ নই
মেঘের মত কিছু, হয়ত, মেঘও নই,
মেঘের মত একখণ্ড অখণ্ড জলকণা...!
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ
ভালোবাসা নির্বাসনে গেছে (১৯৯৫) * মেঘগুলো পাখিগুলো (২০০১)
অরণ্যে যাবো অস্তিত্বে পাপ (২০০৩) * পালকে প্রসন্ন প্রগতির চাকা (২০০৪)
ভেতরে উদগম ভেতরে বৃষ্টিপাত (২০০৬) * মেঘের মগ্নতায় রেশমি অন্ধকার (২০০৯)
বৃষ্টির গান মায়াবাস্তবতা (২০১২) * রূপপ্রকৃতির বিনম্র চিঠি (২০১৩)
নৈঃশব্দ্যের এস্রাজ (২০১৪) * অন্তিম জাদুর ঘূর্ণন (২০১৫)
বিভাজিত মানুষের মুখ (২০১৫) * অনূদিত রোদের রেহেল (২০১৫)
ভুল হচ্ছে কোথাও ভুল হচ্ছে (২০১৭) * তুমুল বেজে ওঠে অন্ধকার (২০১৯)
হায়ারোগ্লিফিক্স (২০২০) * ছবি ও চেনাগন্ধের মেটাফর (২০২১)
ঈশ্বরের ছায়াচিত্র ( ২০২১).


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন