মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

সন্দীপ কুমার



তিনি আলোকচিত্রশিল্পী । কিন্তু তাঁর কবিতাও আমাদের ভিতরটাকে কম আলোকিত করে না। প্রকৃতির প্রাণ আজ ওষ্ঠাগত । রবীন্দ্রনাথ কবেই লিখেছিলেন 'দাও ফিরে সে অরণ্য ...' আমরা শুনিনি । এখন পাখির ডাক সেলফোনের রিংটোনে শুনেই তৃপ্ত থাকা বুঝি আমাদের নিয়তি । পড়ছি ----



কবি সন্দীপ কুমার-এর দুটি কবিতা 

 

যোগবিয়োগ, যোগাযোগ



একটা হেলিকপ্টার আর একটা পাখির বাক্যালাপ চলছিল। পাখি বলল, আমার ওড়া স্বাভাবিক। হেলিকপ্টার বলল , ওড়বার জন্যই আমার জন্ম দেয়া হয়েছে। পাখি বলল, গুহার মুখ বন্ধ.....পরিবর্তে খুলে গেছে শপিং মলের দরজা। হেলিকপ্টার বলল, দাঁড়াও...  আমিও ওপর থেকে নরকের ভিড় ঠেলে খুঁজে আনছি তোমার পিতামহকে। পাখি বলল, তোমার ওড়বার মধ্যে একঘেয়েমি আছে। হেলিকপ্টার বলল, আমার যে চালক...সে পূর্বজন্মে শববাহী গাড়ি চালাত। পাখি বলল, আমার ঘুম ভাঙে অনেক অনেক ভোরে। হেলিকপ্টার বলল, সমস্ত রাত আকাশে চক্কোর কাটা আমি। পাখি বলল, তোমার চালক হয়তো একদিন  পৃথিবীর সব কিছুই বিনষ্ট করে দেবে। হেলিকপ্টার বলল, তোমার ডাক কিন্তু আমি শুনতে পাই, আমার চালকের সেলফোনের রিংটোনে।



 মশা ও রবীন্দ্রনাথ


একটা মশা রবীন্দ্রনাথের চোখের সামনে ঘুরছিল। সেই মশাকে নিয়ে তিনি হঠাৎ গান বাঁধলেন। আসলে মশাও তার চোখে পরম আসক্তি...চরম ঈক্ষণ ।গ্যালিলিওর আকাশ  আর একজন স্বনির্ভর পাইলটের আকাশ তো কখনওই এক নয়। আমরা জানি, মশা প্রজাপতির মতো অত সুন্দর নয়। সে কিছুটা নিষ্ঠুর। কবি সেই মশার রাগ, দুঃখ, প্রেম, লোভ, কথা অবিকল গানে বর্ণনা করলেন। মশা কিন্তু ততক্ষণে কবির রক্ত চোষার জন্য নাছোড়। দিনের আলোয় এইভাবে প্রেম দিচ্ছ... রাতের অন্ধকারে সে তোমার পিঠে ছুরি চালাচ্ছে।


         আসলে মশাটা যদি রবীন্দ্রনাথকে না কামত, আসলে মশাটা যদি  মশা না হয়ে প্রজাপতি হতো। তুমি কি ভাবছ, পৃথিবীতে কোনো মশা থাকবে না। তবে কবির রক্ত চোষার জন্য কোনো মুহূর্তই তৈরি হবে না? মশা তার ধর্ম পালন করবে... কবি তার আপন কর্মে যাবে ডুবে। মশার  স্বরূপ আর কবির গুণ আমরা কোনোদিন মগজ থেকে মুছে ফেলতে পারব না। সব মায়ের ছেলে রবীন্দ্রনাথ হতে পারে না, আর পৃথিবীর সব মশারাও কোনোদিন একত্রে রবীন্দ্রনাথের সব রক্ত চুষে নিতে পারে না।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন