' জীবন বস্তুত একটি জ্বলে ওঠা / ছোট্ট সিগারেট ' জগৎ ও জীবনকে দেখার এই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি কবি দীপঙ্কর বাগচীর কবিতাকে অনন্যতা দেয়। অনন্যতা আর কীসে ? কবিতাগুলির অন্তর্লীন বিষণ্ণ গীতিমাধুর্যে। ' সিগারেট চেপে ধরা আঙুলের / দুই দেওয়াল বেয়ে / চামড়া পোড়ার গন্ধ ' এইভাবে পুড়তে পুড়তে কবি যে জীবনকে দেখছেন ,তাকেই যেন ছুঁতে চলেছি আমরা ..পড়ছি----
কবিতাগুচ্ছ * দীপঙ্কর বাগচী
বসন্ত
এ শহরে গান নেই
এ শহরে প্রাণ নেই আজ
কল _কোলাহল ক্লান্ত, অন্ধদিন
ফিরিছে আবার।
বসন্তের পোকাগুলি ঘিরে আর
ধরেনা কোথাও...
মরে যাবো আমি নাকি
তুমি ছাড়া বসন্ত ছাড়াও!!!
নীরব
তোমাকে আমি বলেছিলাম
শোনো...
একটি বারের জন্যে তুমি শোনো
আমার যতো হারিয়ে যাওয়া কথা__
তখন এলোমেলো বাতাস বয়ে ছিল
যেমন বিপন্নতা......
লিরিক ভালোবেসে, আমি ভাঙতে চেয়ে ছিলাম.......
নতুন যতো কথার স্তব্ধতা।
কিন্তু দেখো তারা, আমায় নিয়ে গেলো
অচিন একটি পাড়া
অনেক দেখা হলো, তবু মিটলো
না যে আশা__
লিরিক গড়তে চেয়ে, জড়িয়ে গেলাম আমি
নতুন যতো কথার স্তব্ধতা।
দুটি লোক
রাজপথ জনশূন্য, গলিপথ অন্ধকারে একা
পদচিন্হ গ্রামে ,আজ মড়কের
বিষণ্ণ কুয়াশা......
বারেবার বর্গী আসে, বার বার নরক আঁধার__
বেহুলা ভাসায় ভেলা, সাবিত্রীও সঙ্গী হয় তাঁর
যুগে যুগে এই খেলা, ভেসে ওঠে জগৎ সংসার
মূর্খ এই নরাধম কবি লেখে অন্তর জীবন
পদচিহ্ন গ্রাম আজ, জনশূন্য বিবাহ বাসর
ছেলেটি তবে কি আসে, জল ভেঙে মৃতদের চোখ
মেয়েটি আসে না, শুধু ভিন্ন পথে
হেঁটে যায় দুটি ভিন্ন লোক।।
জনতা
উন্মত্ত জনতা থেকে, দূরে থাকা
আমার অভ্যেস
জীবন বস্তুত একটি জ্বলে ওঠা
ছোট্ট সিগারেট_
আপনি কবিতার অভিপ্রায় নিয়ে, বলেছেন
কিছু কথা......
বলি আমি, অনুপস্থিতির দীর্ঘ সরলতা
আজ এই হেমন্তের, দুপুরের শেষে
একটানা পাখির ডাক, নাম হারা কোনও এক দেশে__
আমাদের নিয়ে যেতে পারে!!!
অনায়াস হয়কি সাধন, অনর্গল
ধারার মতোন...
বছরের শেষে__ কী তুমি পাঠালে বলো...... সন্ধ্যা তারা,
ঘুম গ্রাম, ট্রেনের হুইসল ......
আবছায়া কুয়াশা ভালোবেসে।
সুকান্ত সেতু
আজ বহুদিন পর, ঘর থেকে বেরোলাম
সুকান্ত সেতুর পাশ দিয়ে
যেতে যেতে
একটা সিগারেট ধরালাম।
হেমন্তের সন্ধ্যে ... কতো দ্রুত আবছায়া
ব্যাপ্ত করে নেমে আসছে
সন্ধ্যাবাজারের মাথার উপর...
কোন সাল সেটা, আজ আর, মনে নেই
মেয়েটিকে চুমু খেতে গিয়ে
ভুলে গেছিলাম......
আমি ওর পুরোনো শিক্ষক
পঁচিশ বছর এই পড়া পড়া খেলা
দাড়ি, চুল , সাদা হয়ে গেলো প্রায়।
তনু তোকে আর কখনও দেখিনি
কতো উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকলে একজন মানুষ
দীর্ঘ এক শকুন জন্ম লাভ করে।
এই দেখো ভুলে গেছিলাম। সিগারেট চেপে ধরা আঙুলের
দুই দেওয়াল বেয়ে, চামড়া পোড়ার গন্ধ।
তাঁকে আর কোনোদিন দেখিনি স্টেশনে
শুধু এরকম এক আবছায়া বিকেলে
সন্ধ্যাবাজারের আলো ছায়া টিতে ধীর পায়ে
হেঁটে গিয়েছে সে....


Govir chhuye gaylo ...Amader Shakun janmer podaboli...kotha.
উত্তরমুছুন