মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

গল্প * স্বপন চক্রবর্তী





   স্বপন চক্রবর্তীর রচনায়,  আমরা যতদূর দৃষ্টি প্রসারিত করি , দেখতে পাই এক নির্জন কল্পনাতাপস , আপনমনে অন্তরাত্মার সঙ্গে যেন নিরন্তর কথা বলে চলেছেন । সেই কথা , তার অন্তর্লীন সুর, শেষ পর্যন্ত পাঠককে মোহাবিষ্ট করে রাখে । এখানে আমরা তাঁর একটি ছোট লেখা পড়ে নিই ---



কিচিরমিচির

স্বপন চক্রবর্তী



আঠারো তারিখ৷ এবং শ্রাবণ মাস৷

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃতির  নিয়মে৷ 

যে প্রকৃতির নিয়মে আমি সকল প্রেম, আর্দ্রতা এবং কান্নাকে অতিক্রম করে

এসেছি৷

কবে যে অতিক্রম করে এলাম--- বুঝতেই পারি নি৷

কবে যে এসেছিলাম এই ধরণীর বুকে--- ঠিক যেমন বুঝতে পারি নি তা-ও ৷

এই দুই বুঝতে-না-পারা’র মধ্যবর্তীতে একটা পর্ব গ্যাছে জীবনে--- যখন প্রেম 

ছিল, বিরহ ছিল, উল্লাস-উন্মাদনা ছিল; ছিল বৈরাগ্য৷

এবং ছিল অনুরাগও ৷


যখন অঙ্কুরিত বীজ দেখলে

বৃক্ষে কুসুম দেখলে 

লতায় মঞ্জরী দেখলে 

চোখে ইশারা দেখলে


অন্তর রোমাঞ্চিত হতো--- 

আনন্দে

উল্লাসে

স্বপ্নে

আশ্বাসে৷


পথে নিরাশ্রয় দেখলে

অবোধ অসহায় দেখলে

মন হু হু করে উঠতো, কান্নায়৷


যখন সূর্যোদয়ে, সূর্যাস্তে, চন্দ্রকলার বিন্যাসে উড়ে বেড়াতো মন--- গানে গানে, 

উন্মাদনায়--- দিগন্তে, দিনান্তে, জ্যোৎস্নায়, অমায়৷

কোথায় যে সে হারিয়ে গ্যালো, কবে যে গ্যালো, কখন--- বুঝতেই পারি নি৷

বুঝতেই পারলাম না ‘আমি’ বলতে কে ছিল এই জীবনে৷

বুঝতেই পারলাম না এই ধরিত্রীর, এই প্রকতির, এই দিবা-অমানিশার মানে৷


*


লিখতে গিয়ে হাত কাঁপছে৷

হাতের লেখা প্রতিদিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে৷


গতকাল রাতে বিজয় একটা ছবি পাঠিয়েছিল আমায়---WhatsApp-এ৷ অনেক 

পশু-পাখি-পতঙ্গ দিয়ে তৈরি একটি মানুষের মুখাবয়ব৷ নীচে লেখা ছিল: ওদের 

মধ্যে একটি ‘উট’ আছে--- ওই ভিড়ের মধ্যে; যদি আমি সেই ‘উট’টিকে খুঁজে 

বের করতে পারি তাহলে বুঝবো আমার অ্যালজাইমার নেই৷


আমি ছবিটার দিকে প্রায় তিন-চার মিনিট তাকিয়ে থেকে নানানভাবে তন্ন তন্ন 

করে খুঁজেও কোনও উট আবিষ্কার করতে পারি নি সেই ছবির মধ্যে৷

বিজয়কে জানালাম সেই কথা৷

বিজয় বললো, ওর পাঁচ সেকেন্ডের মতো সময় লেগেছে উট 

খুঁজে বের করতে৷


মধ্যবর্তী ওই পর্বটিই হলো মহাকাল! যা আমাকে গ্রাস করেছে৷

এর জন্য কোনও আক্ষেপ নেই, হতাশা নেই, বেদনা নেই৷ কেবল একটু 

কৌতুক মিশিয়ে তাঁর সঙ্গে নীরব অভিমানের ভাব-বিনিময় করি৷

আবেগ বলতে এইটুকু৷


*



দশই আশ্বিন৷

অথচ প্রকৃতিতে বৃষ্টি, মেঘ, মেঘের ফাঁকে হঠাৎ চকিত রোদ্দুর৷


আমার অন্তর চাইছিল ঝকঝকে নীল আকাশ৷

চাইলেই তো আর হয় না৷

অবশ্য যদি ইচ্ছাপূরণের বর পেতাম : যা চাইবো তা-ই--- তবে যেন আকাশ 

অমনি ঝকঝকে নীল হলো! 

তাতেই বা কী?

কী হতো--- যদি আজ ঘন কালো সজল মেঘের বদলে আকাশে শুভ্র মেঘ 

থাকতো ঝকঝকে রুপোলী?

কোনও মেঘেই যে আমি ভেসে পড়তে পারি না আর!

ডানা দুটোয় পক্ষাঘাত৷

না কি, ডানা ছিলই না কখনো?


মাঝে মাঝে এই ভ্রম হয়--- যেন কোনও এক পর্বে, জীবনে, -ওই রুপোলী 

মেঘে ভেসে বেড়িয়েছিলাম কোথায় কোথায়--- বনে, উপবনে৷ 

সেখানে যেন ছিল গহনে পাখির ডাক 

ছিল স্রোতস্বিনীর আভাস--- যাকে বলে নির্ঝর৷

ছিল, মনে মনে ভাবতাম, অনুভব করতাম--- কুসুমঘ্রাণ৷

সেসব কি মিথ্যে? সব মিথ্যে?

অ্যাতো বড় মিথ্যে?


তবে, জীবনটা কী--- এই বর্তমান আর ওই অতীতপর্ব মিলে?

শুধুই প্রতারণা? ভ্রম?


সব মিলে কেমন যেন নির্মম মনে হয়, প্রতিপক্ষকে৷

‘প্রতিপক্ষ’ যে কে--- তা-ও জানতে পারলাম না আজও৷


অথচ, জীবন ফুরিয়ে এলো৷


স্বপন চক্রবর্তীর একটি জনপ্রিয় বই 







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন