মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

বন্ধুসুন্দর পাল


 

তাঁর কবিতার হিরন্ময় দ্যুতি অন্তরের ভিতর বাহির আলোকিত করে দেয়।কী নিপুণ দক্ষতায় বন্ধুসুন্দর শব্দকে শব্দোত্তর মহিমায় পৌঁছে দেন , পাঠক দেখে বিস্মিত হবেন ...' তুমি এলাচের ছোটো দানা ' কিংবা ' কর্তৃকারকের পাতে দাও  শব্দের মৈথিলী ভ্রুণ '...এমনি আরও ...। পড়া যাক ---



কবি বন্ধুসুন্দর পাল-এর দুটি কবিতা 


আরাধনা



স্ত্রী-লিঙ্গ শব্দের জলে স্নান সেরে উঠে আসে দাঁড়ি

অতিথি অক্ষরে লেখা নিজেকে নিলামে তোলে কমা

গেরস্থ শব্দের পাশে পায়েসের দুধ উৎলে ওঠে

বর্ণনা, তোমাকে বলি, তুমি, এলাচের ছোটো দানা 


নিবিড় হয়েছে লিপি প্রতিদানে ডুবে মরো স্মৃতি 

জল আসলে তো জলই, নিজের রূপের সর্বনাম 

এল যে সংহতি, প্রকাশিত বুকে ইঁদুরের বাসা 

তোমার বানানো শোকে ঢিল মারে শরীরী বানান 


ভুল ছিল মন খালি, জোড়াতালি শবের বাগান 

গুঞ্জনে ডিম্বানু রটে, মালি তুলে রাখে রান্নাঘরে

কর্তৃকারকের পাতে দাও শব্দের মৈথিলী ভ্রুণ

তোমাকে যে শুধু মাত্র বিশেষণ করে রাখে পদ্যে 


বিদায়ী শব্দের জলে চোখ মুছে নেয় সংবর্ধনা

আলোচালে আলো নেই, আছে বাংলা, নাচে আরাধনা



পরের লাইনগুলো 


একটা লেখা হারানোর মতো তুমি লোকাল ট্রেনের শেষ কামরায় উঠে দাঁড়িয়ে আছ । এমন ক্ষয়িষ্ণু চেহারার ক'টা স্টেশন হয়, কয়েকটা মান্থলি প্যাসেঞ্জার ঠিক গুনে রাখে  । অথচ আমি যে লেখাটা হারিয়ে ফেলেছি, তার ক'টা লাইন ছিল কিছুতেই মনে করতে পারি না । অফিস ফেরত ব্যাগে ফাঁকা টিফিন বক্সের মতো মুখ করে জানলা দিয়ে তোমার তাকানোকে দেখেছি । বুঝেছি, এত বড় বড় বিল্ডিং নিমিষে ছুটে চলে কেন, গাছেরা কেন তাদের আধিপত্য ফেলে রেখে পালায়,  ঝালমুড়িওলার ঠোঙা কেন পাখি হয়ে যায় ! তাদের কে প্রতিবার জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ধরতে যাওয়ার সময় আমার হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট লেখাটার কথা মনে পড়ে । লেখাটার শুরু টা এমন, ' স্কুলড্রেসে বড় হওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘা ' । অথচ শেষটা কিছুতেই কোনোদিন মনে পড়ে না । এভাবে কত কত শব্দ খরচ করে তোমার নেমে যাওয়ার স্টেশন চলে আসে । আর আমি ফাঁকা টিফিন বক্সের ভিতর দূর থেকে অনুমান করি আমার হারিয়ে যাওয়া লেখাটার পরের লাইনগুলো...







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন