কবিতাগুচ্ছ * দেবাশিস সাহা
এই ক'টা পাখির ফোন নম্বর
কত কী বলবে বলে যেন
ভোর ছ-টার রোদে
জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়েছে
এসএমএস-এর মতো সংক্ষিপ্ত এক টুকরো মেঘ
সিট বা সিবিআই নয়
হৃদপিন্ডের স্ক্রিনে চোখ রাখতেই ---দেখি
কয়েকটা পাখি উড়ছে এলোমেলো
আমার হার্টে ফুটো আছে কি কোনো?
বুকে হাত দিয়ে দেখি
না! ওই তো আমার রক্ত-ঘাম খুঁটে খাচ্ছে
দুটো একটা শালিক চড়ুই
খুব ইচ্ছে করছে
এক্ষুনি বন্ধুদের ফোন করে বলি
তোর ব্যাঙ্ক-ব্যালান্স বাড়ি-গাড়ির পাশে
এই ক'টা পাখির ফোন নম্বর তাড়াতাড়ি টুকে নে
গান ২০২২
কত অধিকার নিয়ে একটা গান সারা শরীরে
শুয়ে আছে
নিশ্চিন্তে অস্ত যাচ্ছে কাঠঠোকরা
বিসর্পিল মদ- মাংস
অথবা কিছু নয় এসবও
চিতাকাঠ ধমকাল কতশত
কত সমুদ্র ঢালা হল উপুড় করে
এল গেল কত জল
গানটা পেরোচ্ছে না-পেরোনো কঠিন সূর্য
ইচ্ছেরাজা
তার স্পর্শে ঘুম ভেঙেছিলো
অথবা ভাঙেনি ঘুম, স্পর্শই ঘুমিয়ে পড়েছিল
জাগিয়ে দিয়ে শুকনো পাতা, মরা ডাল
অনন্ত এক সর্বনাম সে ?
ছিন্নভিন্ন করে আমাদের ঘরে ফেরা, না-ফেরা
না-কি সে এক মুখর রমণী হৃদয়ে জমানো সব নদী
গণ্ডূষে পান করেও তৃষ্নার্ত দুটি ঠোঁট
না-কি সে সর্বনাম নয়, নারীও না
নেহাতই এক কাঙাল ভিখিরি....অফুরন্ত ঝুলিতে ভরে নেয়
আমাদের সোম-বুধ-শুক্রগুলো
অথবা তা-ও না
কাঙাল ভিখিরি নয়
সে এক দিগ্বিজয়ী রাজা আমাদের ড্রইংয়ে ডাইনিংয়ে
আমাদের খাট আলমারি ড্রেসিং-টেবিলে
রাজ্যপাট বিছিয়ে নিশ্চিন্ত, নীরব
পথ ফুরিয়ে যায় পথেই
পাথরে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে প্রার্থনা
ফিরে যায় চৈত্র-বৈশাখ,ফুঁপিয়ে কাঁদে আষাঢ় শ্রাবণ
এতো অশ্রু ধরে রাখা যায় না
যদি না অফুরন্ত চোখ ফুটে ওঠে চোখের ভিতর
যেমন বৃষ্টির ইচ্ছে মেঘ পারে না ধরে রাখতে
আমারও ইচ্ছেয় সে ঘুমোয়, জাগে...
প্রলাপলিখন
ঘরময় কী ছন্দে বেজে ওঠো তুমি
যত দীর্ঘ করি দু'বাহু
জড়াতে পারি না কিছুতে
বলতে এসেছিলাম
মেঘ ছুটি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে
বৃষ্টির ভারি মন খারাপ
চোখে ফুটছে তীব্র পলাশ
পুরুলিয়ার মাটি যেন পশ্চিমাকাশ
বলা হয়নি তোমাকে
আপাতত ফুল লিখছি পাখি লিখছি
ফুটো জামা ছেঁড়া জিনস বিরল কেশে
কিছু কিছু মৃত্যুও লিখছি ---
হাবিজাবি প্রলাপ লিখন
কিন্তু যাই বল
তুমিই আমার না-নেভা আনন্দের ঠিকানা
চোখ বুজলে এখনও দেখি
তারাভর্তি একটা জাহাজ উড়ছে তোমার ঠোঁটে
মাস্তুলে বাঁধা আমারই স্যান্ডো গেঞ্জি নীল শার্ট
লোটাকম্বল গুটিয়ে
পা রাখব
শেষবার
মাটি উঠে দাঁড়াতেই
মাটি উঠে দাঁড়াতেই তোর সে কী আনন্দ
সজল বাংলা যেন মুঠোয় চাপা
মুছে গেছে ঠোঁটের হরিণ আর্তনাদ
আর একটু বাঁচতে চেয়ে শূন্যে ভাসছে যে ধূলিকণা
হয়তো এখুনি নামবে মেঘদূত হয়ে
ধু-ধু পিচ রাস্তা মাঠের আলপথ ধানক্ষেত সবাই খুব হাসছে
হাততালি দিচ্ছে পাইন ফার ইউক্যালিপটাস
ছাইয়ের ভেতর থেকে জন্ম নিচ্ছে দুরন্ত ফিনিক্স
মাটি উঠে দাঁড়াতেই তোর সে কী আনন্দ...
*************************************************************************************************


অসাধারণ গুচ্ছটি। প্রয়োগের পরিমিতি অনুসরণীয়।
উত্তরমুছুন