শারদীয় * ১৪২৮* স্বরবর্ণ * ৪
' দ্য আর্থ হ্যাজ মিউজিক ফর দোজ হু লিসেন '
এবার পুজোয়
' স্বরবর্ণে'
শুনব সেই গান...
এ পর্যন্ত ' স্বরবর্ণে'র চারটি সংখ্যা প্রকাশ পেল। ভাবতে ভালো লাগছে, ইতিমধ্যেই কবি -লেখক- পাঠক পরিমণ্ডলে ' স্বরবর্ণ ' কিঞ্চিৎ হলেও সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে, যা আমাদের কাছে খুবই আনন্দের। গর্বেরও বটে।
শুরু থেকেই আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কোনও ছুঁৎমার্গ না রেখে, নবীন-প্রবীণের সেরা লেখাটি প্রকাশ করব এবং বৃহত্তর পাঠকসমাজের কাছে পৌঁছে দেব। 'কেউ ছোট নয়, বড়ও নয়,আমি আমার মত ' কি ব্লগজিন কি ছোট-বড় পত্র-পত্রিকা এমনকী কবি-লেখক সকলের প্রতি এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ' স্বরবর্ণে'র পথ চলা, কোনও অহংকে প্রশ্রয় না দিয়ে। কে থাকবে, মুছে যাবে কে --- সে বিচারের ভার কাল মহাকালের, আমাদের নয়। আমরা সময় স্রোতে নাও ভাসিয়েছি, তীব্র স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করার মানসিকতা রাখি, বড়জোর এটুকু বলতে পারি।
বর্তমান সংখ্যা সম্পর্কে আর দু'চারটি কথা। এ সংখ্যায় গুচ্ছ ও দীর্ঘ কবিতা-সহ ৬০ জনেরও অধিক কবির কবিতা রয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রেই আমরা চেষ্টা করেছি, সংশ্লিষ্ট কবির 'স্বরবর্ণে ' প্রকাশিত কবিতা সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে। তা যে সবসময় যথার্থ হয়েছে, এমন দাবি করি না। সে অর্থে সত্যিই কি কবিতার কোন ব্যাখ্যা হয়? সে যে ব্যাখ্যাতীত এক অব্যক্ত মায়া। কোনও ব্যাখ্যায় তাকে ধরা যায় না। ছোঁয়া যায় না। সে যে চৈতন্যপ্রবাহে মিলেমিশে লীন হয়ে থাকা এক আবহমান ফল্গুধারা।কোনও বাক্য কোনও ছন্দই তাকে ধরার পক্ষে যথেষ্ট নয় । আর তাই বুঝি দেশে দেশে সুরিয়ালিজম ম্যাজিক রিয়ালিজম ইম্প্রেশনিজম এক্সপ্রেশনিজিম... কত কত রকমের কবিতা আন্দোলন ও কবিতাতার ব্যাখ্যা চোখে পড়ে। সে যাই হোক না কেন, সবেরই লক্ষ্য কিন্তু সেই অব্যক্তকে ব্যক্ত করা, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
কবি চিন্ময় গুহ-র একটি কবিতার সেই অব্যক্ত মায়ার জগতে পরিভ্রমণের সবিশেষ চেষ্টা করেছেন পারমিতা ভৌমিক,যাঁর আলোচনা পাঠককে সম্মোহিত করে । এ সংখ্যা থেকেই শুরু হচ্ছে, কবি দীপংকর রায়ের নতুন উপন্যাস ' কথা দিয়েছিলাম হেমন্তের নিয়রে ' ধারাবাহিকভাবে যা আলোকিত করবে 'স্বরবর্ণ'কে। আর পাঠককে পৌঁছে দেবে ভারত-বাংলাদেশের ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে ফেলে আসা এক বিষণ্ণ অতীতকে।
এছাড়া থাকছে ছ'টি অসাধারণ ছোট গল্প , একটি অনুগল্প-সহ। প্রত্যেকটি গল্পই মেজাজ-মর্জিতে ভিন্ন স্বাদের। খুবই পরিশ্রমসাধ্য বিস্তর অধ্যয়নসাপেক্ষ অসাধারণ একটি গোয়েন্দাধর্মী বড় গল্প লিখেছেন ,তরুণ গল্পকার সন্দীপ মজুমদার। মুক্তগদ্যে সম্রাট মুখোপাধ্যায় , নিবন্ধে ,অশোক সাহা যেমন রয়েছেন,তেমনই প্রয়াত সত্তর দশকের কবি প্রবীর রায় সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন অনিমেষ সরকার। এছাড়া নিয়মিত বিভাগগুলি তো থাকছেই।
এদিকে দুর্গোৎসব দুয়ারে কড়া নাড়ছে। শিউলি আর কাশফুলে আমরা হৃদয় রাঙাবো, কিন্তু ভুললে চলবে না ,অদৃশ্য করোনার অক্টোপাস কিন্তু আমাদের এখনও ছেড়ে যায়নি। কাজেই বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস নয়, বরং উচ্ছ্বাসকে খানিকটা বাঁধন পরাতেই হবে, নিজেদের জীবন ও জীবিকার স্বার্থে।
পরিশেষে অশেষ ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই এ সংখ্যার সমস্ত কবি-লেখকদের, তাঁদের মননজাত শব্দশিউলি ছাড়া সম্পূর্ণ হত না শারদ অর্ঘ্য * ১৪২৮ * স্বরবর্ণ * চার।
এক কথায় 'স্বরবর্ণ' সুসম্পাদিত, তাই সুন্দরও। ভালো লাগল সৈয়দ কওসর জামাল, চন্দন রায়, কৌশিক সেন, দীপিতা চ্যাটার্জি, শর্মিষ্ঠা ঘোষ, ধৃতিরূপা দাস, শর্বরী চৌধুরী, সুদেষ্ণা ব্যনার্জী, মৃন্ময় মাজী, দেবার্ঘ সেন, সব্যসাচী মজুমদার ও দেবাশিস সাহার কবিতা। বিশেষ ভালো লাগল 'প্রিয় কবি প্রিয় কবিতা'বিভাগটি, যেখানে বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যয় উচ্চারিত।
উত্তরমুছুনসম্পাদক, লেখক, পাঠক-- সকলকে শুভেচ্ছা জানাই।