' কতটা ভালোবাসলে রাধার বিরহকে ছোঁয়া যায় ' এমন নিবিড় উচ্চারণে ভালোবাসাকে পরিমাপ করতে চেয়েছেন কবি শিমুল আজাদ,কয়েক সমুদ্র জলও যেন কম ...আসলে পৃথিবীর প্রতিটি ধূলিকণার প্রতি অকৃত্রিম টান কবির । তাই ' প্রিয় পাখির ঝাঁক ,/ প্রিয় নদী প্রিয় মুখ / প্রিয় বৃক্ষদল ...ছেড়ে যেতে ব্যথায় টনটন করে ওঠে নাড়ি । পড়ছি ----
কবি শিমুল আজাদ-এর তিনটি কবিতা
ভালোবাসা আজ তোমাকে বলছি
স্তব্ধতার কোটি কোটি প্রহরের পর
এখন আত্মাঘ্রাণ ঝরে পড়ছে।
আঙিনার ধূসরতা গলে উকি দিচ্ছে
সবুজের সমারোহ।
বুকের গভীরে প্রবাহমান সেই অমোঘ সত্য-
কতটা ভালোবাসলে রাধার বিরহকে ছোঁয়া যায়!
এইক্ষণে, তুমি নামক শূন্যতার চাষ শেষ হলো বুঝি!
বিস্ময়ের বাগানে ফুটে উঠলো আশ্চর্য সুন্দর!
ওই চেনা-অচেনা শহরে স্মৃতির কাঁপন
ধূসর তারুণ্যমাখা মুহূর্তরা-
এত কিছুর পরও বৃষ্টি হয়ে ঝরছে
যেন ঝরে পড়ছে যন্ত্রণার দাহ।
তবু জানা হলো-
অতিদূর মন খারাপ করা ক্লান্ত শহরে
তুমি যাচ্ছো ডুবে-
ভালোবাসার তীব্রতর জ্বরে।
কয়েক সমুদ্র জল
চলে যাবার পর বিষন্ন হয়ে উঠলো পৃথিবী, পথেরা বিস্তর; তন্ন তন্ন খোঁজা শত দৃশ্যপট। থেকে থেকে বিভ্রান্ত
অনেকটা উন্নাসিক- কৃষ্ণ যা হয়নি রাধার কারণ।
চেয়েছিলো কী এই হৃদয় আরতী, না কী তার শিল্পের স্ফূরণ! যদিও জনরব বাড়তে পারেনি। আশ্চর্য এই সম্পর্কের সুতো অক্ষত যুগের পর যুগ। ক্রমশ কঠিন ও শক্ত। তাতে পা রেখে চলি।
ভাবি প্রবল রহস্যময়ী, আজও তার বর্নীল আভা, ধ্বনির পর ধ্বনি প্রতিধ্বনি বুকের গভীরে বাজা একান্ত ঘড়িটির মত। পরিপার্শ্বে ছিল বিমুগ্ধ বনানী এক প্রবল পাহাড়, স্নিগ্ধ ঝর্না এবং তার হরিণীর দল সাথে দুর্লভ কস্তুরী।
এখন মুখোমুখি দাঁড়ালে পাবে চোখে সহস্র ক্লান্তি, ধূসরতা আর কয়েক সমুদ্র জল।
অনিবার্য অনুভবে
প্রিয় ঘাসফুল প্রিয় আকাশ
প্রিয় পাখির ঝাঁক,
প্রিয় নদী প্রিয় মুখ
প্রিয় বৃক্ষ দল-
বিদায়
এই হেঁটে চলা পথ
আশ্চর্য সকাল বিষন্ন দুপুর
শান্ত বিকেল অদ্ভুত সন্ধ্যা
আর তারা জ্বলা রাত;
দুটি চোখে দেখা প্রিয় দৃশ্যসকল
সম্পর্কের গহীন উত্তাপ-
বিদায়
যদিও যেতে ইচ্ছে নয়;
তবুও যাবো যাবো নৈঃশব্দ্যের বিবরে;
বিষাদ-বিহবল জড়িয়েছে যত
তারও চেয়ে গভীর কিছু রয়েছে ক্ষত-বিক্ষত,
রয়েছে উন্নত কিছু জীবন উচ্ছ্বাস-
মানবিক স্পন্দনসমুহ, স্নেহশীল আত্মার রঙ;
তারও বিপরীতে যত স্রোতের পারাপার।
বিদায়, শৈশবকালীন অস্পষ্টতা
যৌবনের দুরন্ত শক্তিময়তা
ভালোবাসার স্পষ্ট মুহূর্তরা;
ঝড়-ঝাপ্টায় ভেঙে চুরমার ইমারত সকল।
বিদায়, প্রিয় কার্যক্রম
সুখের অধীক বোধ
বেদনার বিস্তীর্ণ তীর্থ
সারিবদ্ধ চিন্তার উত্থান
উপলব্ধির দীর্ঘযাপন
উজ্জ্বল রঙগুলির বিবর্ণতা-
বিদায়

কবিতা পড়ে মুগ্ধ হলাম। রাধাকে নিয়ে এমন সুন্দর কবিতা ইদানিং চোখে পড়ে না খুব একটা।
উত্তরমুছুন