বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২

স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তী



কবি স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তী-র দুটি কবিতা 


ব্রেইল বর্ণে লেখা    


কেউ কেউ শীতদেশে বেড়াতে যায়, 

হাসে, ছবি তোলে,

আমি বাতদোষে ঘরে পড়ে থাকি। 

প্রৌঢ় কম্বলের রোঁয়া-ওঠা বুক দেখি,

মনে হয়—

এবারও ভাদ্র মাস তুড়ি মেরে ঠিক চলে গেল। 

এক কেজি মাংসের স্বপ্ন

সাড়ে সাতশোয় মানিয়ে নিয়েছি,

ভাতের আকাঙ্ক্ষা পুড়িয়ে হাতরুটি… 

চাল-আলুর সংসারমঙ্গল

আর ফালুট পাহাড়

পাড়া আর বেপাড়ার মতো।  

রং ও রমণী আছে যার

তারই দিন, দিনের আলোর মতো

ঝলমলে সন্ধেবেলা থাকে; 

জীবন করেছে যাকে

ত্রুবাদুর, তার আধসেদ্ধ বউ

ঘেঁষে আসে কোলে,

বাচ্চারও তখনই ঘুম ভাঙে, 

নীল আলোয় প্রেমিকাদের বিয়ে-হওয়া দেখতে দেখতে

আমি ক্রমে বাবা হয়ে উঠি—











চারণ


আমার ও তাহার মধ্যে বিশুদ্ধ জি বাংলা আছে। 

তাই গাঁ-বাংলা রাবাংলা কিছুই

আমাদের টানে না। 

দড়ির মোষের মতো রাস্তাঘাট ম্লান করে 

আমরা আসি যাই,

গু মেখে ফিরি,

সময় ঘোষের চোখে 

আমাদের বাঁটের দিকে চেয়ে থাকে

করুণাকরভাবে...


শাড়িকে কুমারী রেখে 

চ্যানেলে-চ্যানেলে কুটনি বড়াই

শ্রীকৃষ্ণকে উত্তেজিত করে, 

রাধিকার কামভাব মাপে। 

লঙ্কার তৃতীয় কামড়ে 

রতিমতে দেখি নায়িকাকে,

লপ্তে-লপ্তে ফ্যান্সি বাজার

—কবির আসর দেখে

মজা হই, 

সকল খেলাই পাশাখেলা, 

তবু পাশাপাশি কামগন্ধে কাঁপে

মাগমাগালির বেলা; 

নীতির রাজার ঘরে নাগরালি, 

দুনিয়ার বেশিটাই নাটকীগিরি

নিরেট আঙুল তবু রিমোটের নব, আমিষাশী নীল 

ছুঁয়ে যেতে নিশপিশ করে


আমাদের সুখ পুড়ে শেষ হয় জ্বরে, 

প্রেম ও শান্তির ভিতরে 

বেপাড়ার রসপর্ব শুনে  

খুন চাপে—

বিপ্লবের গুষ্টিনাশ হয় 

             বাথরুমৈথুনে


**************************************************************



স্নিগ্ধদীপ চক্রবর্তী

প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি.। বর্তমানে কলেজশিক্ষকতায় যুক্ত। লিখেছেন 'বিনয় মজুমদার: জীবন ও সাহিত্য' নামে একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। অন্যান্য গ্রন্থ: 'বিনয় মজুমদারের নির্বাচিত কবিতা: পাঠ ও প্রসঙ্গব্যাখ্যা' (সম্পা.) ও 'এক আশ্চর্য ফুল: বিনয় মজুমদার' (সম্পা.)। প্রকাশিত কবিতার বই তিনটি: 'হৃদয়ে তেইশ নট', 'সূর্যাস্তে চুম্বন' ও 'অদিনের লেখা'। 'স্বলীন সংলাপ' নামে লিখেছেন একটি কাব্যনাটক।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন