কবি মলয় চৌধুরী-র দুটি কবিতা
মৃত্যুর মুখ
আমি মাঝে মাঝে মারা যাই ,
দেখি চিতার কাঠে ধোঁয়ার উৎসব -
কুন্ডলী পাকিয়ে খবর চলে যাচ্ছে
জঙ্গল পাহাড় ছাড়িয়ে
মধুমতী নদীটির কাছে।
তখনো অনেক পৃথিবী বেঁচে আছে
ছাই রঙা বিশ্বাসে নিজস্ব আলোয়
পালা পার্বনে।
আমি মাঝে মাঝে দেখি চিতা ভস্ম
পরম আদরে রাখা আবাদী জমিতে,
বিন্দু বিন্দু জলের সাথে শিকড় টেনে নেয়
সাধ স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষার অণুচিত্রগুলো
বাষ্পমোচনের পর আলপনা আঁকে
বিস্মিত আকাশের গায়ে।
আমার ভিক্ষালব্ধ মেঘের শরীর
বৃষ্টি হয়ে ঝরে যায়।
আরও অনেকবার মৃত্যুর মুখ
আমাকে জরিপ করে
কাঠকয়লা দিয়ে দিন মাস বছরের
খতিয়ান টেনে যায় ।
আরও অনেকবার ছাই হয়ে যাবো
সমস্ত শারীরিক পরিভাষে।
আমার ভিক্ষাপাত্র চিরদিন ফাঁকা থেকে যাবে
নতুনতর জন্মের গ্রন্থনায়।।
নির্বেদ স্মৃতিতে
আমার যজ্ঞের আহুতি নিয়ে যাও লোকান্তরে
হুতাশন,
পুরোহিত আমি স্বকীয় দহনে আদ্যপ্রান্ত জ্বলি।
স্বর্ণালী শস্যের দিন ছড়ানো হেমন্তের মাঠে
অর্ধশায়িত বেলা শুকিয়ে নেয় রাতের ভেজা চুল।
সমিধ পাব কোথা থেকে ?
গোলা ভরে গেলে
মাঠ জুড়ে পড়ে থাকে উড়ো খড়,
ফসলের গোড়া-
এ অপাদানে তাকেই আহুতি দেব।
এখনো সময় আসে নি
অগ্নিকুন্ড ঘিরে তাপ পিপাসার,
এখনো অবহেলার শিউলি উঠোনে ঝরে ;
কার কাছে চেয়ে নেব
অহোরাত্র নির্ঘুমের প্রজ্বলন শিখা ?
এ যজ্ঞভূমে জন্ম নেয় মধুর অভিশাপ
মধুরতর নিঃসঙ্গতা ;
ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাবে অসম্পূর্ণ জীবনের হিম
জমা হবে এই পৃথিবীর নির্বাক বায়ুস্তরে।
রাত্রি আরও গভীর হবে,
বুকের খাঁচায় মাদলের শব্দ
মশাল জ্বলে আকাঙ্ক্ষার গৃহবাসে ;
রিক্ত হাতে বরণ করেছি যে যন্ত্রণাকে
তাকে ফিরাতে পারবো না।
স্হিত আমি অর্ধ সিক্ত
দহনে পবিত্র হই নির্বেদ স্মৃতিতে।।
*****************************************************************
দুটি কবিতাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে উঠে আসা। অভিনন্দন।
উত্তরমুছুন