কবি কৌশিক সেন-এর দুটি কবিতা
উত্তর রামায়ণ
তুমি যদি মানো, এই অরণ্যের ভেতর থেকে টেনে তোলো
আকর্ষের সীতাগাছ, বাল্মীকির রামায়ণের গন্ধে মুছে ফেলো
শবরীর আখ্যান, যদি মানো, বিরহের বিন্ধ্যাচলের বাতাসে
ভেসে বেড়াবে জটায়ুর ছেঁড়া পালকেরা, তবে বসো, তোমার
সন্ততির মুখে তুলে দিই মন্বন্তরের অন্ন, হাভাতে থালায় যত্নে
রাখি সাবলীল লবণস্বাদ। একটা কলম দিও, ছোট ছোট
অক্ষরে চিঠি লিখি সেইসব যুবতীদের, অশোককাননের
আনাচে কানাচে যারা লক্ষ্য রেখেছিল আর্যকন্যার বহ্ন্যুৎসবে!
তুমি যদি জানো, পশ্চিমঘাট পর্বতের ঘনঘটা, মেঘে মেঘে
কীভাবে ভেসে যায় নীলগিরি পাহাড়ের দেশ, বোলো।
আমাকে বুঝিয়ে বোলো, পাষাণী অহল্যার গ্রাম থেকে
কীভাবে ঘরে ফিরেছিল পথ হারানো হরিণশাবকটি। বোলো,
কিষ্কিন্ধ্যার রানীর বালিশভেজানো রাতগুলি। রংতুলি নেই
জানি, তবু এঁকে রেখো দেবী শূর্পণখার পথনির্দেশ। সবটা
শুনবো, মন দিয়ে। তারপর একটা ছুটির দরখাস্ত লিখে
পাঠাবো মহর্ষি বাল্মীকির কাছে, তোমারই হাত দিয়ে!
নিষাদের শোক
নিষিদ্ধ বলতে কিছুই বুঝিনা আর। পাপড়ির আবরণে কোনো
লবণস্বাদ নেই যেন। মনুষ্যগন্ধে ন্যুব্জ এই পৃথিবীকে নামিয়ে
রেখেছি নক্ষত্রখচিত আকাশের নীচে। তূণীরের বিষাক্ত তীর
নিক্ষিপ্ত করবার পর তা যে লক্ষ্যভেদ করবেই, এই দৃঢ় বিশ্বাস
আমার জন্মগত।
মাটিকে স্পর্শ করি আজও। নিবিড় মিথুন কৌশলে সমাহিত
করি রাত্রিসুখ। তবু বিশ্বাস করো, ওই বিষাদের পুষ্পধনু আমার
ছিলনা। ধনুকের জ্যায়ে টান মারতে মারতে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীতে
কড়া পরে গেলেও বলবো, ওই শর সংযোজন সৃষ্টিকর্তা ভিন্ন আর
কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।
একপ্রহরের পলান্নে ক্ষুন্নিবৃত্তি হয় এখন। যাকিছু নিষ্কলঙ্ক, এই
পশুগন্ধের অরণ্যে, সকলই উদ্বায়ী বোধ করি। কালো ধোঁয়ায়
ভরে যায় এই বিশ্বচরাচর, মানসচক্ষে দেখি বিধাতাপুরুষের
ক্রূর কারসাজী। হে মহর্ষি, এ দৃশ্য কোনোদিন তোমার গোচরে
আসবেনা, নিশ্চিত জানতাম!
********************************************************************
জন্ম ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ বহরমপুর, মুর্শিদাবাদে। ছাত্রজীবন ও বেড়ে ওঠা বহরমপুর শহরেই। কলেজ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কঠোর জীবন সংগ্রাম। সাতাশ বছর বয়সে দিল্লীতে আগমন। কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারী। আঠেরো বছর ধরে দিল্লীর বাসিন্দা। দিল্লী ও দিল্লীর বাইরে বেশ কিছু পত্র পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত ও প্রশংসিত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : রাই জাগো গো, কর্ষণলিপি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন