কবিতাগুচ্ছ * হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘোড়া রোগ
একবার ঘোড়ারোগ হয়ে গেলে চট করে সারে না
যেখানেই যাও ঢোলক সঙ্গে থাকবে
কাসর ঘন্টা ক্ষণে ক্ষণে বেজে উঠবে
মনে যতোই হোক সময় গণনা শেষ
সমাধিস্থ হ ওয়ার আগে পর্যন্ত
নীলিম আলো টিম টিম করে জ্বলবে
একবার ঘোড়ারোগ হয়ে গেলে
ঠিক ছত্রাক, ঠিক ছত্রখান ভূগোল
মুখে একরকম মনে আরেকরকম
কাঙাল চরিত
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেই
তখন নটরাজ
নিজের প্রতিবিম্বের হালহকিকৎ ফুড়ুৎ
ঘোড়ার মতোই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমানো...
অক্ষরমালা
জলাভূমি জুড়ে বাজছে হুইসেল
তারা খসে পড়া সন্ধ্যায়
ছেলেটির ঠোঁটে ঠোঁট নড়ে উঠলো
মেয়েটি চলে যাচ্ছে
তারকাটার ওপারে
ঝড় বৃষ্টি রোদে জীবনের প্রতিটি ব্যর্থতার
মতো গ্লানি
সাদা পাথরের ঘ্রাণ দেখতে দেখতে
শতাব্দী ঘুমিয়ে পড়ছে ফের
সোফোক্লেশের অক্ষরমালায়......
.
গাথা
আমিও তীরে উচিয়ে রেখেছি ফণা
হিতে বা অহিতে
সুন্দর নেই কে বলেছে,কোন জনা
শরতে ও শীতে
চারিদিকে হত্যালীলা আর
রাজপথে শুধু মৃত মানুষের মাথা
সত্য ঘটনা এই
প্রলয়ের দিন শেষ
আজ শুধুই গল্পগাথা...
দেখা হয় কথা হয় না
সিড়ি দিয়ে উঠতে নামতে দেখা হয়, কথা হয় না
লিফট থেকে বেরিয়ে এলেই দিগন্ত
বহুতলে আকাশ ও নক্ষত্র যেমন শব্দহীন
প্রাচীন গোয়েন্দার চালে এগিয়ে চলে রাজপথ
সম্পর্ক এক খোলা ব ই
যে যেমন খুশি বসিয়ে দিতে পারে
চামড়া ছাড়িয়ে নিতে পারে
ছাল উপড়ে নিতে পারে
অশ্রুহীন হিংসা সা থেকে সা
উদারা মুদারা তারা
আয়নায় ছবি না হ ওয়া ছবি
জাহাজের নি:সঙ্গ নাবিক
মিথ্যা গুলো সত্যি পথে হাটছে সম্পর্কের উল্টোপথে
তখন দ্বিধা এবং দ্বন্দ্বের ছায়া
ছিন্ন মোহে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে...
একদিন ভাবতাম
একদিন ভাবতাম সহজে ছোঁয়া যায়
এখন ভাবি অনেক দাম
অমাবস্যার রাত্রিতে ঝরে পড়লো
সাদা পৃষ্ঠা জুড়ে প্রতিমার হলোগ্রাম
ঢাকের বাদ্যি কাসরঘন্টা
আরতির ধূপধূনো
মাঝরাতে রাস্তা শুনশান
কালপুরুষ নামছে সপ্তর্ষিমন্ডল
সবার কন্ঠে...দিল লে লিয়া মেরি জান...
একদিন ভাবতাম একটাই তো বাক্য
কয়েকটা শব্দ আর অক্ষর
সহজে বলা যায়
এখন ভাবি অনেক দাম
গা থেকে ঝরে ঝরে পড়ে প্রতিমার হলোগ্রাম...
বিবেক আনন্দে মাতে
আজ তুমি এখানেই আছো তবু কেন
এতো অন্ধকার নেমে আসে সকাল সন্ধ্যায়
জ্ঞান মুক্তি চেতনার দিশা জীবে প্রেম সব ই
কি বৃথা যাবে,পাখির ঠোঁটের থেকে
এক মুঠো বাতাস নিয়ে আরেক পৃথিবী থাকে
শব্দ করে ফেটে যায় মূর্খ ভারতবাসীর কান্না
হত্যা লুন্ঠন ছিনতাই ধর্ষণ রাহাজানি দেখে মনে হয়
ক্রমমুক্তি বুঝি বহুদূর,মূক ভারতবাসীর কাছে
ফের বুঝি সশরীরে তোমাকেই চায়
দূরে কোথাও বৃষ্টি হ ওয়ায় তার ঠান্ডা বাতাস বইছে,
তুমি আসছো যুগনায়ক
আজ বিবেক আনন্দে মাতে ..
মাটি
মাটি লিখে লিখে আমি বড় হচ্ছি
মানুষের কথা এখন থাক
আগেতো উদ্ভিদ জন্মাক
আগে ফুল তারপর পাখি
শিশু বড় হলে তারপর না হয় রাখী ...
***********************************************************************
আশির কবি।কুড়ির বেশি কাব্য।ছোটবড় মিলে প্রায় শতাধিক পুরস্কার।দেশ পরিচয় নন্দন চতুরঙ্গ অনুষ্টুপ ছাড়াও অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখে চলেছেন৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন