কবি প্রদীপ ঘোষ-এর তিনটি কবিতা
পোস্টমর্টেম
রক্তমাসের বিনিময়ে ছাইভস্মের ভৈরব। ডাক্তার চিরে
ফেলেছেন সরাসরি আশিরনখ। শুধু খিদে পেলেই যা
একটু হিংস্রতা অমন। তা নইলে হরিণের দুঃখে কাঁদে তো
বাঘের মন। আমিও খাঁচা খুলে উড়িয়ে দিয়েছি অশিষ্ট
স্বরগম। এই যে সুদীর্ঘকাল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রেয়াজ !
ভ্রম। ভোরের দিকে এসেছিল স্বপ্ন ভাঙ্গানো মৃদুলা গান।
ঘুরেফিরে আসবে-ই প্রথম প্রহরের ইমনকল্যাণ।
কলকাতায় যে আকাশ ! কালিম্পং'য়ে ও একই আলো
শুধু জানি না, বাঘ আর হরিণের সম্পর্ক-টা কী দাঁড়ালো !
ইমনকল্যাণ
স্বরের কী সে দ্যোতনায় বলো তো অনিকেত সম্ভাষণ ?
জলবায়ু ! হাওয়া আর জলে, কীভাবে দু'জনায় নিবিড়
কথা হয় ? এক পাখি শিস দিয়ে ডাক দ্যায়, ফিরে
আয়, ...ফিরে আয়। বোধাতীত স্বরগমে অপার, সারস্বত
সাধনায় লগ্ন বয়ে গেলে পড়ে থাকে শুধু অনাদির, শ্বাশ্বত
বিমূঢ় বিস্ময়।
তুমিও তো রাখোনি সংবাদ ! ধ্যানগম্ভীর তুষার, আদুড় হে
মৈনাক ? অধরা ফাগুন জেনেও পলাশের কাছে-ই
রেখেছিলাম ওকালতনামা। এ আর নতুন কথা কী ?
এখনতো সকলের জানা। বন্ধ ঘড়ির কাঁটা ও দ্যায়
দু'দুবার ঠিক ঠিক সময়ের বিজ্ঞাপন। বিধির চোখ বাঁধা,
বিশুদ্ধ সাক্ষ্যের কারণে কত বিচার-ই না প্রহসন।
কুলুঙ্গিতে রাঙিয়ে দিতে গুলাল আর রেওয়া-য় লেখা
উপাখ্যানে রয়েছে বিস্তৃত সত্য বর্ণনা।
গ্রীষ্মের নিদাঘের আগে বসন্ত ক্ষণিকের কোমলস্বর। কুহু
দয়িত কোকিলের দুর্বল ধৈবত। পড়ে নাও, স্টাডি করো
কিংবা কালটিভেট। আনাড়ি জ্ঞানে মকদ্দমাটি কাঁটায়
কাঁটায় মিলিয়ে দিতে একবারটি এসো। অপরাধী তো
ছিলাম না বলো ? উপন্যাসটির সমাপ্তিতে-ই না হয় !
আসবে তো অর্ণা?
বুদবুদে বুঁদ
ক্যাপাচিনো তে -
ওপরে যে বুদবুদের আস্তরণ !
যাতে গন্ধ কিছু-টা থাকে বটে, খাদ্য বা
দ্রব্যগুনের বড়ো অভাব
জীবনের বিফলতায় বুঁদ হয়ে থাকা
আমার স্বভাব।
তবু কথা তো হয়, কথা ফুরায়, স্মৃতির পাতা -
প্রজাপতি বিস্কুটে লেগে থাকা চিনির দানা। কামড়ের
আগে ঝরে যায়। যায় যায়... দিন চলে যায়
শীতের যত কিছু অহল্যা সংবেদ, নওলকিশোর সম
পলাশবরণ বসন্তের জামা গায়।
আরে ভালোবাসার কিছু তো অধিকার থাকে বলো ?
যেখানে ধ্বংস সেখানেই তো সুন্দরের নির্মাণ
আমারও ছিল তো ! যেমন মজা নদীরও
থাকে জলের অধিকার...
অন্তর্দাহের প্রজ্জ্বলিত শিখা অনির্বাণ।
কৃষ্ণচূড়ার উচ্ছলতায় অনিবার্য যে দলিলে
আবির গুলালে হালাল, বাসন্তী রঙা মন ! কুঞ্জ
সাজিয়ে চন্দ্রাহত রজনীগন্ধার বাসর -
গোনে সে কোন আত্মহারা ?
আসলে অবিদিত ;
প্রেমে বিপ্লবে যুদ্ধে, জেলেনস্কি-পুতিন
বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা।
আমরা যারা তুলিতে জলরঙে নিয়ত ছবি আঁকি জীবনের
জল গড়িয়ে উঠোন বানভাসি, দোষ কী বলো ক্যানভাসের?
লেখক পরিচিতি: দেশ পত্রিকা সহ অন্যান্য ছোট বড়
মাঝারি, বিবিধ লিটল ম্যাগাজিন, ই-ম্যাগে স্বরচিত
কবিতা প্রকাশিত। ফেবুতে যথারীতি নিয়মিত।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক (বঙ্গবাসী
কলেজ)। পরবর্তীতে আইন নিয়ে পড়াশুনা (সুরেন্দ্রনাথ
ল'কলেজ) এবং জর্জ টেলিগ্রাফ ইনস্টিটিউট থেকে
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা (সিওপি)। নিজ পেশা।
কলকাতা নিবাসী।
**************************************************************
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন